রঘুনাথপুর-বাঁকুড়া রাজ্য সড়কে রেল করিডরে সেতু। নিজস্ব চিত্র।
বর্তমানে কয়লার চাহিদা দৈনিক কম-বেশি ১৫ হাজার টন। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎপাদন শুরু হলে সেই চাহিদা হবে দ্বিগুণেরও বেশি। রঘুনাথপুরে ডিভিসির আরটিপিএস তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা আনার কাজে তাই রেল করিডর তৈরিতে জোর দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আরটিপিএসের প্রকল্প অধিকর্তা চৈতন্য প্রকাশ বলেন, “এখন রেলের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মালগাড়ি না পাওয়ায় রেলপথের পাশাপাশি সড়কপথেও কয়লা আনতে হচ্ছে। তবে আমাদের লক্ষ্য চাহিদার পুরোটা কয়লা রেলপথেই বিদ্যুৎকেন্দ্রে আনা। তা বাস্তবায়িত করতে কাজ চলছে।”
দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎপাদন শুরু হলে আরটিপিএসের মোট উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২৫২০ মেগাওয়াট। ডিভিসির বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির মধ্যে উৎপাদনের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসবে আরটিপিএস।
বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রের খবর, বর্তমানে দৈনিক চাহিদার ১৪-১৫ হাজার টন কয়লার মধ্যে ৮-৯ হাজার টন কয়লা আসে রেলপথে। বাকিটা সড়কপথে আনা হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎপাদন শুরু হলে সেই চাহিদা ছোঁবে দৈনিক ৩০-৩২ হাজার টনে।
প্রকল্প অধিকর্তা বলেন, “তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম শর্তই হচ্ছে কয়লা। তাই অন্তত কুড়ি দিনের কয়লা মজুত রাখতে হয়। বর্তমানে প্রায় তিন লক্ষ টন কয়লা মজুত রয়েছে। উৎপাদন বাড়লে স্বভাবতই দ্বিগুণ পরিমাণ কয়লা মজুত রাখতে হবে।”
বিপুল পরিমাণ কয়লা কেন্দ্রে আনতে তাই রেলপথকে গুরুত্ব দিতে চাইছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্র সূত্রে খবর, ছ’শো কোটি টাকা ব্যয়ে তিন পর্যায়ের রেললাইন তৈরি করা হচ্ছে। কেন্দ্রের এক আধিকারিক জানান, বর্তমানে দৈনিক গড়ে আড়াইখানা মালগাড়ি কয়লা নিয়ে আসছে। উৎপাদন বাড়লে বাড়াতে হবে রেলপথের সংখ্যা। রেললাইনের পাশাপাশি সড়কপথও তৈরি করা হচ্ছে। তার জন্য কমবেশি সাড়ে তিনশো একরের মতো জমি প্রয়োজন। এর আগে জমি অধিগ্রহণে বারেবারেই সমস্যায় পড়তে হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। ক্ষতিপূরণ, কর্মসংস্থানের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে বহু বার। যার জন্য রেললাইন পাতার কাজে বিঘ্ন ঘটেছে। বর্তমানে অবশ্য সে সব সমস্যা অনেকটাই মিটেছে।
ডিভিসি সূত্রে খবর, রেলপথ তৈরিতে ইতিমধ্যে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। মোট ৫৫ কিলোমিটারের রেলপথ তৈরি করা হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের আদ্রা-আসানসোল শাখার জয়চণ্ডীপাহাড় ও বেড়ো—এই দুই স্টেশনে ‘সাইডিং’ তৈরি করা হচ্ছে। ওই দুই স্টেশন থেকেই কয়লা বোঝাই মালগাড়ি আসবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। ডিভিসি সূত্রের খবর, প্রথম পর্যায়ে দু’ধাপে কাজ হবে। ১(এ) পরিকল্পনায় জয়চণ্ডীপাহাড় স্টেশন থেকে সরাসরি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আসার রেলপথ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। ওই লাইনে মালগাড়ি চলতেও শুরু করেছে। অন্য দিকে, ১(বি) পরিকল্পনায় বেড়ো স্টেশন থেকে অন্য একটি লাইন বেরিয়ে চিনপিনা হয়ে পৌঁছবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। তার জন্য খাজুরায় ক্রসিং ইয়ার্ড তৈরি হচ্ছে, যেখানে প্রয়োজনে একত্রে ছ’টি মালগাড়িকে দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে। এ ছাড়া, জয়চণ্ডীপাহাড় স্টেশন থেকে বেড়ো স্টেশন পর্যন্ত রেলের নিজস্ব লাইনের পাশে দু’টি রেললাইন পাতছে ডিভিসি। এতে রেলের লাইন ট্রেন চলাচলে ব্যস্ত থাকলেও ডিভিসির নিজস্ব লাইন দিয়ে কয়লা আনতে সমস্যা হবে না।
এর সঙ্গে চলছে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজও। সেখানে জয়চণ্ডীপাহাড় থেকে বেরিয়ে গোঁসাইডাঙা গ্রাম ঘুরে রেললাইন ঢুকছে চিনপিনাতে। অন্য দিকে, বেড়ো স্টেশন থেকে লাইন বেরিয়ে কাশীতোড়া, ইসরাডাঙা হয়ে চিনপিনায় মিশছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক আধিকারিক জানান, ৫৫ কিলোমিটার রেললাইনে মোট ৯টি বড় মাপের সেতু তৈরি হচ্ছে। ছোট সেতু হবে ৪৩টি। এর সঙ্গে পুরুলিয়া-বরাকরের মতো ব্যস্ততম রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে রেললাইন যাওয়ায় ওই এলাকায় ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে উড়ালপুলও তৈরি করছে ডিভিসি। বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যেই রেলপথ তৈরির কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।” তবে এ ধরনের কাজে নানা সমস্যা তৈরি হয়। তা মাথায় রেখে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে আশাবাদী ডিভিসি কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy