বাঁ দিকে, স্বপ্নময় চক্রবর্তী এবং ডান দিকে, তারাসিন বাস্কে (টুরিয়াচাঁদ বাস্কে)। —ফাইল চিত্র।
তিন দশক আগে আনন্দবাজার পুজোসংখ্যার জন্য লেখা তাঁর প্রথম উপন্যাসই যেন নতুন করে শুরু করেছিলেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী। তাঁর প্রথম উপন্যাসের নায়ক বদলানো দিনকালে ‘বাতিল’ সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত অনঙ্গমোহন স্বপ্নময়ের নতুন উপন্যাস ‘জলের উপর পানি’তে ফিরে এলেন। উদ্বাস্তু কলোনির সমাজ-জীবনের অন্ধিসন্ধি নিয়ে বৃহৎ কালপর্বের ক্যানভাসে সেই উপন্যাসই এ বারের সাহিত্য অকাদেমি শিরোপা জয়ী। বাংলা ভাষায় স্বপ্নময়ের স্বীকৃতির মতো সাঁওতালিতে ‘জবা বাহা’ গল্প সঙ্কলনের জন্য এ রাজ্যের সাঁওতালি ভাষার সাহিত্যিক তারাসিন বাস্কে সাহিত্য অকাদেমি পেয়েছেন।
অতিমারির দিনে তাঁর কলোনি-আখ্যানে হাত দেন স্বপ্নময়। তখন দমদমের শূরের মাঠে প্রফুল্লনগর কলোনিতে ঘোরাঘুরি করেছেন। আর ছিল কৈশোরে সপরিবার বিরাটির মহারাজনগর কলোনিতে থাকার স্মৃতি। বিহার থেকে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে কলকাতার রাজাবাজারে বসত করা অবাঙালি মুসলিম জীবনের টানাপড়েনও স্বপ্নময়ের আখ্যানে মিশেছে। অনেকের মতেই, কলোনি-জীবনের একেবারে ভিতরের কথা বাংলা সাহিত্যে বেশি উঠে আসেনি। স্বপ্নময় বলছেন, ‘‘চেয়েছিলাম দেশভাগের যন্ত্রণার পরের জীবনটার কথা বলতে।’’ এর আগে সমকামী-রূপান্তরকামীদের নিয়ে লেখা ‘হলদে গোলাপ’ উপন্যাসের জন্য আনন্দ পুরস্কার এবং ‘আবন্তীনগর’-এর জন্য বঙ্কিম পুরস্কার পেয়েছিলেন স্বপ্নময়। বলছেন, ‘‘এই পুরস্কারটিও আমায় অপ্রত্যাশিত আনন্দ দিচ্ছে।’’
‘জলের উপর পানি’ শব্দবন্ধটি গৌতম ঘোষের ‘মনের মানুষ’ ছবির জন্য লেখা শাহযাদ ফিরদৌসের একটি গান থেকে নিয়েছেন স্বপ্নময়। জল আর পানির মতোই তাঁর উপন্যাস জুড়ে বাংলায় হিন্দু-মুসলিমের যৌথ জীবনের কাহিনি। স্বপ্নময়ের কথায়, ‘‘আমার চরিত্রেরা ধর্মীয় আচারসর্বস্বতাকে ছুড়ে ফেলে পাশাপাশি থাকাতেই স্থিত হয়েছে।’’
সাঁওতালি ভাষার সাহিত্যিক তারাসিন বাস্কে সাহিত্য জগতে টুরিয়াচাঁদ বাস্কে নামে পরিচিত। তিনি হলদিয়ার বাবুপুর এগ্রিকালচার হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক। আদতে ঝাড়গ্রামের লালগড়ের পানপুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। টুরিয়াচাঁদ জানান, এই সঙ্কলনের ২০টি গল্পই মানুষের জীবনের টানাপড়েন নিয়ে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের মধ্যে যে সমাজব্যবস্থা, প্রেম-প্রীতি বিরাজমান তা নিয়েই গল্প। টুরিয়াচাঁদ বলেন, ‘‘স্থানীয় আদিবাসী সমাজ বা জঙ্গলমহলের বাইরের মানুষও গল্পগুলি পড়লে যোগসূত্র খুঁজে পাবেন।’’ এ বছরে ‘শিক্ষারত্ন’ পেয়েছেন টুরিয়াচাঁদ। তিনি ২০১৫ সালে সাঁওতালি অ্যাকাডেমি প্রদত্ত সারদাপ্রসাদ কিস্কু পুরস্কার, ২০১৯ সালে সাধুরাম চাঁদ স্মৃতি পুরস্কার পান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy