দায়: পেট চালাতে স্কুল ছেড়ে কাজ করছে শিশুরা। সোমবার, শিশু দিবসে নলহাটি, মুরারইয়ের নানা এলাকায় দেখা গেল এমন ছবি। নিজস্ব চিত্র
অতিমারির ধাক্কায় যে স্কুলছুট বেড়েছে তা আগে বহু সমীক্ষায় ধরা পড়েছে। জেলায় তার প্রমাণ আবার মিলল। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শিশু শ্রমিকের ছবি দেখা গেল শিশু দিবসের দিন।
সোমবার পাইকর, কুশমোড়, চাতরা, নলহাটি, মুরারইয়ের বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টির দোকান, হোটেল, সাইকেল ও মোটর বাইকের গ্যারাজ ছাড়াও বিভিন্ন দোকানে কাজ করতে দেখা গেল কমবয়সীদের। তাদের কেউ ষষ্ঠ শ্রেণির, আবার কেউ অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
কাজ করতে করতেই অনেকে জানাল, লকডাউনের পরে আর স্কুল যায়নি। তবে কাগজ কলমে নাম রয়েছে স্কুলে। ছুটি নিয়ে মাসে এক-দু’দিন স্কুলেও যায় অনেকে। আবার অনেকে স্কুলমুখী হয় না। দিন গেলে কেউ পঞ্চাশ আবার কেউ একশো টাকা রোজগার করছে। দু’বছরের ‘অভিজ্ঞতায়’ মজুরি বেড়েছে।
দু-একজন বলে ফেলল, ‘‘পড়াশোনা করে পেটের ভাত জোগাড় হয় না বলেই কাজ করছি। অভাবের সংসারে পাঁচ টাকা দিয়ে কেউ সাহায্য করে না। শিশু দিবস কী জানি না। শিশু শ্রমিকের বিষয় জানা নেই। শুধু একটি জিনিস বুঝেছি সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত কাজ করে টাকা উপার্জন করতে হবে। সেই টাকা বাড়ি নিয়ে গেলে মায়ের মুখে হাসি ফোটে। আর পরের দিনের খাবারের জোগাড় হয়।’’
পাইকরের একটি মোটর বাইক গ্যারেজে কাজ করতে করতেই অষ্টম শ্রেণির ছাত্র জনি মণ্ডল জানাল, ‘‘লকডাউনের সময় এক বেলা খেয়ে থাকতে হয়েছে পরিবারকে। বাবার মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। দুই বোন আর মা নিয়ে পরিবার। বাধ্য হয়ে দিন কুড়ি টাকায় গ্যারাজে কাজে ঢুকেছিলাম। তাতে কোনও রকমে চলত। এখন দেড়শো টাকা প্রত্যেকদিন রোজগার করছি। স্কুলে গেলে পরিবার খেতে পাবে না।’’
কুশমোড় গ্রামে গিয়ে দেখা গেল একটি টোটো গ্যারাজে তিন শিশুশ্রমিক কাজ করছে। স্কুল ছেড়ে কেন কাজ করছে সেই প্রশ্নের উত্তরে তারা জানাল, ‘‘দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকায় আর স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে না। কাজ করে রোজগার করছি।’’ দু’জন অষ্টম ও একজন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। স্কুলের শিক্ষকেরা বাড়িতে বা তাদের কাছে স্কুলে যাওয়ার কথাও বলেননি বলে জানাল তারা। চাতরার একটি সাইকেলের গ্যারাজে দেখা গেল দুই শিশু শ্রমিককে। প্রশ্ন করতেই সাইকেল দোকানের মালিক বলে উঠলেন, ‘‘এরা শিশু শ্রমিক নয়। আমার আত্মীয়। মাঝে মধ্যে দোকানে আসে।’’ তড়িঘড়ি তাদের দোকান থেকে সরিয়ে দেন তিনি।
মুরারইয়ের এক হোটেলে এসেও দেখা যায় একই ছবি। বেশ কয়েকজন শিশু শ্রমিক দোকানের বিভিন্ন কাজ করছে। তাদের মধ্যে এক জন, জামিরুল শেখ বলল, ‘‘অভাবের সংসারে বড় দিদির বিয়ে হয়েছিল। অভাবের জন্য দিদির শ্বশুর বাড়ি থেকে চলে আসে। পরে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিল। ছোট বোনের ভাল বাড়িতে বিয়ে দেব বলে হোটেলে কাজ করছি।’’
এক ছাত্রী, তনুশ্রী রাজবংশী বিড়ি বাঁধতে বাঁধতে বলল, ‘‘বাবা বছর দশেক ধরে নিরুদ্দেশ। মা বিড়ি বেঁধে সংসার চালাতেন। লকডাউনের পরে আর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হইনি। পড়াশোনা ছেড়ে বিড়ি বেঁধে মাকে সাহায্য করছি।’’
অতিমারির পরে এমন অনেকেই শিশু শ্রমিকের ভবিষ্যৎ বেছে নিয়েছে বলে কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষকও। তাঁরা জানান, দুঃস্থ এলাকা হওয়ায় অষ্টম শ্রেণির পরেই অনেকে কাজে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন দোকানে। আর দশম, একাদশ শ্রেণীর ছাত্ররা ভিন রাজ্যে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে ও ইটভাটায় কাজ করতে চলে যাচ্ছে।
শ্রম দফতরে ডেপুটি লেবার কমিশনার শান্তনু সেন বলেন, ‘‘চাইল্ড লাইনের পক্ষ থেকে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। ফ্যাক্টরি, বড় হোটেল, রেস্তরাঁয় অভিযান চালানো হয়ে থাকে। ১০৯৮-এ ফোন করলে দফতরের আধিকারিকেরা অভিযানে যায়। তবে শিশু শ্রমিকের বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy