E-Paper

‘কুকথা’ পড়ুয়াদের মুখে, উদ্বেগে শিক্ষক-অভিভাবক

শিক্ষকদের একটা বড় অংশ জানাচ্ছেন, বর্তমানে বিভিন্ন আইনি বিধিনিষেধের জেরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শাসন আলগা হচ্ছে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

তারাশঙ্কর গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫৩
Share
Save

বর্তমান প্রজন্মের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের মধ্যে কথোপথনে কটূ শব্দের ব্যবহার বাড়ছে বলে উদ্বেগে শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের দাবি, স্থান-কাল বিবেচনা না করে যে ভাবে পড়ুয়ারা সাবলীল ভাবে ওই শব্দ মুখে আনছে, মনে হচ্ছে ওই সব শব্দ যে আপত্তিকর সে বোধও ওদের মধ্যে যেন তৈরি হয়নি। এতে সমান চিন্তায় অভিভাবকেরাও।

বড়জোড়ার এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আমার ছেলে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ইদানীং দেখছি সমবয়সি বা দাদা-দিদিদের সঙ্গে কথা বলার সময় খারাপ শব্দ নির্দ্বিধায় মুখে আনছে। ওকে বকাবকি করতে গেলে বলছে, স্কুলে বন্ধুরা, দাদারাও নিজেদের মধ্যে ওই শব্দ বলে। এ সব না বললে পিছিয়ে পড়বে।’’ বাঁকুড়া শহরের প্রৌঢ় অরূপ মণ্ডলের অভিজ্ঞতাও এক। তিনি বলেন, ‘‘ফাস্ট ফুড বা কেক-আইসক্রিমের দোকানে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ঢুকতে দেখলে সরে যাই। তারা যে সব ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথা বলে তা অশ্রাব্য। পাশে বড়-ছোট কারও উপস্থিতি তারা তোয়াক্কা করে না। নিজের সম্মান রাখতে দূরে সরে যাওয়াই ভাল।’’ বাঁকুড়ার বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষক মিলন পাল জানান, শিক্ষক-শিক্ষিকারা পাশ দিয়ে গেলেও পড়ুয়ারা অবলীলায় অশ্রাব্য ভাষায় কথোপকথন চালিয়ে যাচ্ছে। ওরা এটাকে কিছু অন্যায় বলে মনেই করছে না। বকাবকি করে বা বোঝালেও তারা মানতে নারাজ।

যদিও শিক্ষকদের একটা বড় অংশ জানাচ্ছেন, বর্তমানে বিভিন্ন আইনি বিধিনিষেধের জেরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শাসন আলগা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের সে ভাবে শাসন করতে শিক্ষকেরাও এখন ‘ভয়’ পান। পাত্রসায়রের এক স্কুল শিক্ষক পবিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বর্তমান ওয়েবসিরিজ, সমাজমাধ্যম এবং কিছু বাংলা সিনেমা, ধারাবাহিকেও সহজ ভাবে কিছু কটূ শব্দের ব্যবহার হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদেরও মনে হচ্ছে এই ভাষায় কথা বলা খুব কেতাদস্তুর। তাই তাদের স্থান কাল পাত্রের জ্ঞান থাকছে না।’’

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের মনোবিদ অরিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অবক্ষয় সব ক্ষেত্রেই হচ্ছে। তবে শিশুরা বা স্কুলের ছাত্রেরা যা দেখে তাই শেখে। সে ক্ষেত্রে সমাজমাধ্যম এবং ওয়েবসিরিজ ও সিনেমার যেমন একটা বড় প্রভাব আছে, তেমনই বড়রাও হয়তো কখনও ওদের সামনে খারাপ ভাষা প্রয়োগ করছেন। অভিভাবকদের এবং বড়দেরও সচেতন হতে হবে। ছোটদের বার বার বোঝাতে হবে।’’

মনোবিদদের একাংশ মনে করছেন, বয়ঃসন্ধির সময়ে বেপরোয়া মনোভাব স্বাভাবিক ভাবে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে চলে আসে। সেই সময়ে নিয়ম ভাঙার আনন্দও যেন তারা পায়। এ সময়ে তাদের মতো করে তাদের সহবত শেখাতে হবে। এই শিক্ষার দায় শিক্ষকেরাও এড়িয়ে যেতে পারেন না। আবার অভিভাবকদেরও সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ হওয়া উচিত। কারণ রাস্তাঘাটে তারা অনেক শব্দ শেখে। কিন্তু তার মধ্যে কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ সেই বোধ তাদের থাকে না। সম্পর্ক এমন হওয়া প্রয়োজন যাতে সদ্য শোনা কোনও শব্দ ব্যবহার করা উচিত কি না, তা যেন সন্তান অভিভাবকদের কাছে সহজে জানতে চাইতে পারে। ভাল-খারাপ শব্দ কানে আসতেই থাকবে, এর মধ্যেই সন্তানকে মানুষ করতে হবে। জোর করে ঠেকাতে গেলে বরং হিতে বিপরীত হতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

barjora

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।