Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
cow

থানা জুড়ে ‘হাম্বা’, ‘হাম্বা’, ‘হাম্বা’... দেড়শো গরুমোষ বাঁধা পুরুলিয়ার হুড়া থানায়, কাজ ছুটেছে পুলিশকর্তাদের

সিভিক ভলান্টিয়াররা ব্যস্ত গো-পরিচর্যায়। সুদর্শনের মতো থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে অবাক হচ্ছেন আরও অনেকে। কেউ কেউ বাড়ি যাওয়ার আগে টিপ্পনী কেটে বলছেন, ‘‘থানা নাকি গোয়াল!’’

থানা প্রাঙ্গণে গাছে বাঁধা রয়েছে একের পর এক মহিষ।

থানা প্রাঙ্গণে গাছে বাঁধা রয়েছে একের পর এক মহিষ। —নিজস্ব চিত্র।

সমীরণ পাণ্ডে
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২২ ১৭:০৬
Share: Save:

বাসযাত্রার সময় দরকারি কাগজপত্র হারিয়ে ফেলেছিলেন এক সুদর্শন মাহাতো। কাছেই ছিল পুরুলিয়ার হুড়া থানা। বিসপুরিয়া মোড় থেকে থানায় ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ কোথায় এলেন! চার দিকে খালি ‘হাম্বা’ ‘হাম্বা’ রব। ঝটকা খেয়ে থানার ভিতরে ঢুকে আবার ঠোক্কর। দেখলেন কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক প্রচণ্ড ব্যস্ত। অগত্যা মহিলা পুলিশ কর্মী মোতায়েন থাকা অনুসন্ধান কেন্দ্রের কাছে অপেক্ষা করছিলেন সুদর্শণ। কিন্তু থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে গরু-মোষের সমস্বর রবে তিতিবিরিক্ত হয়ে গেলেন যুবক। ব্যাপারটা কী? কৌতূহল মনে পায়ে পায়ে থানায় গিয়ে যা জানলেন, তাতে বিস্ময়ে কাগজ হারানোর কথা ভুলে যাওয়ার জোগাড় হল সুদর্শনের।

উচ্চ স্বরে ‘হাম্বা’, ‘হাম্বা’ ডাক শুনে পায়ে পায়ে থানার পশ্চিমে এগিয়ে গিয়েছিলেন সুদর্শন। দেখলেন গাছগুলিতে সারি করে বেঁধে রাখা হয়েছে গরু এবং মোষ। পূর্ণবয়স্ক গরু থেকে বাছুর— সবাই এক সঙ্গে ডাকছে। ব্যাপারটা কী? জানতে গিয়ে এক পুলিশ কর্মীর কাছ থেকে সুদর্শন শুনলেন শ’দেড়েক গবাদি পশুর সমাগম হয়েছে হুড়া থানায়। তাদের ডাকে সবসময় ‘মুখরিত’ থানা।

আসলে হুড়া থানা এলাকায় ২৩টি গরু ও মহিষ বোঝাই গাড়ি আটকেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। অভিযোগ ওই গবাদি পশুগুলো পাচার হচ্ছিল। আটকে রাখা হয় বেশ কয়েক জনকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। তার পর পাচারে জড়িত অভিযোগে ৩৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার তাঁদের পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক ৫ জনকে ১০ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। বাকি ২৮ জনকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, ওই গাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া গরু-মহিষের আশ্রয়স্থান এখন হুড়া থানা।

সুদর্শনকে ওই পুলিশ কর্মী খানিক বিরক্তির সুরে বললেন, ‘‘এখন এই কাজই করতে হচ্ছে। অপরাধদমন বাদ দিয়ে কিনা গো-পালন!’’ এদিকে সিভিক ভলান্টিয়াররা ব্যস্ত গো-পরিচর্যায়। সুদর্শনের মতো থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে অবাক হচ্ছেন আরও অনেকে। কেউ কেউ বাড়ি যাওয়ার আগে টিপ্পনী কেটে বলছেন, ‘‘থানা নাকি গোয়াল!’’

হুড়া থানার পুলিশ কর্মীদের হয়েছে ঝকমারি। এত গরু-মহিষের যত্নআত্তি করতে গিয়ে জেরবার তাঁরা। উটকো ঝামেলা হয়েছে গাভী মহিষের দুধ দোহন। সেই দুধ কি পুলিশ কর্তারাই খাচ্ছেন? সুদর্শনের প্রশ্নে এক বার কটমট করে চেয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন পুলিশকর্মী। ওদিকে অবলা প্রাণীগুলোর কোনও হেলদোল নেই। গাছের ছায়ায় বসে নিশ্চিন্তে জাবর কাটছে তারা।

এ নিয়ে পুরুলিয়া জেলার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন বলেন, ‘‘আপাতত পুলিশ কর্মীরাই গরু-মোষগুলোর দেখাশোনা করছেন। পরে এগুলি হস্তান্তর করা হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy