Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2024

প্রতিবাদে দেবী এ বার অলঙ্কার বিহীন

পরিবারের সদস্য রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় জানান, পুজো হবে ঠিকই। কারণ তা পারিবারিক ঐতিহ্য। কিন্তু এ বার শোকের আবহে জগৎজননীর মনও যেন ভারাক্রান্ত।

প্রতিবার এ ভাবে সাজিয়ে তোলা হত প্রতিমা।

প্রতিবার এ ভাবে সাজিয়ে তোলা হত প্রতিমা। ফাইল চিত্র।

প্রশান্ত পাল 
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৫৫
Share: Save:

পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে প্রথা। ৯৪ বছরের পুজোর ইতিহাসে এই প্রথম পুরুলিয়ার নামোপাড়ায় চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আরাধ্যা দেবী দুর্গাকে সালঙ্কারা রূপে দেখা যাবে না। আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদ ও সুবিচারের দাবিতে ওই পরিবার এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শোনা যায়, নীলকণ্ঠ নিবাসের এই পুজোয় এসেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও। বাড়ির ঠাকুরদালানে এক চালা ডাকের সাজের মূর্তির সালংকারা রূপ দেখতে অভ্যস্ত সকলে। তবে দেবীর অঙ্গে এ বার শোভা পাবে না সোনা, রুপোর গয়না। ১৯৩০ সালে মন্দির প্রতিষ্ঠা ও পুজো শুরুর পরে থেকে এ বারই প্রথম শুধু লাল পাড়ের সাদা শাড়িতে দেবীর পুজো হবে।

পরিবারের সদস্য রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় জানান, পুজো হবে ঠিকই। কারণ তা পারিবারিক ঐতিহ্য। কিন্তু এ বার শোকের আবহে জগৎজননীর মনও যেন ভারাক্রান্ত। তাঁর কথায়, “যে ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিবাদ জানানো বা সেই যন্ত্রণার সমব্যথী হওয়ার ভাষা নেই। কত মানুষ প্রতিদিন প্রতিবাদে রাত জাগছেন, রাস্তায় নামছেন। মনে হচ্ছে নির্যাতিতা যেন পাড়ারই মেয়ে। এই আবহে আমাদেরও প্রতিবাদ, দেবীর গায়ে কোনও গয়না থাকবে না। পুজোর ইতিহাসে এই প্রথম বার এমন হবে।”

এই পুজোর ইতিহাস অনেক প্রাচীন বলে দাবি পুরুলিয়ার ক্ষেত্র গবেষক ভাস্কর বাগচীর। বাংলার বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম যশোররাজ প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ছিল বারাসতের কাছে ধূমঘাটে। তিনি মোগল সম্রাট আকবরের বশ্যতা স্বীকার করেননি। পরে জাহাঙ্গির তাঁকে পরাস্ত করতে সেনাপতি মানসিংহকে পাঠান। ঢাকায় ঘাঁটি গেড়ে মানসিংহ গুপ্তচর মারফত খবর পান, প্রতাপাদিত্যের উপরে দেবী যশোরেশ্বীর আশীর্বাদ রয়েছে। দেবীর বিগ্রহ অপহরণ করা ও যশোররাজের সেনাধ্যক্ষ শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়কে বশে আনার ফন্দি আঁটেন তিনি। সে চেষ্টা সফল হয়নি। শেষে অতর্কিতে এক দিন ধূমঘাট আক্রমণ করে শঙ্কর ও প্রতাপাদিত্যকে পরাস্ত করে তাঁদের বন্দি করেন। যশোরেশ্বরীর বিগ্রহ নিয়ে যাওয়া হয় অম্বরে। সেখানে আজও তিনি পূজিতা হন।

দিল্লির পথে বারাণসীর সেনা ছাউনিতে অসুস্থ হয়ে প্রতাপাদিত্যের মৃত্যু হয়। শঙ্করের আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ হয়। শোনা যায়, মহালয়ায় পিতৃপুরুষের উদ্দেশে তিনি তর্পণের ইচ্ছার কথা জানালে সম্রাট তা নাকচ করেন। প্রতিবাদে আমরণ অনশন শুরু করেন। ঘটনার কথা রাজমহিষী যোধাবাঈয়ের কানে পৌঁছলে তিনি জাহাঙ্গিরকে তর্পণের অনুমতি দিতে নির্দেশ দেন। পরবর্তী সময়ে যোধাবাঈয়ের আনুকূল্যে শঙ্কর বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান এবং তাঁরই কথা বারাসতের ভিটেয় ফিরে দুর্গাপুজো শুরু করেন। পুজোয় যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও শেষমেশ আসতে পারেননি যোধাবাঈ। ভাস্কর বলেন, “ওই শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়েরই উত্তর পুরুষের একটি শাখার পুজো পুরুলিয়ার নীলকণ্ঠ নিবাসের পুজো।’’

অন্য বিষয়গুলি:

purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy