বসন্তে পলাশের রঙে রাঙা হয়ে ওঠে পুরুলিয়া। গত কয়েক বছর ধরে লাল পলাশ-শিমূলের দলে ভিড়েছে হলুদ পলাশও। জেলার কয়েকটি এলাকায় ওই পলাশের দেখা মিলছে। তার অন্যতম রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বেড়ো পাহাড়ের জঙ্গল। তবে সেখানে ‘গ্রানাইট হাব’-এর কাজ চলায় পলাশ গাছের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গাছ বাঁচাতে জেলা মাইনিং দফতরকে চিঠি দেয় বন দফতরের রঘুনাথপুর রেঞ্জ। তার পরেই পাহাড়ে থাকা দু’টি হলুদ পলাশ গাছ সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের ‘মাইনস অ্যান্ড মিনারেল ডেভেলপমেন্ট ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড’ বা ‘এমডিটিসি’।
খনিজ দফতরের কাছ থেকে ‘লিজ’ নিয়ে পাহাড় কেটে গ্রানাইট বার করার বরাত পেয়েছে একটি সংস্থা। রাজ্য সরকারি সংস্থা ‘ডব্লিউবিএমডিটিসি’-ও কাজে যুক্ত। খননকার্যে মাটিতে ধস নামছে পাহাড়ের নানা এলাকায়। তাতেই যে কোনও সময়ে গাছ দু’টির ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। তাঁদের দাবি, পাহাড়ে তিনটি হলুদ পলাশের গাছ ছিল। একটি ইতিমধ্যে গ্রানাইট বার করার কাজে নষ্ট হয়েছে। রঘুনাথপুর রেঞ্জের আধিকারিক নীলাদ্রি সখা বলেন, ‘‘রঘুনাথপুর রেঞ্জের মধ্যে কয়েকটি ব্লকে হলুদ পলাশের গাছ আছে। তার অন্যতম বেড়ো পাহাড়ের গাছগুলি। স্থানীয়েরা জানিয়েছিলেন, গ্রানাইট হাবের জন্য গাছগুলি বিপন্ন। এলাকা ঘুরেও দেখা গিয়েছে, গাছগুলি রক্ষা করতে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে যে কোনও দিন মাটি ধসে নষ্ট হবে। মাইনিং দফতরকে তা জানানো হয়েছে।”
ইতিমধ্যে গাছ দু’টি ঘিরে বেড়া দিয়েছে ‘এমডিটিসি’। হলুদ পলাশের গুরুত্ব লিখে কেন তা সংরক্ষণ করা জরুরি, বোর্ডে লেখা হয়েছে। ফুল না ছেঁড়া, ডাল না ভাঙার আবেদন জানানো-সহ গাছগুলির আশপাশে যে ধস তৈরি হয়েছিল, সেখানে নতুন করে মাটি ফেলা হয়েছে।
স্থানীয়েরা জানান, বেড়ো পাহাড়ের জঙ্গলকে আরও ঘন ও বিভিন্ন গাছে সমৃদ্ধ করতে কয়েক জন যুবক নানা গাছ লাগিয়েছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে পাহাড় কেটে গ্রানাইট বার করার কাজ শুরুর পরে সেই সব গাছ নষ্ট হতে বসেছে। রেঞ্জ অফিসার নীলাদ্রি বলেন, “বেড়ো পাহাড়ের ওই এলাকা বনভূমির মধ্যে পড়ে না। কিন্তু যে ভাবে মাইনিং দফতর হলুদ পলাশ গাছ সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে, তা প্রশংসনীয়।” সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান সুব্রত রাহাও বলেন, “হলুদ পলাশ একটি বিরল প্রজাতির গাছ। জেলায় কমই চোখে পড়ে। তা রক্ষা করা দরকার।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)