E-Paper

জনমুখী হতে চলেছে না কি আর্থিক স্বাস্থ্যের উপর জোর, এ বারের রাজ্য বাজেট নিয়ে জোর চর্চা

বাংলায় ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটাই শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। বিধানসভায় বাজেট পেশ হওয়ার আগেই দানা বাঁধতে শুরু করেছে আগাম রাজনৈতিক বিতর্কও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:১৭
চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।

একের পর এক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প ঘোষণা করে নির্বাচনী ময়দানে সাম্প্রতিক কালে বাজিমাত করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। অন্য দিকে আবার প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে আম জনতার মন জয়ে আরও কিছু ঘোষণার হাতছানি এবং সে সবের খরচ টানার জন্য রাজ্যের নিজস্ব আয় বৃদ্ধির সংস্থানের প্রশ্ন সঙ্গে নিয়েই পেশ হতে চলেছে এ বারের রাজ্য বাজেট। বাংলায় ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটাই শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। বিধানসভায় বাজেট পেশ হওয়ার আগেই দানা বাঁধতে শুরু করেছে আগাম রাজনৈতিক বিতর্কও।

বিধানসভায় আজ, বুধবার রাজ্য বাজেট পেশ করার কথা অর্থ দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের। কেন্দ্রীয় বাজেটের পরে আগামী অর্থ-বর্ষের পরিকল্পনা নিয়ে কিছুটা চাপেই রয়েছে রাজ্যের শাসক শিবির। আয়করে ছাড়ের সুবিধা দিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে পদক্ষেপ করেছে, তার উল্টো দিকে রাজ্য কী করে, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারাও। আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের আগে দলের জন্য ‘কী’ থাকে, সে দিকেই নজর রেখেছেন তাঁরা। বিরোধীরাও মনে করছে আগামী ভোটের দিকে নজর রেখে রাজ্য বাজেটে কিছু ‘চমক’ থাকতে পারে।

তবে সরকারি শিবির এবং শাসক দলের একাংশের ধারণা, ভোটারের মন পেতে সরাসরি সুবিধার খুব বড় ঘোষণা এ বারের বাজেটে না-ও থাকতে পারে। বরং, ভোটের প্রচারে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে আগামী সরকারের আর্থিক কর্মসূচি সামনে রেখেই এগোতে পারেন মমতা। দলগত ভাবে এই বাজেটে প্রত্যাশা রয়েছে তৃণমূলেরও। আগামী বছরের বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট প্রস্তাবে শাসক দল কতটা শক্তি পায়, তা-ই তৃণমূলের অন্যতম আলোচ্য। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সেই প্রত্যাশার সূত্রেই বলেছেন, ‘‘পরিকাঠামো উন্নয়ন, সর্ব স্তরের মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক পরিবেশ এবং সামাজিক সুরক্ষার যে নীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চলে, বাজেটে তার প্রতিফলন নিশ্চয়ই থাকবে।’’ সূত্রের খবর, বাজেটের আগে রাজ্য সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অমিত মিত্রের সঙ্গে অর্থ দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে।

বাজেট ঘিরে নতুন কর্মসংস্থান, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সুবিধা এবং সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা নিয়ে আলোচনা রয়েইছে। সেই সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ জরুরি কয়েকটি ক্ষেত্রে পরিকাঠামো এবং শিল্পায়নে নবান্নের ভাবনার কী প্রতিফলন রাজ্য বাজেটে থাকবে, সে দিকে নজর রয়েছে সব পক্ষেরই। এই ক্ষেত্রগুলিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পরিকল্পনার দিকে তাকিয়ে শাসক শিবিরের সংশ্লিষ্টেরাও। রাজনৈতিক তরজার মঞ্চে লড়াই চললেও বিষয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে যে আর্থিক দায়িত্ব রাজ্যকে নিতে হবে, তার সংস্থানের স্পষ্ট রাস্তাও সরকারের তরফে তাঁদের দেখাতে হবে।

রাজ্য বাজেটের প্রাক্কালে মঙ্গলবার বিজেপির পুরনো রাজ্য দফতরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘বাংলার মানুষের চাহিদা মতো কিছু থাকে কি না, দেখা যাক। শুধু ভাতা বাড়ালে হবে না। পাঁচশো টাকা ভাতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যেটা এখন দেবেন না, ভোটের আগে রূপায়িত হবে। থাকতে পারে ৩% ডিএ , আমি বলার পরে সেটা ৪% দিতে পারে! আমরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ চাইছি। চাকরির কথা কিছু থাকবে না। তবে অনেক দিন পরে শিল্প-শিল্প থাকবে।” তারই পাশাপাশি বিরোধী দলনেতার নেতার অভিযোগ, ঘটা করে শিল্প সম্মেলন করলেও এই সরকার গত ১৪ বছরে শিল্পোদ্যোগীদের ২০ হাজার কোটি টাকা শিল্পে উৎসাহ বোনাস (ইনসেনটিভ) দেয় না।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘ভোটের দিকে নজর রেখে বাজেটে কিছু চমক হয়তো থাকবে। কিন্তু রাজ্যের আয় বলতে তো মদ বিক্রি আর বিদ্যুতের মাসুল। ধারালো সরকার! শুধু ধার বাড়ছে। অনুৎপাদক খরচ চলছে। আমি রাজা, তোমাদের কিছু দিলাম, তোমরা প্রজা— এই ভাবনায় চলে। কৃষক, শ্রমিক বা যুব সংগঠনগুলির সঙ্গে রাজ্য সরকার কোনও মত বিনিময় করে না বাজেটের আগে।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচেরও বক্তব্য, ‘‘প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের ভার রাজ্যের। মেধা ও পুঁজির পলায়ন হচ্ছে। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কোনও পরিকল্পনা নেই। আবগারি থেকে শুধু আয় আছে। এক দিকে কর্মসংস্থানের কোনও দিশা নেই অন্য দিকে দুর্নীতি, এর মধ্যে দাঁড়িয়ে বাজেটে আবার কী বলে, দেখা যাক!’’ কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জনবিরোধী’ বাজেটের প্রতিবাদে আজ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিবাদী কর্মসূচি নিয়েছে বাম দলগুলি। রাজ্য বাজেট দেখে তার বিষয়ও ওই কর্মসূচিতে জুড়ে নেওয়া হতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Budget 2025 Bidhansabha Chandrima Bhattacharya West Bengal government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy