যাদবপুর-কাণ্ডে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের ‘হুমকি’ অব্যাহত। দলের একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর পরে এ বার যাদবপুরের সাংসদ সায়নী ঘোষের গলাতেও শোনা গেল হুঁশিয়ারির স্বর। এই সব মন্তব্যকে ‘উস্কানিমূলক’ বলে পাল্টা সরব হয়েছে সিপিএম। যাদবপুরের ঘটনায় দলের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যকে পুলিশের ডেকে পাঠানো নিয়েও তৃণমূল ও পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সিপিএম।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘অত্যন্ত সহনশীল’ ও ‘ছাত্র-বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে সায়নী শনিবার বলেছেন, “উনি (মমতা) কড়া হাতে দমন করার কথা ভাবলে পুলিশ অনেক জায়গাতেই ঢুকে নানা কিছু করতে পারত! কিন্তু উনি ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনকে সমর্থন করেন, কারণ ওঁর আন্দোলন-লগ্নে জন্ম। এই গুন্ডামি চললে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম মাটিতে মিশতে সময় লাগবে না।” এর আগে প্রশাসনিক অথবা রাজনৈতিক ব্যবস্থা, ‘যাদবপুর দখলে’র মতো নানা হুঁশিয়ারি শোনা গিয়েছিল সাংসদ সৌগত রায়, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের মুখেও। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এ দিন যাদবপুরের ঘটনায় জখম ছাত্র ইন্দ্রানুজ রায়ের বাবাকে নিশানা করে ‘ভিক্টিম কার্ড’ খেলার অভিযোগ করেছেন। তাঁর উদ্দেশে কুণাল বলেছেন, “ওয়েবকুপার সভা থেকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বেরোনোর সময়ে গাড়িতে লাফালাফি করল। এর ব্যাখ্যা দিতে পারলেন না। আপনার স্ত্রী বলছেন, ব্রাত্য গাড়িতে ইচ্ছাকৃত ভাবে মারেননি। আর আপনি মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে বাণী ছড়াবেন? দ্বিচারিতা! ছেলের তৈরি ছবি ভাঙিয়ে প্রচারে থাকবেন না।”
তৃণমূল নেতাদের এমন সব মন্তব্যে উস্কানি ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর পাল্টা বক্তব্য, “তৃণমূলের নেতারা যাদবপুর নিয়ে উস্কানিমূলক কথা বলছেন। তৃণমূলের যে নেতারা বাড়াবাড়ি করছেন, তাঁরা ডজন-ডজন পুলিশ নিয়ে ঘুরে বেড়ান। পুলিশ ছাড়া রাস্তায় বেরোন, মানুষ বুঝে নেবে!”
এ দিকে, সৃজনকে যাদবপুর থানায় ডেকে পাঠানো নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে এসএফআই। সংগঠনের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির ডাকে শিক্ষামন্ত্রীকে গ্রেফতারের দাবিতে বিকেলে দমদম স্টেশন থেকে শুরু হয়ে নাগেরবাজার মোড় পর্যন্ত মিছিল এবং তার পরে সেখানেই প্রতীকী অবরোধ করেছিলেন এসএফআইয়ের নেতা-কর্মীরা। সৃজন সন্ধ্যায় থানার ঢোকার মুখে অভিযোগ করেছেন, “শিক্ষামন্ত্রী, তাঁর সহযোগী ও বহিরাগত টিএমসিপি নেতারা, যাঁরা তথ্য বিকৃতি করলেন, তাঁদের এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। ফলে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নাতীত নয়।” একই সুরে সুজনেরও প্রশ্ন, “যাঁর গাড়ির তলায় ছাত্র চাপা পড়ল, সেই শিক্ষামন্ত্রীকে ও যিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তাঁকে কেন ডাকা হবে না?” এসএফআইয়ের আরও বক্তব্য, যাদবপুর-কাণ্ডে সৃজন এবং তৃণমূলের আইটি শাখার প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্য, দু’জনেই ভিডিয়ো দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও কেন দেবাংশুকে ডাকেনি পুলিশ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)