নতুন জেলা প্রাপ্তির খুশিতে ছোটরা। বিষ্ণুপুরে সোমবার। ছবি: শুভ্র মিত্র
বাঁকুড়া ভেঙে পৃথক বিষ্ণুপুর জেলা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই জেলার আবেগও যেন দু’ভাগ হয়ে গেল। রাজনৈতিক মহল থেকে শিল্পমহল, চায়ের ঠেক থেকে ঘরের অন্দরমহল— সর্বত্র জোর চর্চা শুরু হয়েছে। তুমুল তর্ক-বিতর্ক জমেছে সমাজ-মাধ্যমে।
এ দিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের নতুন সাতটি জেলার সঙ্গে বিষ্ণুপুরের নাম ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিষ্ণুপুর মহকুমা নিয়ে নতুন বিষ্ণুপুর জেলা গঠন করা হবে। তবে নতুন জেলার মানচিত্রে বিষ্ণুপুর, জয়পুর, কোতুলপুর, সোনামুখী, পাত্রসায়র ও ইন্দাস ব্লক ছাড়াও আরও কিছু ব্লক বা আংশিক ভাবে কোনও ব্লক অন্তর্ভুক্ত হবে, তা জানতে উদগ্রীব বাসিন্দারা। তবে এ প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি জেলা প্রশাসনের কাছেও। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “বিষ্ণুপুরকে নতুন জেলা হিসেবে গড়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। তবে এ নিয়ে রাজ্য থেকে এখনও কোনও নির্দেশিকা আমরা পাইনি। নতুন জেলার রূপরেখা কী হবে, তা রাজ্যই ঠিক করবে। এ নিয়ে জেলায় যেমন নির্দেশ আসবে, সেই মোতাবেক পদক্ষেপ করা হবে।”
উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে বিষ্ণুপুর মহকুমার ছয় ব্লক ও দুই পুরএলাকার বাসিন্দাদের একাংশের মধ্যে। কিছু জায়গায় মিষ্টি বিলি করা হয়। জেলা ভাগের স্বপক্ষে যাঁরা তাঁদের দাবি, এক ফলে বাঁকুড়া জেলা সদরের দূরবর্তী ব্লকগুলির মধ্যে অন্যতম ইন্দাস, পাত্রসায়রের বাসিন্দাদের প্রভূত উপকার হবে। কোতুলপুরের বর্ধমান সীমানা ঘেঁষা ননগরের বাসিন্দা তথা সাহিত্যকর্মী লক্ষ্মীকান্ত পাল বলেন, ‘‘প্রশাসনিক কাজে ৭৩ কিলোমিটার দূরে বাঁকুড়ায় বাসে যেতে সারা দিন কেটে যায়। সেখানে মাত্র ৪০ কিলোমিটার গেলেই বিষ্ণুপুরে পৌঁছে যাই।’’ বিষ্ণুপুর মহকুমার প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশের মতে, দূরবর্তী এলাকায় তাদের নজরদারি বাড়বে। দূরের এলাকায় আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হলে সদর থেকে দ্রুত পুলিশ গিয়ে পদক্ষেপ করতে পারবে।
আবার অন্যপক্ষের দাবি, মহকুমা সদরকে জেলা সদরে রূপান্তরিত করতে গেলে যে পরিকাঠামোর প্রয়োজন, তা গড়ে তোলা সময় সাপেক্ষ। জেলা আদালত, জেলা শিক্ষা দফতর, পুলিশ লাইন, কর্মী আবাসন থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর তৈরি করতে অনেক ভবন ও জমির প্রয়োজন। কিন্তু শহরে সে ভাবে এক লপ্তে অনেকখানি সরকারি জমি পাওয়াও সহজলভ্য নয়। আধিকারিক ও কর্মীর সংখ্যাও বাড়াতে হবে।
শিল্পীমহলও দ্বিধাবিভক্ত। বিষ্ণুপুরের রামশরণ সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুজিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রাচীন ঐতিহ্যের শহর বিষ্ণুপুরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিষ্ণুপুরকে দেখেই মানুষ বাঁকুড়াকে চেনে। পৃথক জেলা হলে বিষ্ণুপুরের সম্মান বাড়বে।’’ আবার বাঁকুড়া শিল্পী সংস্কৃতি কর্মী ও বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সম্পাদক মধুসূদন দরিপার দাবি, “জেলা ভাগের খবর শুনেই বাঁকুড়ার সংস্কৃতি মহল হতাশ হয়েছে। বিষ্ণুপুর বাঁকুড়ার গর্ব। বিষ্ণুপুর বাঁকুড়ার অঙ্গ থাকবে না এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। জেলার আবেগ যেন দু’ভাগ হয়ে যাচ্ছে।’’
যদিও জেলা ভাগের এই ঘোষণায় তৃণমূলের রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য তোলপাড়। সেই বিতর্কের অভিমুখ ঘোরাতে জেলা ভাগের সিদ্ধান্ত বলে দাবি বিরোধীদের। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিল্লেশ্বর সিংহ বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির পর্দাফাঁস হওয়ায় বিতর্ক থেকে নজর ঘোরাতেই মুখ্যমন্ত্রী জেলা ভাগের অবাস্তব ঘোষণা করেছেন। পরিকাঠামো তৈরি করে আলাদা জেলা করার কথা ঘোষণা করলে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকত।” বাঁকুড়া জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দেবু চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, বিষ্ণুপুরের মতো প্রাচীন শহরে জেলা সদরের কার্যালয় তৈরি করার মতো জায়গা কোথায়? মানুষের নজর ঘোরানোর কৌশল। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “বিষ্ণুপুরে পৃথক জেলা গড়ার দাবি কেউ কখনও তুলেছেন বলে শুনিনি। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল, এটাই বড় প্রশ্ন।” তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুপুর মহকুমাবাসীর ভাবাবেগকে গুরুত্ব দিয়েই নতুন জেলার ঘোষণা করেছেন। এতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সুবিধা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy