গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
তিন বছর পর আবার চেনা জায়গায় পৌষমেলা। শুধু পরিচালনার দায়িত্ব বদলেছে। এই প্রথম বার ঐতিহ্যবাহী পূর্বপল্লির মাঠে পৌষমেলা করছে বোলপুর জেলা প্রশাসন। আর এই প্রথম বার পৌষমেলার উদ্বোধন (ভার্চুয়ালি) করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বার্তা, ‘‘ভালবাসা এবং সতর্কতার সঙ্গে এই মেলা পরিচালনা করতে হবে।’’ বস্তুত, বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর (বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য) আমলে করোনার পরেও পৌষমেলা না করার সিদ্ধান্ত থেকে রাজ্যের রাস্তায় বিশ্বভারতীর বোর্ড, অমর্ত্য সেনের জমি মামলা থেকে ফলক বিতর্ক— বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রাজ্য যে বার বার সঙ্ঘাতে জড়িয়েছে, সেখান থেকে প্রশাসনের উদ্যোগে পৌষমেলা পরিচালনা করা এবং মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
রবিবার পৌষমেলার উদ্বোধনের আগে ছাতিমতলায় বিশেষ গানের মধ্য দিয়ে পৌষ উৎসবের সূচনা করেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সঞ্জয়কুমার মল্লিক। ছাতিমতলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘উদয়ন’ বাড়ি পর্যন্ত বিশেষ পদযাত্রা হয়। তার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়োজিত পৌষমেলার ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ, আমার মন ভোলায় রে— এই গানটি আজও আমাদের কাছে সমাদৃত এবং বিশ্বজনীন। বিশ্বের প্রতি কবিগুরুর অবদান রয়েছে।” তার পরই মমতার সংযোজন, ‘‘কেউ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই স্থানকে কলুষিত করুক আমরা সেটা চাই না। তাই ভালবাসার সঙ্গে, সতর্কতার সঙ্গে এই মেলা পরিচালনা করতে হবে।’’
এ বার প্রথমে অবশ্য বিশ্বভারতী জানিয়েছিল পৌষমেলা হবে। কিন্তু পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে ছোট আকারে মেলা হবে। তার অব্যবহিত পরে মেলা পরিচালনার ভার যাদের উপর সেই শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট জানিয়ে দেয় এই কম সময়ের মধ্যে মেলার আয়োজন সম্ভব নয়। তা ছাড়া ছোট আকারেও মেলা করা সম্ভব নয়। আবার একপ্রস্ত আলোচনা চলে। এ বার বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, পৌষমেলা হচ্ছে না। এর পর মেলার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি। ঘটনাক্রমে এ বারও বিকল্প পৌষমেলা করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় জেলা প্রশাসন। তবে গত দু’বছরের মতো ডাকবাংলো মাঠ নয়, এ বার ঐতিহ্যবাহী পূর্বপল্লির মাঠেই মেলা করতে চেয়ে বিশ্বভারতীর অনুমতি চায় তারা। বস্তুত, পাঁচ দিনের বিকল্প পৌষমেলার পিছনে মূলত মুখ্যমন্ত্রীর হাত রয়েছে। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘পৌষমেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত মানুষ ভাল ভাবে নেয়নি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই জায়গা কেউ কলুষিত করুক, চাই না। কোনও স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে বিশ্বভারতী চালালে হবে না। আশ্রমিক থেকে পড়ুয়া সকলকেই সম্মান দিতে হবে।’’
মতানৈক্য শেষে শান্তিনিকেতনে খুশির হাওয়া। আবার পরিচিত ছবি পূর্বপল্লির মাঠে। সেজে উঠছে এলাকা। ইতিমধ্যে ছোট ছোট স্টল বসে গিয়েছে। পসরা নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে আসছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। মেলা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য দেড় হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। থাকছে ওয়াচ টাওয়ার এবং সিসি ক্যামেরা। প্রথম বার পূর্বপল্লির মাঠে আয়োজন করে প্রশাসনের লক্ষ্য, দূষণমুক্ত এবং সফল ভাবে মেলা শেষ করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy