এলাকার একটি খাবারের দোকানে গিয়ে খাবার চেয়েছিলেন স্থানীয় এক যুবক। ভাবলেশহীন ভাবে জানিয়েছিলেন, তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তাই সারা রাত তাঁর কিছু খাওয়া হয়নি। যুবকের এ হেন আচরণে সন্দেহ হওয়ায় ওই দোকানি সে কথা জানান আবাসনের নিরাপত্তাকর্মীদের। এক জন নিরাপত্তাকর্মী এর পরে ওই আবাসনের সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেই যুবকের মায়ের দেহ। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার চাঞ্চল্য ছড়ায় রাজারহাটের বৈদিক ভিলেজ চত্বরে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম দেবযানী মজুমদার (৬০)। মাকে ছুরি মেরে খুনের অভিযোগে ওই প্রৌঢ়ার ছেলে সৌমিক মজুমদারকে গ্রেফতার করেছে রাজারহাট থানার পুলিশ। তবে তদন্তকারীরা জানান, অভিযুক্ত ওই যুবক মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বলেও প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে ওই আবাসন থেকে দেবযানীরদেহ উদ্ধার করা হয়। ছেলের সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি। তদন্তকারীরা জানান, টাকাপয়সা নিয়ে মা-ছেলের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা হত। কোভিডে দেবযানীর স্বামী সৌমেন্দ্র মজুমদারের মৃত্যুর পরে প্রবল মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন সৌমিক। সে সময়ে মানসিক অবসাদ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সৌমিক চাকরি হারান। তার পর থেকে সংসারের হাল ধরেছিলেন দেবযানী।
এ দিন ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরে ওই তল্লাটে হইচই পড়ে যায়। ওই আবাসনের নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, ঘরে ঢুকে তাঁরা দেখেন যে, গোটা ঘর ভেসে যাচ্ছে রক্তে। দেওয়াল, মেঝে, আসবাবপত্র— সর্বত্র টাটকা রক্ত লেগে ছিল। তারই মধ্যে পড়ে ছিল দেবযানীর দেহ।
বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ জানিয়েছে, বছর তেত্রিশের সৌমিক ওই অবস্থাতেই রাতভর মায়ের মৃতদেহের সঙ্গে কাটিয়েছেন। সকালে নিজেই বিষয়টি সবাইকে জানান। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, চরম আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে পড়েছিল পরিবারটি। বিদ্যুতের বিল, ফ্ল্যাটের ভাড়াও বকেয়া থাকছিল। সৌমিক এলাকার লোকজনের কাছেও টাকাপয়সা, খাবার চাইতেন। তাই ইদানীং তাঁকে দেখলেই লোকজন এড়িয়ে যেতেন।
পুলিশের অনুমান, সৌমিক প্রায়ই মায়ের থেকে টাকাপয়সা চাইতেন ও তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে গোলমাল লেগে থাকত। বৃহস্পতিবার রাতে তেমনই কোনও গোলমালের কারণে দেবযানী খুন হন বলে পুলিশ মনে করছে। প্রাথমিক ভাবে তাদের অনুমান, রান্নাঘর থেকে ধারালো ছুরি নিয়ে সৌমিক তাঁর মায়ের গলায় গেঁথে দেন। প্রৌঢ়া নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। মেঝেতে পড়ে যাওয়ায় তাঁর মাথার পিছনের অংশে সাংঘাতিক আঘাত লাগে। মৃতদেহের পাশ থেকে রক্ত মাখা একটি ছুরি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)