দুর্ঘটনার জেরে পাহাড়ি নদীগুলি নিয়ে টনক নড়েছে জেলা প্রশাসনের। ফাইল ছবি
মেঘভাঙা বৃষ্টি, নাকি পাহাড়ি এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি? ঠিক কী কারণে হুড়মুড়িয়ে মাল নদীতে জলস্রোত আচমকা নেমে এসে এমন একটি বিপর্যয় ঘটাল, ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও সম্পূর্ণ অন্ধকারে প্রশাসন।
পাহাড়ি মাল নদীতে হড়পা বানে সেই রাতে ভেসে গিয়েছিল প্রতিমা বিসর্জন দেখতে আসা আটটি প্রাণ। নদীর স্রোত থেকে উদ্ধার করা হয় বহু মানুষকে। হড়পা বানই বিপর্যয়ের কারণ হলেও যে সমস্ত পাহাড় বেয়ে মাল নদী নেমে এসেছে তার কোথাও মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছিল বা স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল কি না, তা প্রশাসনের কাছে স্পষ্ট নয়। শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছে, সেই কারণ ‘জানার চেষ্টা চলছে’। তবে এ দিন রাজ্য প্রশাসনের তরফে মালবাজারের ঘটনা নিয়ে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সে দিন উত্তরবঙ্গের কোথাও অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়নি। রাজ্যের বাইরে মাল নদীর ‘ক্যাচমেন্ট’ এলাকায় বৃষ্টি বা মেঘভাঙা বৃষ্টিতে জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল কি না, তার খোঁজ শুরু হয়েছে।
তবে দুর্ঘটনার জেরে পাহাড়ি নদীগুলি নিয়ে টনক নড়েছে জেলা প্রশাসনের। মাল নদীর গতির এক দিকে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে গতিধারা ঘুরিয়ে দেওয়াই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ কি না, জানতে নদী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গড়ার কথাও এ দিন জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। শুধু মাল নদী নয়, জেলার অন্য পাহাড়ি নদীগুলিও কতটা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে তা-ও খতিয়ে দেখবে এই কমিটি। এ দিকে, দুর্ঘটনায় এক মৃতের পরিবারের তরফে মাল পুরসভা এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এ দিন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ হবে। এ দিন বিকেলে অভিযোগটি দায়ের করেন মালবাজারের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিলীপ পণ্ডিত। তাঁর স্ত্রী ও ছেলে সেই রাতে মারা যান। বৃহস্পতিবার রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তথা মালবাজারের বিধায়ক বুলুচিক বরাইক, পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন সাহাদের সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি।
জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বলেন, “যতদূর জেনেছি নদীর গতিপথ পাল্টাতে কোনও স্থায়ী বা পোক্ত বাঁধ তৈরি হয়নি। একটি খাল কেটে জলের ধারা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাতে কতটা প্রভাব পড়েছে এবং কী কারণে নদীতে এমন বিপর্যয়, তা দেখতে নদী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গড়া হচ্ছে। সেই কমিটি তদন্ত করে দেখবে।” পাশাপাশি, প্রশাসনের তরফে ভুটান সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে সে দেশের বৃষ্টির ‘রিয়্যাল টাইম’ অর্থাৎ যখন বৃষ্টি চলছে সেই সময়েরই তথ্য পাওয়া যায়। কারণ, ভুটান পাহাড়ের বৃষ্টির জলই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন পাহাড়ি নদী দিয়ে নেমে আসে। জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভুটান লাগোয়া এলাকায় বৃষ্টি মাপার যন্ত্র বসাতে। তা হলে শুধু ভুটানের তথ্যের অপেক্ষা করতে হবে না। জেলাশাসক বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগেই ভুটান প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তারা সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছে।’’
সাধারণত নদীতে কোনও বাধা তৈরি করতে হলে বা জলের ধারা ঘোরাতে সেচ দফতরের অনুমতি প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সেচ দফতর কিছুই জানত না বলে সূত্রের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy