টুসু ভাসান। বিষ্ণুপুরের যমুনাবাঁধে। ছবি: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভ্র মিত্র
কুয়াশা ঘেরা মেঘলা সকাল। পুলিশকর্মীরা আবেদন করে চলেছেন—‘‘কেউ ভিড় করবেন না। চৌডল ভাসান, ফাঁকায় স্নান সারুন। মাস্ক পরুন।’’ আবেদনই সার। হাজার হাজার লোকের ভিড়ে কে শোনে কার কথা! কেউ থুতনিতে মাস্ক আটকালেও, কেউ কেউ সে সবের ধার ধারেননি। দু’-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া, পুরুলিয়া জেলার নানা প্রান্তে করোনা-বিধি ‘উড়িয়ে’ টুসু গানের আবহে দিব্যি চলছে স্নান, চৌডল ভাসানো।
ঝালদার তুলিনের সুবর্ণরেখা তীরের টুসু মেলা। একেবারে ঝাড়খণ্ড সীমানা ঘেঁষা বলে সুবর্ণরেখার এ পাড়ের খেড়ুয়ারি, বনডি, চৌপদ, তুলিন, কুকি বা ও পাড়ের লাগাম, মাড়দু, সিল্লি, বিসরিয়া-সহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষজন মেলায় ভিড় জমান। পুলিশি নজরদারিতে দোকানপাট বা পসরা না বসলেও মানুষের ঢল আটকানো যায়নি। কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে কাতারে কাতারে মানুষ এসেছেন নদীতীরে। স্নান সেরে আগুন পোহানোর ছবিও দেখা গিয়েছে। পুলিশের কড়া শাসনের মধ্যেও, স্নানের আগে-পরে আড্ডার আসরও বসেছে ইতিউতি। মাস্ক ছিল না বেশির ভাগের মুখে। মাস্ক নেই কেন? নতুনডি গ্রামের রবি মাহাতোর জবাব, “আছে। পরা হয়নি। এখনই পরব।” ভিড়ে মাস্ক নামিয়ে চলেছে নিজস্বী তোলাও।
পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে, কাঁসাই মেলার ছবিটা ছিল অবশ্য আলাদা। দোকানপাট নেই। অনুষ্ঠানের মঞ্চ নেই। গানের আখড়া নেই। নেই নদীতটে জমিয়ে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনও। ফাঁকা নদীতীরের দু’পাশে চলছে পুলিশি নজরদারি। তবে পুণ্যস্নান বা চৌডল ভাসানোয় কোনও বাধা ছিল না। একেবারে জাতীয় সড়ক লাগোয়া মেলা হওয়ায় রাস্তায় ব্যারিকেডের ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) আশিস রায় বাহিনী নিয়ে সকাল থেকে ঘটনাস্থলে ছিলেন। তিনি বলেন, “মেলা কমিটি ও স্থানীয় মানুষজনকে নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। আগে থেকে প্রচার চলছে। মেলা বসতে দেওয়া হয়নি। মানুষ দূরত্ববিধি মেনে যাতে স্নান সেরে ফিরে যেতে পারেন, তা আমরা দেখছি।”
সুবর্ণরেখার মতো না হলেও থিকথিকে ভিড় দেখা গিয়েছে কংসাবতী তীরের দেউলবেড়াতেও। আড়শা ও পুরুলিয়া ১ ব্লকের কয়েকটি গ্রামের সম্মিলিত উদ্যোগে ফি বছর এখানে মেলা বসে। এ দিনও ভোর থেকে হাজার হাজার মানুষ চৌডল নিয়ে নদীঘাটে ভিড় জমিয়েছিলেন। মাস্কের বালাই প্রায় ছিল না। পসরাও সাজিয়েছিলেন দোকানিরা। মেলার উদ্যোক্তাদের তরফে জানানো হয়েছে, টুসু (চৌডল) প্রতিযোগিতা, ছৌ, ঝুমুর, বসে আঁকা-সহ সমস্ত কর্মসূচিই বাতিল করা হয়েছে। পুণ্যস্নান, পুজো ও টুসু বিসর্জনে বাধা দেওয়া হয়নি। মাস্কও বিলি করা হয়েছে।
ভিড় তেমন দেখা যায়নি বান্দোয়ানের দুয়ারসিনি মেলায়। ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া হওয়ায় এ মেলাতেও ও রাজ্যের মানুষজনও ভিড় জমান। তবে সকাল থেকে অঝোরে বৃষ্টি নামায় লোকজনের সমাগম তেমন হয়নি। পাশাপাশি, মেলায় ঢোকার সব রাস্তায় পুলিশি নজরদারি থাকায় মাস্ক ছাড়া লোকজনকে মেলামুখো হতে দেওয়া হয়নি। এর মধ্য়েই মাস্ক নামিয়ে চলেছে গল্প-গুজব, নিজস্বী তোলা। তবে বান্দোয়ানের যমুনা সেতু বা হুড়ার শিলাই মেলায় তেমন লোকজন দেখা যায়নি। বুধপুরে কংসাবতী ঘাটে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যেই স্নান-পুজো সেরেছেন লোকজন। মানবাজারের দোলাডাঙা বা হাতিপাথরেও তেমন লোকজনের দেখা মেলেনি।
খারাপ আবহাওয়ায় মকর স্নানে সে ভাবে ভিড় না হলেও বাঁকুড়ার কিছু জায়গায় টুসু ভাসান ঘিরে করোনা-বিধি ভাঙার ছবি চোখে পড়েছে। ভোর থেকে বিষ্ণুপুরে পোকাবাঁধের পাড়, বায়েনকোঁদা পাড়, যমুনাবাঁধের পাড়ে ভিড় জমান কয়েক হাজার মানুষ। পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাউড়িপাড়া, বাগদীপাড়া, মাধবগঞ্জ থেকে মানুষ দলে দলে ডিজে বাজিয়ে টুসু ভাসানে শামিল হন। প্রায় কারও মুখে মাস্ক ছিল না। মানা হয়নি দূরত্ববিধি। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, যমুনাবাঁধ এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পুলিশি তৎপরতাও চোখে পড়েনি। বিষ্ণুপুরের সত্যপীরতলায় বালকভোজনে বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। লালবাঁধ, কৃষ্ণবাঁধেও ভিড় করেন অনেকে। দ্বারকেশ্বরে কোনও কোনও ঘাটে পুণ্যার্থীদের ভিড় চোখে পড়েছে।
করোনা-আবহে খাতড়ার পরকুল ও রানিবাঁধের পরেশনাথে এ বারে জমায়েত না করতে পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল। সেই মতো এ দিন ওই দুই জায়গা ছিল মোটের উপরে ফাঁকা। ভোর থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় স্নানের ঘাটগুলিও ফাঁকা ছিল। কিছু লোকজন পুণ্যস্নানে যোগ দিলেও মুখে মাস্ক ছিল না। পুলিশের তরফে যদিও দূরত্ববিধি বজায় রাখা ও মাস্ক ব্যবহার করা নিয়ে লাগাতার প্রচার চলেছে। রানিবাঁধের পরেশনাথ মেলা কমিটির সদস্য চিত্তরঞ্জন মাহাতো বলেন, “করোনা-পরিস্থিতিতে পরেশনাথে মকরের মেলায় জমায়েত না করতে আগাম প্রচার করা হয়েছিল। সেই মতো ভিড় জমেনি এ দিন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy