সুনীল দাস। —নিজস্ব চিত্র।
দু’হাতের প্রায় সব আঙুলেই আংটি। গলায় মোটা মোটা খানকতক চেন। কব্জিতে বালার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সবই সোনার। ঢাকের তালে কোমর দোলাচ্ছেন তিনি। দিন কয়েক আগে হুগলির সুগন্ধায় তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে সোনায় মোড়া ‘লঙ্কারাজা’র এই দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে।
‘লঙ্কারাজা’র পোশাকি নাম সুনীল দাস। বাড়ি সুগন্ধার কামদেবপুরে। তাঁর শরীর জুড়ে সোনার অলঙ্কার দেখে অনেকে সিনেমার কথা বলছেন। কেউ স্মরণ করাচ্ছেন প্রয়াত সুরসম্রাট বাপ্পি লাহিড়ীর গয়না-প্রেমের কথা। নিজের গয়না পরা ছবি ভাইরাল হওয়ায় সুনীল কিছুটা অবাক। তাঁর কথায়, “এ তো আমি নতুন পরছি না!”
অনেকে বলেন, সোনার শখ থেকেই তাঁর নাম ‘লঙ্কারাজা’। সুনীল অবশ্য জানান, একদা পাড়ার যাত্রায় রাবণের চরিত্রে অভিনয়ের সুবাদে লোকমুখে ‘লঙ্কারাজা’ নামটি ছড়ায়। বর্তমানে ‘বুলেট-কাকা’ নামে তিনি বেশি পরিচিত। তৃণমূলের কর্মসূচিতে থাকলেও নিজেকে ওই দলের কর্মী বলতে নারাজ সুনীল। তা হলে তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারে ছিলেন কেন?
এই প্রশ্নে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে সুনীলের জবাব, “আমি কোনও দল করি না। চুঁচুড়া ও সুগন্ধা অঞ্চলের বহু মানুষ আমাকে চেনেন। সাধারণ মানুষ ও সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই আমার ভালবাসার সম্পর্ক। সে দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে তৃণমূলের মিছিলে আটকে যাই। পরিচিত কয়েক জন ঢাক বাজাচ্ছিলেন। ছোটরা বুলেট-কাকা বলে চিৎকার করছিল। ওদের আনন্দ দিতেই একটু কোমর দুলিয়েছিলাম। অন্য দল হলেও একই কাজ করতাম।”
ষাট ছুঁইছুঁই সুনীল জানান, তাঁর বাবার সামান্য চাষের জমি ছিল। তা থেকে সংসার চলত না। তাই বাবাকে খেতমজুরি করতে হত। অভাবের সংসারে সুনীলের পড়াশোনা হয়নি। ছোট থেকেই কখনও মুদির দোকানে, কখনও চায়ের দোকানে বা কারখানায় দিনমজুরি করেছেন। তবে, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল। তা থেকেই এক সময় জায়গা-জমির কারবার শুরু করেন। কিছু টাকা হাতে এলে নামেন পুরনো মোটরবাইক কেনাবেচার ব্যবসায়। তাঁর কথায়, “ইচ্ছে ছিল টাকা এলে কিছু একটা করে সমাজকে দেখাতে হবে। সেই থেকেই ধীরে ধীরে সোনা পরা শুরু।”
দুই ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বললেন, “আমার কোনও রকম নেশা নেই। বেশি কোনও চাহিদাও নেই। তাই হয়তো কিছু টাকা রাখতে পেরেছি। তা থেকেই সোনার জিনিস গড়িয়ে নিই।”
সুনীল আরও জানান, বুলেট মোটরবাইক কেনার শখও পূরণ হয়েছে তাঁর। সে জন্যই ছোটদের কাছে নাম ‘বুলেট কাকা’। তিনি বলেন, “মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। পরিচিত-অপরিচিত কেউ বিপদে পড়লেই বাইক ছোটাই। ব্যস, এটুকুই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy