Advertisement
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Students Agitation

কে পড়াবেন? বাঁকুড়ার স্কুলে দুই শিক্ষকের ডেপুটেশনের মেয়াদ শেষ হতে আন্দোলনে কচিকাঁচারা

স্থায়ী কোনও শিক্ষক নেই বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী ব্লকের খাগ জুনিয়র হাই স্কুলে। ফলে বার বার বন্ধ হয়ে যায় পঠনপাঠন। অন্য স্কুল থেকে শিক্ষক এনে চলে পড়াশোনা।

School

পোস্টার হাতে চড়া রোদে বিক্ষোভ কচিকাঁচাদের। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
সোনামুখী শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৩৩
Share: Save:

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বয়স ১১ বছর। কিন্তু এখনও স্থায়ী শিক্ষক নেই। অবসরপ্রাপ্ত এবং অতিথি শিক্ষক দিয়ে আবার কখনও অন্য স্কুল থেকে ডেপুটেশনে পাওয়া শিক্ষক দিয়ে স্কুল চলছে। শিক্ষকের অভাবে একাধিক শিক্ষাবর্ষে বন্ধও থেকেছে স্কুল। তার পরেও নতুন সঙ্কটের মুখে বাঁকুড়ার খাগ জুনিয়র হাই স্কুল। কারণ, ডেপুটেশনে থাকা তিন শিক্ষকের মধ্যে দু’জনই মেয়াদ শেষ হওয়ায় আবার নিজেদের স্কুলে ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু দুই শিক্ষককে কিছুতেই ছাড়তে রাজি নয় শিক্ষার্থীরা। দুই শিক্ষকের ডেপুটেশনের শেষ দিনে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন হাতে আন্দোলনে নামল খুদেরা। প্রত্যেকের মুখে একটাই কথা, ‘যেতে নাহি দিব’।

বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী ব্লকের খাগ গ্রামের অবস্থান ঘন জঙ্গলের মধ্যে। খাগ-সহ আশপাশের গ্রামগুলির কচিকাঁচাদের পড়াশোনার জন্য পাড়ি দিতে হত প্রায় ছয় কিলোমিটার জঙ্গলপথ। হাতি এবং অন্য বন্য জন্তুর আক্রমণের ভয়ে অনেকেই পড়াশোনা মাঝপথে থামিয়ে হয়েছে স্কুলছুট। তবে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে খাগ গ্রামে জুনিয়র হাই স্কুল গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল শিক্ষা দফতর। কিন্তু স্কুল তৈরি হলেও স্থায়ী শিক্ষকের পদ না থাকায় শিক্ষা দফতর অবসরপ্রাপ্ত দুই শিক্ষককে নিয়ে আসে। ২০১৮ সালে দুই অতিথি শিক্ষকের পড়ানোর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। নতুন শিক্ষক নিয়োগ-না হওয়ায় ২০১৮ সালে বেশ কিছু দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় স্কুলটি।

গ্রামবাসীদের লাগাতার বিক্ষোভ, আন্দোলনের পরে ’১৯ সালে স্থানীয় পাঁচাল হাই স্কুল থেকে দুই শিক্ষককে খাগ জুনিয়র হাই স্কুলে ডেপুটেশনে পাঠিয়ে আবার পড়াশোনা চালু করে শিক্ষা দফতর। কিন্তু ২০২১ সালে তাঁদেরও ডেপুটেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। আবার বন্ধ হয়ে যায় স্কুলটি। ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত স্কুলটি বন্ধ ছিল। ২০২৩ সালে অন্য স্কুল থেকে তিন শিক্ষককে ডেপুটেশনে পাঠিয়ে খাগ স্কুল চালু করা হয়। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই আবার বন্ধের মুখে পড়ল ওই স্কুল। ডেপুটেশনে থাকা তিন শিক্ষকের মধ্যে সোমবারই দুই শিক্ষকের ডেপুটেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার থেকে ওই দুই শিক্ষক ফিরে যাবেন নিজেদের স্কুলে। খাগ জুনিয়র হাই স্কুলের পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির চারটি ক্লাসের প্রায় ৯০ জন পড়ুয়ার পঠন-পাঠনের দায়িত্ব পড়ল ডেপুটেশনে থাকা মাত্র এক জন শিক্ষকের কাঁধে। তাঁর কাধেই চারটি শ্রেণির পড়ানোর ভার। আবার স্কুল বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় আন্দোলন শুরু করেছে পড়ুয়ারা। সোমবার চড়া রোদ উপেক্ষা করে স্কুল প্রাঙ্গণে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে তারা। অঙ্কনা ঘোষ নামে এক ছাত্রী বলে, ‘‘আমাদের স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক নেই। কয়েক জন শিক্ষক আসেন। আবার চলে যান। তখন আবার স্কুল বন্ধ থাকে। এখন আমাদের লেখাপড়া কী ভাবে হবে, জানি না।’’ ঝুমুর ঘোষ নামে এক অভিভাবকের দাবি, এ ভাবে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘অবিলম্বে স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক পাঠানো হোক। নইলে এলাকার সবাই মিলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’

ডেপুটেশনের মেয়াদ শেষে চুয়াগাড়া সম্মিলনী বিদ্যাপীঠে চলে যাবেন মলয় ঘাটি। তিনি জানান, এত কম সময়ের মধ্যে স্কুলের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষও আমাদের আপন করে নিয়েছিলেন। সবাই খুব আন্তরিক। কিন্তু নিয়ম মেনে আমাদের নিজেদের স্কুলে ফিরতেই হচ্ছে। ভেবে কষ্ট হচ্ছে যে, মঙ্গলবার থেকে আর এই স্কুলে আসতে পারব না।’’

এই শিক্ষক-সমস্যার শেষ কোথায়? বাঁকুড়া জেলার স্কুল পরিদর্শক (সেকেন্ডারি) পীযুষকান্তি বেরা বলেন, ‘‘ওই স্কুলে স্থায়ী শিক্ষকের কোনও পদ না থাকার জন্য সমস্যা হচ্ছে। স্থায়ী শিক্ষকের পদ তৈরির জন্য বিকাশ ভবনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আপাতত অন্য কোনও স্কুল থেকে শিক্ষককে নিয়ে এসে স্কুল চালু রাখার চেষ্টা চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Students Agitation bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE