২০১৬ সালের এসএসসির প্যানেলে চাকরি। তাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাকিদেরমতো চাকরি গিয়েছে বীরভূমের নলহাটির মেহেগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক নিরঞ্জন পালের। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট যদিও নির্দেশ দিয়েছে, এখনও অযোগ্য বলে চিহ্নিত নন যাঁরা, তাঁরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্লাস করাতে পারবেন। তবে এর মধ্যে নতুন করে পরীক্ষায়ও বসতে হবে। নিরঞ্জন যাতে এই ‘লড়াইয়ে’ হেরে না যান, তাই তাঁর পাশে গোটা স্কুল। স্কুলে নিরঞ্জনের থাকা-খাওয়া এবং পড়াশোনার বন্দোবস্ত করেছেন প্রধান শিক্ষক সর্দার ইলিয়াস। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের পাশাপাশি নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করার পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিরঞ্জন।
প্রধানশিক্ষক সর্দার ইলিয়াস বলেন, ‘‘নিরঞ্জন পাল প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার পর হাই স্কুলে পড়াতে এসেছিলেন। উনি যে ভাবে পড়ান, তাতে উনি যোগ্য-অযোগ্য কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলারই প্রশ্ন ওঠে না। তবে ওঁদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে আবার পরীক্ষায় বসতে বলা হয়েছে। এটা আমার কাছেও চ্যালেঞ্জ। একবার উনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যান, তার পরে ওঁকে এখানে আবার ফিরিয়ে আনার জন্য আমি আবেদন করব।’’
প্রধানশিক্ষক জানান, স্কুলেরই একটি ঘর পরিষ্কার করে সেখানে ওই শিক্ষকের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলো, পাখা, চেয়ার, যা প্রয়োজন তা রাখা হয়েছে। একটা পড়ার টেবিলও কিনে দেওয়া হবে। সর্দার ইলিয়াস বলেন, ‘এ লড়াই ওঁর একার নয়, আমারও।’’
কেন স্কুলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা? স্কুল সূ্ত্রে খবর, প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ময়ূরেশ্বরের ছোটতুড়ি গ্রামে বাড়ি নিরঞ্জনের। স্কুলে আসতে প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। নিরঞ্জন পাল বলেন, ‘‘স্কুলের প্রধানশিক্ষক-সহ সহকর্মীরা যে ভাবে এই অসময়ে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ। এই বয়সে এসে পরীক্ষা দেওয়াটা সত্যিই কঠিন। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব যেন পরীক্ষা না নিয়ে অন্য কোনও ব্যবস্থা করা হয়। তবুও যদি পরীক্ষা নেওয়াই হয়, তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সে ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হবে। তবে রাতে থাকার বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’’
এ বিষয়ে ডিআই মাধ্যমিক সুজিত সামন্ত বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ এটা মানবিকতার খাতিরে করতেই পারেন। তবে এর সঙ্গে শিক্ষা দফতরের কোনও সম্পর্ক নেই।’’