Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Maa Canteen

ভর্তুকিই ভরসা মা ক্যান্টিনের

বিয়েবাড়ির আয়োজন করতে গিয়ে পকেটে টান পড়ছে অনেকের। মানবাজার ২ ব্লকের রামপুরের অপূর্ব মাহাতোর ভাইঝির বিয়ে সবে হয়েছে।

বিষ্ণুপুরের মা কিচেন।

বিষ্ণুপুরের মা কিচেন। ছবি: শুভ্র মিত্র।

প্রশান্ত পাল  , রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ০৫:২২
Share: Save:

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির আঁচ লেগেছে হাসপাতাল, সংশোধনাগারের হেঁশেলেও। বিয়ের মরসুমে বিপাকে পড়েছে ক্যাটারিং সংস্থাগুলিও। হোটেলেও সঙ্কট।

সংশোধনগারে বন্দিদের রান্না হয় ভিতরেই। কাঁচামালের জোগানের জন্য প্রতি ছ’মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দাম বৃদ্ধির জন্য কাঁচামালের পরিমাণ ও মানে কোনও আপস করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জেল কর্তৃপক্ষ। বাঁকুড়া সংশোধনাগারের আনাজ সরবরাহকারী এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘চুক্তির সময়েই দর নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। পরে আনাজের দাম বাড়লেও আমরা চুক্তিবদ্ধ দরেই বিক্রি করি। বর্তমানে অনেকখানি লোকসানের মধ্যে যাচ্ছি। কবে দর স্বাভাবিক হয় সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছি।’’

পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রান্নাঘর চালাতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন কর্মীরা। হাসপাতালের হেঁশেলের দায়িত্বে থাকা বংশীধর মাঝি বলেন, ‘‘দুপুরে এবং রাতে দু’বেলা রোগীদের থালায় তরকারি দিতেই হয়। খাবারের যে দাম পাই, তার তুলনায় আনাজের দাম বর্তমানে আকাশ ছোঁয়া। খুবই সমস্যা হচ্ছে।’’

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহকারী সংস্থার কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ২০১৮ সাল থেকে খাবারের দর বাড়ানো হয়নি। এ দিকে আনাজপাতির দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। দুই হাসপাতালেই রোগীদের একাংশের অভিযোগ, খাবারের মান আগেও সন্তোষজনক ছিল না, এখনও তাই।

বিয়েবাড়ির আয়োজন করতে গিয়ে পকেটে টান পড়ছে অনেকের। মানবাজার ২ ব্লকের রামপুরের অপূর্ব মাহাতোর ভাইঝির বিয়ে সবে হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘বিয়েবাড়িতে দু’-তিন দিন ধরে বাড়িতে আত্মীয়দের খাওয়া দাওয়ার ব্যাপার থাকে। আগে খাওয়াদাওয়া বাবদ যা খরচ ধরেছিলাম, বাজার করতে গিয়ে দেখলাম, খরচ দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গিয়েছে।’’ আড়শার বামুনডিহার রসরাজ মাহাতোর বাড়িতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান রয়েছে। তিনি জানান, মেনু কাটছাঁট করছেন।

সঙ্কটে ক্যাটারিং সংস্থাগুলিও। বাঁকুড়া শহরের ক্যাটারিং ব্যবসায়ী সোমনাথ দে-র দাবি, ‘‘এখন যে সব বিয়েবাড়িতে খাবার সরবরাহ করছি, তার প্লেট পিছু দামের চুক্তি যখন হয়েছিল, তখন আনাজের দাম কম ছিল। এখন আনাজের দাম চার গুণ বাড়লেও প্লেটের দাম বাড়ানোর উপায় নেই। লাভ রাখা যাচ্ছে না।’’ আদ্রার ক্যাটারার বিষ্ণু গরাঁইয়ের হিসাব, ‘‘আগে কোনও প্লেটের দাম ঠিক করার সময় ৩০ টাকা করে মাথাপিছু কাঁচা আনাজের খরচ ধরেছিলাম। এখন বাজার করতে গিয়ে দেখছি, খরচ তার থেকে বেশি হচ্ছে। লোকসান করেই কাজ করতে হচ্ছে।’’ পুরুলিয়া শহরের ক্যাটারার শিবশঙ্কর চৌধুরী জানান, এখন যে সব ‘বুকিং’ আসছে, সেখানে আলুপোস্ত, ধোঁকার ডালনার মতো আনাজহীন পদ রাখছেন।

হোটেল মালিকেরাও একই নৌকার যাত্রী। পুরুলিয়ার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের হোটেল মালিক তরণী দে-র কথায়, ‘‘আলু থেকে কুমড়ো, লাউ সবেরই দাম বেড়ে গিয়েছে। আদা, রসুন, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা কোনটার দাম কম? কবে দাম নাগালে আসবে জানি না। খুব সমস্যার মধ্যে হোটেল চালাতে হচ্ছে।’’ আদ্রার এক রেস্তরাঁ মালিক জানান, খাবারে স্যালাড দিতে হয়। কিন্তু শসার দাম কেজিতে আশি টাকার নীচে নামছে না। শসা ছাড়া স্যালাড হয় না কি?’’

বাঁকুড়ার সুভাষ রোডের হোটেল ব্যবসায়ী প্রসেনজিৎ দত্ত, মিথিলার ধাবা মালিক দেবু বাউরি জানান, কেবল সবজি থালিতেই গত তিন মাসে সামগ্রিক ভাবে অন্তত ৪০ শতাংশ খরচ বেড়ে গিয়েছে। অথচ বাজার মন্দ বলে থালির দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। কর্মীদের বেতন দিতে তাঁরা মুশকিলে পড়ছেন।

তবু এই বাজারেও ৫ টাকাতেই রোজ একটা সব্জি ও ডিম-ভাত খাইয়ে যাচ্ছে মা ক্যান্টিনগুলি। কী ভাবে? প্রশাসন সূত্রের খবর, মা ক্যান্টিনে বিনামূল্যে চাল দেয় খাদ্য দফতর। রান্নার গ্যাস দেয় প্রশাসন। এর বাইরে প্লেট পিছু ১৫ টাকা সরকারি ভর্তুকি পাওয়া যায়। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া শহরে পুরসভা পরিচালিত দু’টি মা ক্যান্টিন রয়েছে। পুরুলিয়ার পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘কাঁচামালের দাম অনেকখানি বেশি বলে কিছুটা ভর্তুকি দিয়েই মা ক্যান্টিন চালাতে হচ্ছে।’’ বাঁকুড়ার উপপুরপ্রধান হিরালাল চট্টরাজও জানান,মা ক্যান্টিন চালাতে এখনও সমস্যা হচ্ছে না।(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Vegetable Price purulia bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy