সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে চাকরি গিয়েছে তাঁদের। হুট করে পায়ের নীচ থেকে জমি সরে যাওয়ার হতাশা, আক্ষেপ, ক্ষোভ, অপমান গ্রাস করেছে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মীদের। তার পর থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই। একাংশ এখনও স্কুলে যাচ্ছেন।
তেমনই একটি স্কুল নলহাটি হাই স্কুল ফর গার্লস। ওই স্কুলে একযোগে চাকরি গিয়েছে ৮ শিক্ষিকার। কিন্তু, তাঁরা সকলেই স্কুলে আসছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁরা কেউ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। তবে, প্রধান শিক্ষিকা বিদিশা সিংহ জানান, আড়াই হাজার পড়ুয়ার ওই স্কুলে ওই আট শিক্ষিকা বাদে ১৫ জল রইলেন। স্কুলের সমস্যার কথা ভেবেই মন খারাপের মধ্যেও ওই আট জন শিক্ষিকা স্কুলে আসছেন।
দুবরাজপুরে তাঁতিপাড়া নবকিশোর বিদ্যানিকেতনের দুই শিক্ষক চাকরি হারিয়েছেন। যোগ্য হয়েও কেন অযোগ্যদের সঙ্গে তাঁদের এক বন্ধনীতে ফেলা হল, তা নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা পাশে রেখেই তাঁদের এক জন স্কুলে আসছেন বলে জানা গিয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুবীর ঘোষ বলছেন, ‘‘ওই শিক্ষক আসছেন, হাজিরা খাতায় সইও করছেন। কারণ, ওঁদের নিয়োগের অনুমতি দিয়েছিল পর্ষদ। পর্ষদ বা জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিস থেকে কোনও বার্তা পাইনি। একই বক্তব্য বিদিশা সিংহের। ইলামবাজার ব্লকের নোহনা সাধারণ বিদ্যাভবনের এক শিক্ষক এবং একমাত্র শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। তাঁরাও নিয়মিত স্কুলে আসছেন। মন খারাপ নিয়ে শনিবারও এসেছিলেন বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ সিংহ।
বীরভূমে এক ধাক্কায় চাকরি গিয়েছে ১০২৫ জনের। তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠের দাবি, বিনা দোষে বলি হলেন তাঁরা। কারচুপি বা অন্য পথে চাকরি পেয়েছেন যাঁরা এবং যাঁদের সহযোগিতায় চাকরি পেয়েছেন, শাস্তি তাঁদের পাওয়া উচিত। কেন যোগ্য হয়েও তাঁদের কাজ হারাতে হল, এই প্রশ্নই তুলছেন বেশির ভাগ চাকরিহারা শিক্ষক। কাজ চলে যাওয়ার পরে আর স্কুলে কেন, সেই হতাশায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছেন তাঁদের বড় অংশ। কয়েক জন ব্যতিক্রম।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে ওএমআর শিট বিকৃত করে চাকরি পেয়েছেন, এই অভিযোগ উঠেছিল। সেই তালিকায় বীরভূমের ৩৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার নাম ছিল। ওই বছরেই গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি সুপারিশপত্র ও চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সেখানেও জেলার ৫০ জন ছিলেন। ফলে, বাকিরা নিজেরে যোগ্যতা প্রমাণ করেই চাকরি পেয়েছিলেন বলে দাবি। চাকরিহারাদের একাংশ বলছেন, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী কী বলছেন, সেই দিকে তাঁরা তাকিয়ে আছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)