‘চাকরি চুরি’র প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে একের পর এক বেলাগাম মন্তব্য শোনা গেল বিজেপি বিধায়ক থেকে শুরু করে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর গলায়। ‘চাকরি চুরি’র সঙ্গে যুক্তদের কেউ আছড়ে মারার কথা বললেন তো, কেউ আবার প্রকাশ্যে জামাকাপড় খুলে জলবিছুতি দিয়ে চাবুক মারার নিদান দিলেন। শনিবার বাঁকুড়ার একের পর এক বিজেপি নেতার এমন বক্তব্যকে ঘিরে ফের সমালোচনার ঝড় উঠল রাজনৈতিক মহলে।
মুর্শিদাবাদে অশান্তি ও রাজ্যে ‘চাকরি চুরি’র প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার বাঁকুড়া শহরে প্রতিবাদ মিছিল ও মিছিল শেষে সভার ডাক দেয় বিজেপি। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার ছাড়াও এই মিছিল সভায় উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়ার বিধায়ক নিলাদ্রীশেখর দানা, শালতোড়ার বিধায়ক চন্দনা বাউরি ও ছাতনার বিধায়ক সত্যনারায়ন মুখোপাধ্যায়। বাঁকুড়ার হিন্দু হাই স্কুল ময়দান থেকে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল করে মাচানতলার আকাশমুক্ত মঞ্চে জমায়েত করেন। সেখানেই প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা করতে উঠে একের পর এক বিজেপি নেতা বেলাগাম মন্তব্য করতে শুরু করেন। বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নিলাদ্রীশেখর বলেন, ‘‘চাকরিহারাদের বলছি, আপনারা রাস্তায় নামুন। আপনাদের কাছ থেকে কে কে টাকা নিয়েছে আমাকে জানাবেন। তাঁদের কলার ধরে বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে এসে এই আকাশমুক্ত মঞ্চে তাদের আছড়ে মারতে হবে।’’ পরে নিলাদ্রীশেখর দানার বক্তব্য, ‘‘চাকরির জন্য অনেকে অনেক কষ্ট করে টাকা দিয়েছেন। কেউ মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো টাকা আবার কেউ নিজের শেষ সম্বল জমি বিক্রি করে চাকরির জন্য টাকা দিয়েছেন। যাদের এই টাকা দিয়েছেন তাঁদের নাম আমাদের কাছে গোপনে জানালে আমরা সেই দেওয়া টাকা আদায় করে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।’’
সুভাষ বলেন, ‘‘যাঁরা যোগ্য অথচ চাকরি হারিয়েছেন, তাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব। আর যাঁরা অযোগ্য অথচ তৃণমূলের দালালদের টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁরাও চুপিচুপি আমাদের সঙ্গে দেখা করুন। আপনার টাকা আদায়ের জন্য পূর্ণ সহযোগিতা করব আমরা। দরকার হলে তৃণমূলের সেই সব দালালদের আকাশমুক্ত মঞ্চে দাঁড় করিয়ে জামাকাপড় খুলে জলবিছুতি দিয়ে চাবুক লাগানো হবে।’’
বিধায়ক ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে তৃনমূল। বাঁকুড়ার সাংসদ তথা তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যাঁরা টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছিলেন, তাঁরা এখন সবাই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির নেতা হয়েছেন। বিষ্ণুপুর, সোনামুখী ও পাত্রসায়ের এমন উদাহরণ আছে। আগে তাঁদের কাছ থেকে দেওয়া টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করুক বিজেপি। ইতিমধ্যেই চাকরিহারা শিক্ষকদের কাজে যোগ দিতে বলেছে আদালত, তাঁরা বেতনও পাবেন । শিক্ষকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, অন্যদের কথায় আপনারা বিপথে চালিত হবেন না।’’