দুই শিশুকন্যা তাঁদের। এক জনের বয়স ছয়। অন্য জনের দুই। কী হবে তাদের ভবিষ্যৎ? কি ভাবে বড় করবেন তাদের? এ প্রশ্নেই দিশাহারা এসএসসি চাকরি বাতিলের তালিকায় নাম থাকা শিক্ষক দম্পতি সুদীপ মণ্ডল ও নবনীতা মণ্ডল।
লাভপুর ব্লকের ভালাস উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক সুদীপ। তাঁর স্ত্রী নবনীতা নদিয়ার সাহেবনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষিকা। ২০১৬ সালের এসএসসিতে নিয়োগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন দু’জনেই। দু’জনেরই চাকরি গিয়েছে।
সুদীপের বাড়ি কীর্ণহারের কাছে একটি গ্রামে। শ্বশুরবাড়ি কৃষ্ণনগরে। চাকরির জন্য দুই সন্তানকে নিয়ে নবনীতাকে বাপের বাড়িতে থাকতে হয়। সবই মসৃণ ভাবেই চলছিল। দু’টি চাকরি। সাজানো গোছানো সংসার। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় গোটা প্যানেল বাতিল সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশের পরে সব বদলে গিয়েছে। কিছুটা মনের জোর ধরে রাখার চেষ্টা করছেন সুদীপ। নবনীতা চূড়ান্ত হতাশ।
অথচ এমনটা হওয়ার ছিল না। জানা গিয়েছে, বরাবর পড়াশোনায় ভাল সুদীপ ‘জয়েন্ট অ্যাডমিশন টেস্ট ফর মাস্টার্স’ (জ্যাম) দিয়ে দিল্লি আইআইটি থেকে মাস্টার্স করেছেন (২০১১-১৩)। একাদশ, দ্বাদশ, নবম-দশম এবং আপার প্রাইমারি সব ক’টি পরীক্ষায় কোয়ালিফাই করেছিলেন। ১৮ সালের সেপ্টেম্বরে রায়গঞ্জের একটি স্কুলে যোগ গিয়েছিলেন। কিন্তু দাড়িভিটের ঘটনার পর ওই স্কুলে শূন্যপদ নিয়ে একটি সমস্যার জেরে, নবম-দশমের শিক্ষক হিসেবে বীরভূমের স্কুলে যোগ দেন।
অন্য দিকে, কৃষ্ণনগর গভর্মেন্ট কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স করেছিলেন নবনীতা। স্নাতকের পরীক্ষায় কলেজ টপার। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ। তারপর বিএড। এবং এএলএসসি দিয়ে নদিয়ার স্কুলেই চাকরিতে যোগ।
সুদীপ বলেন, ‘‘তিন তিন বার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছি। আমার ভুল হল। এখন মনে হচ্ছে আপার প্রাইমারিতে চলে গেলেই হয়তো ভাল হত। এ দিন দেখতে হত না। আমাদের দুই সন্তানকে নিয়ে আমরা এখন কোথায় যাব।’’ সুদীপের সংযোজন, ‘‘অযোগ্যদের সঙ্গে আমাদেরও যে এক বন্ধনীতে বসিয়ে দেবে স্বপ্নেও ভাবিনি। অসম্ভব মানসিক যন্ত্রণা হচ্ছে। আমার স্ত্রী পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন।’’
ভৌতবিজ্ঞানের এক শিক্ষক অঙ্ক করালেও, ভালাস উচ্চ বিদ্যালয়ে সুদীপ চলে যাওয়ার পরে কার্যত গণিতের শিক্ষক থাকলেন না। যা স্কুলের প্রায় ৮০০ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য সমস্যার। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌরভ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে ছেলেটি দিল্লি আইআইটি থেকে মাস্টার্স করে এসেছেন, তিন বার চাকরি পেয়েছেন, তাঁর যোগ্যাতা নিয়ে কি প্রশ্ন করা সাজে? স্কুলকে সব সময় সাহায্য করেছেন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)