তাপাসপুর বিনয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র
ক্লাসের মধ্যে ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ মিলিয়ে ছ’টি কম্পিউটার। সঙ্গে প্রজেক্টর এবং উন্নত সাউন্ড সিস্টেম। তার মাধ্যমেই পড়ানোর ব্যবস্থা। তাতেই বুঁদ বিভিন্ন ক্লাসের পড়ুয়ারা।
কোনও বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের ছবি এটা নয়। এই ছবি দুবরাজপুর ব্লকের চিনপাই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তাপাসপুর বিনয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। স্কুলের শিক্ষক ও এলাকার কিছু শুভানুধ্যায়ীর ইচ্ছেয় ও অর্থসাহায্যে মঙ্গলবার এমনই একটি আস্ত ‘স্মার্ট ক্লাসরুম’ উপহার পেয়েছে পড়ুয়ারা। এতে তারা তো বটেই, আনন্দিত তাদের অভিভাবকেরাও। এই ‘ডিজিটাল লার্নিং’ ব্যবস্থার উদ্বোধন করতে স্কুলে এসেছিলেন বীরভূম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি প্রলয় নায়েক। উপস্থিত ছিলেন দুবরাজপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে এবং শাসকদলের নেতা ভোলা মিত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় তাপবিদ্যুতের জলাধার গড়তে গোপালপুর গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দাকে পুনর্বাসন দিতে চিনপাই অঞ্চলের তাপাসপুর গ্রামের কাছে বিনয়নগর নামে একটি জনপদ গড়ে উঠে। ওই এলাকার শিশুদের জন্যই তৈরি হয় স্কুলটি। বর্তমানে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম (এ বারই প্রথম শুরু হল) শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা ১১৮ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা চার। ওই স্কুলেই শুরু হয়েছে ‘স্মার্ট ক্লাস’।
স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ অর্ণিবান মিত্র বলছেন, ‘‘আমাদের স্কুলের পড়ুয়াদের বেশিরভাগই তফসিলি জাতি-জনজাতি ও প্রান্তিক পরিবার থেকে আসা। এবং নতুন প্রজন্মের। পড়াতে গিয়ে দেখেছি, পাঠ্য পুস্তক থেকে পড়াতে গিয়ে যতটা না মনোযোগ দেয় বা বোঝে, তার থেকে মোবাইলের দিকে ওদের ঝোঁক বেশি। এর পরেই নিজের ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর এনে বাচ্চাদের শেখানোর একটা চেষ্টা করি। দেখি অনেক বেশি মনোযোগী তারা। শিখছেও দ্রুত। তার পরেই স্মার্ট ক্লাসের ভাবনা।’’
এর পরই অনির্বাণবাবু তাঁর সহ শিক্ষক রাজকুমার মুখোপাধ্যায়, ইপ্সিতা সাহা, নাসিম আখতারের সঙ্গে অলোচনায় ঠিক করেন, বাচ্চাদের জন্য কম্পিউটারের মাধ্যমে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটি ক্লাসের পাঠ্যসূচি অনুয়ায়ী ‘টিচিং-লার্নিং মেটিরিয়াল’কে ল্যাপটপে বা কম্পিউটারে ফিড করিয়ে শেখানো হবে পড়ুয়াদের। মনিটরে পাঠ্যবইয়ের নীরস ও জটিল বিষয়গুলি অডিয়ো-ভিডিয়ো মাধ্যমে জীবন্ত ভাবে ফুটে উঠবে। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। কম্পিউটারগুলি কিনতে শিক্ষকেরা নিজেরা তো টাকা দিয়েছেনই, এগিয়ে আসেন বেশ কিছু মানুষ। উৎসাহ দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতিও। তারই ফসল এই ‘স্মার্ট ক্লাস’।
একসঙ্গে এতগুলি কম্পিউটার স্কুলে আসায় খুব খুশি পড়ুয়ারা। চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া সুনীল সরেন, দীপ বাউড়ি, পঞ্চম শ্রেণির অনুসূয়া বাউড়ি, শুভশ্রী বাউড়িদের কথায়, ‘‘এ বার ক্লাসে দারুণ মজা হবে।’’ প্রলয় নায়েক বলছেন, ‘‘অন্যদের অনুপ্রেরণা হবে এই স্কুল। আমরা চাইব, চলতি অর্থবর্ষের মধ্যে ৩২টি চক্রের কমপক্ষে পাঁচটি করে স্কুলে এই ব্যবস্থা চালু হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy