রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা অবশ্য দাবি করছেন, বিক্ষিপ্ত ভাবে দু’এক জায়গায় মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার মিললেও এ রাজ্যে তাদের তেমন কোনও গতিবিধি এখনও অবধি লক্ষ্য করা যায়নি। তাঁদের মতে ওই পোস্টারগুলির সঙ্গে মাওবাদীদের কোনও যোগ নেই।
আকাশের মাথার দাম এক কোটি টাকা ঘোষণা ঝাড়খণ্ড পুলিশের। তিনিই কি এ রাজ্যে সংগঠন বিস্তারের দায়িত্বে? —ফাইল চিত্র।
জঙ্গলমহলে হারানো জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে মাওবাদীরা। আর সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংগঠনেরই এক বাঙালি নেতাকে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সন্দেহ, মাওবাদী নেতা অসীম মণ্ডল ওরফে আকাশকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নানা সূত্র থেকে তেমনটাই আঁচ পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় আকাশের গতিবিধিও নজরে এসেছে তাঁদের। তবে আকাশকে নিয়ে তাঁরা এখনও নিশ্চিত নন। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, দায়িত্ব পেয়েছেন এখ জন বাঙালি। তিনি আবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এই দুটো বিষয়ই আকাশের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, তিনিই সেই ব্যক্তি।
গত কয়েক মাস ধরেই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া গিয়েছে মাওবাদী পোস্টার। কখনও বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে, আবার কখনও বেশ কয়েক দফা দাবির কথাও তোলা হয়েছে ওই সব পোস্টারে। আর এই ‘ধোঁয়া’ দেখেই ‘আগুন’ কোথায় তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। সূত্রের খবর, রাজ্যের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম এই চার জেলা ছাড়াও বীরভূমেও সংগঠন বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে মাওবাদীদের পশ্চিমবঙ্গ বিহার ওড়িশা সীমানা কমিটি। মূলত পঞ্চায়েত স্তরে শাসক দলের একাংশের দুর্নীতি এবং স্থানীয় বিভিন্ন ইস্যুকে তুলে ধরা হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, আত্মসমর্পণের সরকারি প্যাকেজ প্রত্যাখ্যান করা পুরনো কয়েক জন কর্মী এবং সমর্থককে সংগঠিত করে তরুণদের দলে টানার কৌশল নিয়েছে মাওবাদীরা। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে বাঁকুড়ার বারিকুল থানা এলাকায় মাওবাদী সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া শিবু মুর্মুর কাছ থেকে বেশ কিছু পোস্টার এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে। তা খতিয়ে দেখার পর এমনটাই ধারণা গোয়েন্দাদের। জঙ্গলমহলে তরুণদের দলে টানার ক্ষেত্রে ‘শহুরে মাওবাদী’ নেতৃত্বও বিশেষ ভূমিকা নিচ্ছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। তাই জঙ্গলমহলে যাতায়াত করা পর্যটকদের উপরেও নজরদারিও রাখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি সূত্র বলছে, মাওবাদীদের এ রাজ্যে সংগঠন বিস্তারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আকাশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার ফুলচক গ্রামের বাসিন্দা আকাশের গতিবিধি লক্ষ্য করা গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলা এলাকায়। যা এ রাজ্যের সীমানাবর্তী। সংগঠন বিস্তারের আশায় সেখান থেকে আকাশ এ রাজ্যের সীমানাবর্তী এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করছে বলেও সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই আকাশের মাথার দাম এক কোটি টাকা ঘোষণা করেছে ঝাড়খণ্ড পুলিশ।
কেন্দ্রীয় এক গোয়েন্দা কর্তার কথায়, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি, এ রাজ্যে সংগঠন বাড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এক বাঙালি মাওবাদী নেতাকে। তিনি মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও। আকাশও বাঙালি। তিনিও মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।’’ ফলে সন্দেহের তির ঘুরেছে আকাশের দিকেই। তার কারণও রয়েছে। জঙ্গলমহল আকাশের চেনা জমি। সে ভূমিপূত্রও বটে। লালগড় আন্দোলনের সময় যে কয়েক জন মাওবাদী নেতা সামনের সারিতে ছিলেন তাঁদের প্রায় সকলেই হয় জেলে না হয় এনকাউন্টারে নিহত। কিন্তু এখনও অধরা আকাশ। যদিও অন্য এক গোয়েন্দাকর্তা বলছেন, ‘‘এ রাজ্যে সংগঠন বিস্তারের দায়িত্বে মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতাকে দেওয়া হয়েছে। তিনি বঙ্গসন্তানও বটে। তবে আকাশ নন। এখন যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি আগে উত্তর ছত্তীসগঢ় এবং ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বে ছিলেন।’’
রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা অবশ্য দাবি করছেন, বিক্ষিপ্ত ভাবে দু’এক জায়গায় মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার মিললেও এ রাজ্যে তাদের তেমন কোনও গতিবিধি এখনও অবধি লক্ষ্য করা যায়নি। তাঁদের মতে ওই পোস্টারগুলির সঙ্গে মাওবাদীদের কোনও যোগ নেই। জঙ্গলমহলে কর্মরত পুলিশ আধিকারিকদের বেশির ভাগেরই যুক্তি, মাওবাদীরা সাধারণত ছাপানো পোস্টার ব্যবহার করে না। অথচ সম্প্রতি পুরুলিয়ার একাধিক জায়গায় ছাপানো পোস্টার মিলেছে। পোস্টারগুলিতে যে দাবির কথা বলা হয়েছে তার সঙ্গে মাওবাদীদের যোগ থাকার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy