লাঠি হাতে ঘুরছেন মহিলারা। বামুনডিহা গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।
চোলাইয়ের নেশা থেকে প্রিয়জনদের বাঁচাতে প্রমীলা বাহিনী সক্রিয়। পুরুলিয়া ১ ব্লকের গাড়াফুসড়, কাঁটাবেড়া, পটমপুটরা গ্রামের মহিলাদের আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল কংসাবতী নদীর ওপারের আড়শা ব্লকের বামুনডিহা গ্রামেও।
মঙ্গলবার বামুনডিহা গ্রামের মেলায় চোলাই বিক্রি রুখতে ও মত্তদের উপদ্রব ঠেকাতে লাঠি হাতে পাহারা দিলেন স্বনির্ভর দলের মহিলারা। এর আগে গাড়াফুসড়, কাঁটাবেড়া, পটমপুটরা গ্রামের মহিলারা এলাকায় চোলাই বিক্রি বন্ধ করতে মিছিল করেছেন, বুড়িবাঁদনা মেলায় গিয়ে চোলাই নষ্টও করেছেন। অনেকের মতে, ঘরের লক্ষ্মীদের এই রণংদেহী মূর্তিই একদিন এলাকাকে নেশামুক্ত করবে।
ধান কাটার মরসুমে বামুনডিহা গ্রামে এক দিনের মেলা বসে। মোরগ লড়াই, কাড়ার লড়াই চলে। অভিযোগ, মেলায় নানা দোকানপাটের সঙ্গে চোলাইয়ের বেচাকেনাও চলে। মত্তদের উপদ্রবে মহিলারাও মেলায় এসে অস্বস্তিতে পড়েন।
মঙ্গলবার মেলা শুরুর পরে প্রকাশ্যে মদ বিক্রির খবর কানে আসতেই রে রে করে তেড়ে আসেন একাধিক স্বনির্ভর দলের মহিলারা। সে সময় কেউ ঘরে রান্নাবান্না করছিলেন, কেউ বা আগের দিনের বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া ধানগাছ শুকোনোর জন্য জমির আলে তুলে রাখছিলেন। তাঁরা কাজ ফেলে মেলার মাঠে জড়ো হন। প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে কয়েকজন মদ বিক্রেতার হুমকির মুখেও তাঁদের পড়তে হয়। তবু তাঁরা পিছু হটেননি। প্রতিবাদী নিয়তি লায়া, নেপুরা সর্দার, ভাদু মাহাতোরা বলেন, ‘‘মেলা মানে গ্রামীণ সংস্কৃতির আসর হওয়ার কথা। মেলায় আসা মানুষজন নিশ্চয় আনন্দ করবেন। কিন্তু সেখানে মদ বিক্রি করতে দেওয়া হবে না।’’ তাঁরা জানান, মেলায় বেশ কয়েকটি চোলাইয়ের আসর বন্ধ করা গিয়েছে। মেলার উদ্যোক্তাদের দাবি, তাঁরা চোলাই বিক্রি করতে উৎসাহ দেননি। তবে খোলা মাঠে কে, কোথায়, কী বিক্রি করছেন তা নজর রাখা সম্ভব নয়।
কংসাবতী নদীর দু’পারের দশটি গ্রামের মানুষ সম্মিলিত ভাবে মকর সংক্রান্তিতে দেউলবেড়া প্রত্নস্থলে একদিনের মেলার আয়োজন করেন। সেখানে মাদক নিষিদ্ধ বলে উদ্যোক্তারা ঘোষণাও করেন। ওই মেলা কমিটির সম্পাদক চিত্তরঞ্জন মাহাতো বলেন, ‘‘বামুনডিহা গ্রামের মহিলাদের চোলাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে কুর্নিশ জানাই। আমরা তাঁদের পাশে রয়েছি।’’
আড়শার বাসিন্দা তথা আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি উজ্জ্বল কুমার বলেন, ‘‘মানকিয়ারি পঞ্চায়েতের চিটিডি গ্রামের মানুষজন ইতিপূর্বে সম্মিলিত ভাবে গ্রামে মদ্যপান বন্ধের ঘোষণা করেছেন।গ্রামে মাতলামি করলে জরিমানার নিদানও রয়েছে। বামুনডিহা গ্রামের মহিলাদের আন্দোলনে পাশে আমরাও আছি।’’
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো বলেন, ‘‘নারীশক্তি এ ভাবে সমাজ সংস্কারে এগিয়ে এলে অনেক কাজই সহজ হয়ে যায়। এ দিন মেলায় মদ বিক্রির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া মহিলাদের সাধুবাদ জানাচ্ছি। যে কোনও সমস্যায় আমি তাঁদের পাশে রয়েছি।’’
মেলায় এ দিন নিয়ম ভেঙে কাড়া লড়াইয়ের আসর বসেছিল। উদ্যোক্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, কাড়া লড়াইয়ের আসরে অনেক মানুষের ভিড় জমলেও সমস্যা হয়নি। নির্বিঘ্নেই লড়াই হয়েছে। কাড়া লড়াই মানভূমের গ্রামীণ সংস্কৃতির অঙ্গ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy