রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প সাধারণ মানুষের নাগালে পৌঁছে দিতে সম্প্রতি আবার শুরু হয়েছে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি। তার শিবির করার জন্য নেওয়া হয়েছে রাজ্যের বেশ কিছু স্কুলও। শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, স্কুলে শিবির হওয়ার ফলে কোথাও কয়েক পিরিয়ডের পরে ছুটি দিয়ে দিতে হচ্ছে। কোথাও আবার ছুটি দিতে হচ্ছে পুরো স্কুলই। তাঁদের আর্জি, ছুটির দিনে অথবা শনিবার ছুটির পরে কিংবা রবিবার ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবির করা হোক। তা হলে তো আলাদা করে স্কুল ছুটি দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। পাশাপাশি, অনেক শিক্ষক এই প্রশ্নও তুলছেন, দুয়ারে সরকার-এর জন্য কেন স্কুলই নির্বাচন করতে হচ্ছে? বিভিন্ন জেলায় যে সব সরকারি ভবন বা কমিউনিটি হল আছে, সেখানে কি এই কর্মসূচির শিবির করা যায় না?
নদিয়ার হরিণঘাটার ফতেপুর হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কল্যাণ ঘোষ জানান, তাঁদের স্কুলে গত ২৪ জানুয়ারি দুয়ারে সরকার-এর শিবির হয়েছে। সে জন্য ছিল বিশেষ আয়োজন। স্কুল সাজাতে লাগানো হয়েছিল বেলুন, বাজানো হয়েছে মাইক। তিনি বলেন, “এই অবস্থায় কী ভাবে পঠনপাঠন চালানো সম্ভব? বাধ্য হয়ে সে দিন পুরো ছুটি দিতে হল।” কল্যাণীর পান্নালাল ইনস্টিটিউশনের সহকারী প্রধান শিক্ষক তথা কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “আমাদের স্কুলের বারান্দায় দুয়ারে সরকার-এর কাজ হচ্ছে। বারান্দায় কাজ চললে পড়ুয়ারা কী ভাবে ক্লাসে ঢুকবে-বেরোবে? কোনও মতে চতুর্থ পিরিয়ড পর্যন্ত ক্লাস নেওয়া গিয়েছে। তার পরে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। একাদশ ও দ্বাদশকে পুরো ছুটি দিতে হয়েছিল। আমরা অনুরোধ করেছিলাম মাইক না বাজানোর জন্য। সেই অনুরোধ অবশ্য রেখেছেন উদ্যোক্তারা।” সৌদীপ্তের প্রশ্ন, “এই কাজ কেন রবিবার বা ছুটির দিনে হবে না? সবে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। সামনেই একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষা। এক দিনের পঠনপাঠন নষ্ট মানে পড়ুয়াদের অনেকটাই ক্ষতি।”
শিক্ষকদের একাংশের মতে, কিছু কিছু স্কুল ভবন হয়তো বড়। অতিরিক্ত ক্লাসঘর আছে। স্কুলের কোন এক প্রান্তে দুয়ারে সরকার-এর কাজ হচ্ছে। কিন্তু শিবিরের দিন যে ভাবে মাইক বাজানো হয়, স্থানীয় বাসিন্দারা স্কুলে ভিড় করেন, তাতে আদৌ পঠনপাঠনের পরিবেশ থাকে কি?
যদিও শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “দুয়ারে সরকার-এর জন্য এলাকার কমিউনিটি হলই বেশি নেওয়া হয়। প্রয়োজনে স্কুল নেওয়া হয়। তা-ও স্কুলের তিন-চারটি ঘর নিয়ে এই প্রকল্পের কাজ হয়। পুরো স্কুল কখনওই নেওয়া হয় না। ফলে পঠনপাঠন ব্যাহত হওয়ার কথা নয়।” যদিও প্রধান শিক্ষকদের একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “যে সব স্কুলের পরিকাঠামো ভাল, সেখানে হয়তো দুয়ারে সরকার-এর কাজ চলাকালীন ক্লাসও করানো যায়। তবে জেলায় এমন বহু স্কুল নেওয়া হয়েছে, যেখানে ক্লাসঘরের সংখ্যা কম। সেখানে পুরো স্কুল ছুটি দিতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া, যে ভাবে মাইক বাজে এবং প্রচুর লোকের সমাগম হয়, সেখানে পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেক স্কুলই পুরো ছুটি দিতে হয়।” শিক্ষকদের অভিযোগ, দুয়ারে সরকার-এর শিবির হয়ে যাওয়ার পরে স্কুল চত্বর এতটাই অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে যে, সেটা পরিষ্কার করতে গিয়ে অনেক সময় ব্যয় হয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)