নারী দিবসের জন্য একটি মাত্র দিনই নির্দিষ্ট হবে কেন, তা মনে করিয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পক্ষান্তরে, আর জি কর-কাণ্ডকে সামনে রেখে রাজ্যের নারী নিরাপত্তা হাল নিয়ে শনিবার ফের সরব হয়েছে বিরোধীরা। যদিও রাজ্যের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এবং ‘ঘরে ঘরে মমতা’, এই বার্তা দিয়ে বিরোধীদের উদ্দেশে পাল্টা সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কথা-সহ এ দিন তাঁর লেখা একটি কবিতা সমাজমাধ্যমে ‘পোস্ট’ করেছেন মমতা। তিনি লিখেছেন, “শুধুমাত্র একটি দিন নারীদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত নয়। প্রতিটি দিনই প্রত্যেকটা নারীর।” লিঙ্গসাম্যের সূত্রে মানুষ হিসেবে নারীর অধিকারে জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সমাজমাধ্যমে নারীদের কুর্নিশ জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর উদ্যোগে ডায়মন্ড হারবারে যে ‘সেবাশ্রয়’ স্বাস্থ্য শিবির চলছে, সেখানে এ দিন মহিলা চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের সম্মান জানানো হয়েছে।
নারী দিবসের ৫০ বছর পূর্তির সঙ্গে দলনেত্রী মমতাকেও জুড়ে দিয়েছে তৃণমূল। ‘নারী দিবসের ৫০ বছরে, দিদি বাংলার ঘরে ঘরে’, এই স্লোগানকে সামনে রেখে রবীন্দ্র সদন থেকে মিছিল করেছে মহিলা তৃণমূল। মিছিলে ছিলেন সংগঠনের সভাপতি চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মন্ত্রী শশী পাঁজা-সহ তৃণমূলের একাধিক মহিলা মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, মেয়র। সমাজমাধ্যমেও দলের মহিলা জনপ্রতিনিধিরা ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারে’র মতো রাজ্যের নানা প্রকল্পের কথা তুলে ধরেছেন।
যদিও রাজ্যের নারী নিরাপত্তার হাল নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। জাতীয় গ্রন্থাগারে বিজেপির মহিলা মোর্চার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পাল বলেছেন, “রাজ্যে অপরাধীদের আড়াল করা হয়। বিজেপি ক্ষমতায় এলে সবার আগে নারীদের নিরাপত্তা দেব। সিসিটিভি-তে রাজ্য মুড়ে ফেলা হবে।” অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী, মোর্চার রাজ্য সভাপতি ফাল্গুনী পাত্র। অন্য একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ফাল্গুনীর নিদান, “পুলিশ দলদাস। মহিলাদের সুরক্ষিত থাকতে হলে আত্মরক্ষার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে।”
আর জি কর-কাণ্ডে বিচারের দাবিতে সরব হয়েছে ‘নারী অধিকার সমন্বয়’ মঞ্চ। তাদের ডাকে শিয়ালদহ থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ, সংগঠনের রাজ্য সভাপতি জাহানারা খান, ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব। জাহানারার বক্তব্য, “রাজ্য-সহ গোটা দেশেই মহিলারা বিচার পাচ্ছেন না মহিলারা। আর জি করের ঘটনাও আমরা দেখেছি।” বিজেপি এবং তৃণমূলকে আক্রমণ করে মীনাক্ষীও বলেছেন, “রাজ্য এবং দেশে মহিলাদের ফের পর্দার আড়ালে, ঘরের ভিতরে ঢোকানোর জন্য আদর্শগত লড়াই এবং আক্রমণ চালানো হচ্ছে।”
আর জি করের নিহত ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে বাবা-মা’কে একটি শ্রদ্ধা-স্মারক তুলে দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল জানিয়েছে, বাবা-মা বলেছেন, এখনও বিচার না পাওয়ায় তাঁরা হতাশ। তাই নানা জায়গায় আবেদন করতে হচ্ছে। তাঁদের মেয়ে ‘সংগঠিত অপরাধ চক্রে’র শিকার। শুভঙ্করের বক্তব্য, “আমরা পরোপকারী, উদীয়মান এক জন চিকিৎসককে হারিয়েছি। নারী দিবসে তাই ওই ডাক্তারি ছাত্রীকেই প্রতিবাদী নারী হিসেবে সম্মান জানানো উচিত। বাবা-মায়ের লড়াইয়েও আমরা পাশে আছি।”
যদিও রাজ্যকে নিরাপদ বলেই পাল্টা দাবি করেছে তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী শশী বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিভিন্ন প্রকল্প হয়েছে, যার ফলে নারীর আর্থিক ক্ষমতায়ন ঘটেছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক স্তরেও নারীর ক্ষমতায়ন ঘটিয়েছেন তিনি। এনসিআরবি-র তথ্য অনুযায়ী, এই নিয়ে তৃতীয় বার মহিলাদের জন্য সব থেকে নিরাপদ শহর হয়েছে কলকাতা।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)