বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত বন বিভাগের বাঁকাদহ রেঞ্জের আমডহারা বিটের আস্থাশোল গ্রামের জঙ্গলে হাতির দল। বৃহস্পতিবার ভোরে। ছবি: শুভ্র মিত্র ।
আশঙ্কা সত্যি করে পুজোর মুখে বড় হাতির দল ঢুকল বাঁকুড়ায়। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা নাগাদ প্রায় চল্লিশটি হাতির দলটি জেলায় প্রবেশ করে। দলে দশটি বাচ্চা হাতিও রয়েছে। হাতিদের আরও একটি দল বাঁকুড়ার দিকে আসছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয়) এস কুলান ডাইভাল বলেন, “পুজোর সময়ে হাতির দলটি বাঁকুড়ায় আসায় আমরা বাড়তি সতর্কতা জারি করেছি। বন দফতরের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের সাহায্য আমরা চেয়েছি।”
স্থানীয় ও বন দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের রূপনারায়ণ বন বিভাগের গড়বেতা রেঞ্জের ধাদিকা বিট হয়ে ভাটমারা গ্রামের কাছে জাতীয় সড়ক পার করে দলটি। বুধবার রাত ৩টে নাগাদ বাঁকুড়ার দিকে এগোতে থাকে তারা। এক সময়ে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের পাঞ্চেত বনবিভাগের বাঁকাদহ রেঞ্জের আমডহারা বিটের আস্থাশোল গ্রাম হয়ে দলটি বাড়িশোল ও আস্থাশোল গ্রামের মাঝের জঙ্গলে পৌঁছয়। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত হাতির দল সেখানেই ছিল।
এ দিন সন্ধ্যায় হাতির সামনে পড়ে আহত হন দুই পুলিশকর্মী। বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহের আস্থাশোল জঙ্গলের সামনে হাতি পারাপারের সময়ে পথচলতি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার সময়ে একটি হাতি শুঁড় দিয়ে ঠেলে দিলে পড়ে যান তাঁরা। পরে, বিষ্ণুপুর হাসপাতালে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে।
বন দফতর সূত্রে জানা যায়, তিনটি ‘এলিফ্যান্ট স্কোয়াড’-এর কর্মীরা রাতভর নজরদারিতে রয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে মাইকে গ্রামবাসীকে সতর্ক করতে প্রচার চালানো হচ্ছে। দফতরের আধিকারিকদের একাংশ জানান, হাতির দল এখনও পর্যন্ত জঙ্গলের পথ দিয়ে জেলায় প্রবেশ করেছে। চাষের জমির ক্ষতি করেনি। হাতিরা নির্দিষ্ট গতিপথে এগোবে বলেই আশা। তবে চিন্তা যাচ্ছে না বাঁকাদহ রেঞ্জের খড়কাটা, হাতগাড়া, বাগডোবা, বাসুদেবপুর, তীরবঙ্ক, নতুনগ্রামের চাষিদের। এই এলাকাগুলিতে আনাজের চাষ বেশি হয়। মাঠ ভরে রয়েছে ঝিঙে, লাউ, কুমড়ো। চাষিদের একাংশ বলেন, “ভালয় ভালয় হাতির দল দ্বারকেশ্বর নদী পেরিয়ে বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের দিকে এগিয়ে গেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচব।”
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বুধবার বেলিয়াতোড়ে বন দফতরের সঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসকের বৈঠক হয়েছে। মুখ্য বনপাল জানান, ওই দলটি ছাড়াও পঁচিশ-তিরিশটি হাতির আরও একটি দল জেলার দিকে আসছে বলে খবর মিলেছে। হাতিদের ও মানুষের সুরক্ষার জন্য সতর্ক নজরদারি চলছে। মানুষকে সচেতন করতে গ্রামে গ্রামে বৈঠক, প্রচারাভিযান চলবে। গ্রামে হাতি চলে এলে কী করতে হবে, সে সব নিয়ে সতর্ক করা হবে। তাঁর কথায়, “জঙ্গলে খাবারের অভাব নেই। ফি বছর এ জন্য অনেক গাছ লাগানো হয়। তবে হাতির খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। সে জন্য তারা মাঝেমধ্যে গ্রামের দিকে ঢুকে পড়ে। তবে বাঁকুড়ার মানুষ বন দফতরকে হাতির ব্যবস্থাপনায় অনেক সাহায্য করেন। জেলায় এ পর্যন্ত কোনও ক্ষতিপূরণ দিতে বাকি নেই।”
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অনুসূয়া রায় বলেন, “বন দফতরকে সব রকম ভাবে সাহায্য আমরা করতে প্রস্তুত। বনদফতরের তরফে জঙ্গলপথের নানা জায়গায় একশোটি সৌরবাতি বসানোর আর্জি আমাদের জানানো হয়েছে। জেলা পরিষদের তরফে শীঘ্র চিহ্নিত জায়গাগুলিতে পথবাতি
বসানো হবে।”
জেলা পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারিও জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি হাতির গতিপথ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে বন দফতরকে সাহায্য করবে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy