প্রয়াগরাজ থেকে ফিরল রামপুরহাটের বাসিন্দা, গায়ত্রী দে-র (৫৮) দেহ। তবে পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, বারবার দাবি করা সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন তাঁদের কোনও মৃত্যুর শংসাপত্র দেয়নি। একটি চিরকুট দিয়ে মৃতদেহ দিয়ে দেওয়া হয়। গায়ত্রীর ছেলে প্রতাপের ক্ষোভ, ‘‘আমরা নিশ্চিত মায়ের মৃত্যু পদপিষ্ট হয়েই হয়েছে। আমরা প্রয়াগরাজের পুলিশ প্রশাসনকে বারবার দেহ ময়না তদন্ত করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার মায়ের মৃত্যু কী ভাবে হয়েছে সেটা পর্যন্ত উল্লেখ না করে আমাদের মৃতদেহ তুলে দেয়।’’ এর আগে কুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত বাংলার আরও এক বাসিন্দার ক্ষেত্রে একই অভিযোগ উঠেছিল।
প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলায় গিয়ে মঙ্গলবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন রামপুরহাট পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গায়ত্রী। সাত দিন পর, সোমবার প্রয়াগরাজের মোতীলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে গায়ত্রীর দেহ রামপুরহাটে নিয়ে আসন ছেলে প্রতাপ ও তাঁর সঙ্গীরা। শুক্রবারই ওই হাসপাতালের মর্গের একটি ছবি দেখে প্রতাপ দাবি করেন, মৃতদের মধ্যে তাঁর মা রয়েছেন। বীরভূম প্রশাসন ও রামপুরহাট পুরসভার উদ্যোগে শনিবার রাতে রওনা দিয়ে রবিবার প্রয়াগরাজে পৌঁছন প্রতাপ। মা গায়ত্রীর দেহ মোতীলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে শনাক্ত করেন তাঁরা।
প্রতাপ জানান, মৃতদেহ শনাক্ত করার পর তাঁরা দেহের ময়নাতদন্তের দাবি করেছিলেন। কিন্তু ময়না তদন্ত না করে পরিবর্তে মোতীলাল নেহেরু মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি চিরকুট ধরিয়ে দেন। প্রতাপ জানান, সেই কাগজে কেবল উল্লেখ রয়েছে গায়ত্রী দে-র মৃতদেহ ছেলে প্রতাপ দে সাক্ষর করে নিচ্ছেন। কাগজে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনও সিল বা সইও নেই। প্রতাপ বলেন, ‘‘প্রয়াগরাজের হাসপাতাল থেকে আমাদের বলা হয় মৃতদেহর ময়না তদন্ত যেখানকার বাসিন্দা সেখানে করা হবে। মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের প্রতিনিধির সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্সে পাঠানো হবে এবং সঙ্গে থাকা পুলিশের মাধ্যমে যাবতীয় কাগজপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’
প্রতাপ জানান, তাঁরা উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রশাসনকে বারবার মৃতদেহ ময়না তদন্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা আমাদের বলেন এর আগে আরও দেহ এ ভাবেই ময়না তদন্ত ছাড়া পাঠানো হয়েছে।’’ এর আগে কুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত কলকাতার বিজয়গড়ের বাসিন্দা বাসন্তী পোদ্দারের (৬০) পরিজনেরা অভিযোগ তুলেছিলেন, কোনও ডেথ সার্টিফিকেট না দিয়ে চিরকুটে ‘দেহ পরিবারের হাতে দেওয়া হল’ লিখে পাঠিয়ে দেয় উত্তরপ্রদেশের পুলিশ।
সোমবার বেলা তিনটে নাগাদ গায়ত্রীর দেহ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে পৌঁছায়। হাসপাতালে রামপুরহাটের মহকুমাশাসক সৌরভ পাণ্ডে, রামপুরহাটের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক গোবিন্দ সিকদার, রামপুরহাট থানার আইসি সুকোমল ঘোষ, রামপুরহাট পুরসভার পুরপ্রধান সৌমেন ভকত-সহ গায়ত্রীর আত্মীয় স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলেন। দেহ নিয়ে উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা অ্যাম্বুল্যান্স রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে উপস্থিত হলে রামপুরহাটের মহকুমাশাসক, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক এবং পুরপ্রধান সৌমেন ভকত উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কনস্টেবলের কাছে মৃতদেহের সঙ্গে আনা কাগজপত্র দেখতে চান। তখন তাঁরা প্রয়াগরাজের মোতীলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়া কাগজ দেখান।
পুরপ্রধান সৌমেন ভকত বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কনস্টেবল যে কাগজ দেখা তাতে কী ভাবে মৃত্য হয়েছে বা মৃত্যুর কারণ উল্লেখ নেই। যে ভাবে একটা মৃতদেহ ময়না তদন্ত ছাড়া এবং কাগজপত্র ছাড়া পাঠানো হল সেটা চরম হাস্যকর।’’ মহকুমাশাসক সৌরভ পাণ্ডে বলেন, ‘‘রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে ময়না তদন্ত করা হয়েছে। এর পরে সরকারি ভাবে যা করণীয় সেটা করা হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)