সুকন্যা মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।
সুকন্যা মণ্ডলের জামিনের খবর পেয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন সুকন্যার বাবা, তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীরাও। অনুব্রত নিজেও শীঘ্রই ফিরবেন বলে আশা করছেন তাঁর আত্মীয় ও অনুগামীরা।
গরু পাচার মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে গত বছর থেকে তিহাড় জেলেই রয়েছেন সুকন্যার। বোলপুরের নিচুপট্টি এলাকায় থাকা নীল রঙের দোতলা বাড়ি থেকে শুরু করে গোটা মণ্ডল পরিবারে দুর্গাপুজোর কয়েকটা দিন নেমে এসেছিল বিষণ্ণতা। তবে, এ বছর সেই শারদোৎসবের আগেই ‘ঘরের মেয়ের’ ঘরের ফিরে আসার আশায় রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডলের পরিজন।
২০২২ সালের ১১ অগস্ট গরু পাচার মামলায় অনুব্রতকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল সিবিআই। আসানসোলের জেল হয়ে এখন তিহাড়ে বন্দি অনুব্রত। পরে একই মামলায় ইডি গ্রেফতার করে তাঁর মেয়ে সুকন্যাকেও। তাঁরও ঠাঁই হয় তিহাড়ে। সেখান থেকে বেশ কয়েক বার তিনি জামিনের আবেদন করেছেন। তবে, তা না-মঞ্জুর হয়েছিল। সেই মামলাতেই মঙ্গলবার দিল্লি হাই কোর্ট শর্তসাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর করেছে সুকন্যার। এ দিন সেই আদালতেও অনুব্রতের অনুগামীদের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, অনুব্রতের সঙ্গেই গরু পাচার মামলায় প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের নজরে ছিলেন সুকন্যা। বাবার মতোই সুকন্যার নামেও কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি, ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থ ও বিপুল পরিমাণে জমির হদিস মিলেছে বলে দাবি ইডি-র তদন্তকারীদের। এ নিয়ে একাধিক বার সুকন্যাকে দিল্লিতে তলব করেছিল উডি। বেশ কয়েক বার সেই তলব এড়িয়ে যান সুকন্যা। গত বছর ২৬ এপ্রিল দিল্লিতে ইডির সদর দফতরে হাজিরা দেওয়ার পরে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি ও তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে সুকন্যাকে গ্রেফতার করে ইডি।
দেড় বছর ইডির মামলায় জেলবন্দি থাকার পরে এ দিন বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে সুকন্যার জামিন মঞ্জুর করে দিল্লি হাই কোর্ট। সেই খবর জেলায় এসে পৌঁছতেই খুশির হাওয়া তার পরিবার পরিজনদের মধ্যে। সুকন্যার জেঠু সুব্রত মণ্ডল বলেন, “এই দিনটির অপেক্ষাতেই আমরা ছিলাম। পুজোর আগে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে আসবে, এতে পরিবারের সকলেই খুশি। আশা করছি ভাই কেষ্টও খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে।” একই সুর শোনা গিয়েছে সুকন্যার কাকা প্রিয়ব্রত মণ্ডল মুখে। তিনি বলেন, “দাদার মেয়ে মানে, আমার মেয়ে। প্রতিটি উৎসব অনুষ্ঠানে আমরা এক সঙ্গে আনন্দ হই-হুল্লোড় করতাম। মেয়ে বাড়িতে না থাকায় এত দিন কষ্টের মধ্যেই ছিলাম। ওর জামিনের খবর জেনে খুব ভাল লাগছে। আশা করি, আবার এক সঙ্গে এ বছর আমরা পুজো কাটাব।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “জামিন হল আইনের একটি অধিকার। জামিন পেলেন মানে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলেন, তা নয়। অপরাধের কোনও বিচার কিন্তু এখনও হয়নি।” বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল একই সুরে বলছেন, “জামিন মানেই যে তিনি মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে গেলেন তা নয়। সুতরাং বিচার যতদিন না হচ্ছে, ততদিন এই মামলা চলবে। ফলে এতে তৃণমূলের উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই।”
পাল্টা তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক চক্রান্ত করে অনুব্রত মণ্ডল এবং সুকন্যাকে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছিল। তাঁদের কালিমালিপ্ত করার জন্য। অবশেষে সুকন্যা জামিন হওয়ায় আমরা বিচারব্যবস্থাকে ধন্যবাদ জানাই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, খুব তাড়াতাড়ি অনুব্রতও জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও বীরভূমে ফিরে আসবেন।” অনুব্রত অনুগামী হিসেবে পরিচিত, জেলা পরিষদের প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আব্দুল কেরিম খান বলেন, “এই খুশি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আইনের মাধ্যমে কেষ্টদারও দ্রুত জামিন হবে বলে আমরা আশাবাদী। তিনি আবারও স্বমহিমায় জেলায় ফিরবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy