Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Murder at kankartala

থেঁতলে খুন গরু কারবারি, নেপথ্যে কি ঘাটের দখল?

পরিবারের দাবি, মতিনের উপর পুরনো আক্রোশ ছিল শেখ মুজিবুল ও তার সঙ্গীদের। অভিযোগ, ওই ব্যক্তিরা বুধবার রাতে অজয় নদ লাগায়ো বড়কোলা ঘাটে গরুর কারবারি মতিনকে একটি চায়ের দোকানে ডেকে নৃশংসভাবে খুন করেছেন।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মতিনের দুই মেয়ে। বৃহস্পতিবার কাঁকারতলার পশ্চিম বড়কোলার বাড়িতে, ইনসেটে শেখ মতিন।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মতিনের দুই মেয়ে। বৃহস্পতিবার কাঁকারতলার পশ্চিম বড়কোলার বাড়িতে, ইনসেটে শেখ মতিন। ছবি দয়াল সেনগুপ্ত,।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁকরতলা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৪৭
Share: Save:

মাঝে বছর তিনেক খুনখারাপি বন্ধ ছিল খয়রাশোল ব্লকে। ফের খুনের ঘটনা ঘটল সেই ব্লকে। গ্রামের মধ্যেই পাথর দিয়ে থেঁতলে বছর পঞ্চাশের গরু কারবারিকে খুন করার অভিযোগ উঠল। বুধবার রাত ৮টার পরে ঘটনাটি ঘটেছে খয়রাশোলের কাঁকরতলা থানা এলাকার পশ্চিম বড়কোলা গ্রাম লাগোয়া অজয় নদের ধারে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শেখ মতিন ওরফে নুর ইসলাম। নিহতের স্ত্রী নীরজা বিবি স্বামীকে খুন করায় গ্রামের ন’জনের বিরুদ্ধে পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে গ্রামেরই শেখ শাকির, শেখ হাসু ওরফে শেখ আজমতকে। বৃহস্পতিবার দুবরাজপুর আদালতে তুলে ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল কাঁকরতলা থানার পুলিশ। আদালত ধৃতদের সাত দিন পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছে। মূল অভিযুক্ত শেখ মুজিবুল ও তাঁর দুই সঙ্গী শেখ রবিউল, শেখ রাজিবুল অধরা।

পরিবারের দাবি, মতিনের উপর পুরনো আক্রোশ ছিল শেখ মুজিবুল ও তার সঙ্গীদের। অভিযোগ, ওই ব্যক্তিরা বুধবার রাতে অজয় নদ লাগায়ো বড়কোলা ঘাটে গরুর কারবারি মতিনকে একটি চায়ের দোকানে ডেকে নৃশংসভাবে খুন করেছেন। মতিন এলাকায় তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচিত ছিলেন। ঘটনার পরে উত্তেজনা ছড়ায়। বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কিন্তু কেন এই খুন, স্পষ্ট নয়। তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না। যা দেখার পুলিশ দেখছে।’’

বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গ্রামে প্রচুর পুলিশ বাহিনী। নদ ঘেঁষে যে চায়ের দোকানের সামনে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ, তা বন্ধ। মাটিতে রক্ত শুকিয়ে গিয়েছে। পুলিশের ধারণা, জল ঢেলে রক্ত ধুইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তবে দোকানের বারান্দায় পাথরের কিছু টুকরো তখনও পড়ে।নিহত মতিনের বাড়িতে তখন কান্নার রোল। সমানে কেঁদে চলেছেন তাঁর স্ত্রী ও মেয়েরা।

মতিনের চার মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট কলেজ পড়ুয়া তর্জিনা খাতুন। তিনি জানান, মতিন গরুর ব্যবসা করতেন। অভিযুক্তদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর বাবার অশান্তি চলছে বলে তর্জিনার দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও একটি ব্যাপারে বুধবার রাতে আমাদের ঘরে একটা আলোচনা হয়। তারপর কারও ডাকে বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে চায়ের দোকানে যান। সেখানেই ঘটনাটি ঘটে। আমার খুড়তুতো দাদা শেখ রিপন সব দেখেছে।’’ রিপনের দাবি, ‘‘আমার সামনেই মুজিবুল পাথর দিয়ে কাকার মুখ থেঁতলে দিয়েছে। সঙ্গে অন্যরাও ছিল। কিন্তু, ওরা সশস্ত্র থাকায় কিছু করতে পারিনি।’’ খয়রাশোলের নাকড়াকোন্দা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় মতিনের।

কিন্তু ঠিক কী কারণে এই আক্রোশ, তা স্পষ্ট হয়নি পরিবারের সদস্যদের কথায়। প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি স্থানীয় বাসিন্দা বা এলাকার তৃণমূল নেতাদের কেউই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের একাংশের দাবি, পঞ্চায়েতের কাজ, এলাকায় কর্তৃত্বের মতো নানা বিষয়ে দু’পক্ষের পুরনো আক্রোশ ছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকে সেটা বাড়ে। এলাকার কিছু তৃণমূলকর্মীর দাবি, মতিন দলের হয়ে ভোট করিয়েছিলেন। মুজিবুলেরা সিপিএমের হয়ে ভোট করান।

পশ্চিম বর্ধমান সংযোগকারী অজয় নদের ঘাটের কর্তৃত্ব বজায় রাখাও খুনের পিছনে থাকতে পারে বলে অনেকের ধারণা। অজয়ের ওই ঘাটেই এখন অস্থায়ী রাস্তা করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোলের ওই এলাকা থেকে সহজে আসানসোল, জামুড়িয়া বা অন্য এলাকা যেতে সবচেয়ে সহজ রাস্তা অজয় পেরিয়ে ওপারে যাওয়া। বর্ষায় ভরা অজয়ে নৌকা থাকে। অন্য সময় অস্থায়ী রাস্তা দিয়ে চলে পারাপার। সে জন্য খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতি থেকে দরপত্র ডাকা হয়।

বড়কোলা ঘাটটির দায়িত্বে বর্তমানে মিলিত ভাবে রয়েছেন রয়েছে গোটা গ্রাম (ষোলআনা)। তবে সেই ঘাটটির পরিচালনায় অন্যতম মাথা ছিলেন শেখ মতিন। অন্য দিকে ছিলেন, তাঁর বিরোধী বলে পরিচিত মুজিবুলেরা। ঘাটের কর্তৃত্ব নিয়ে দিন কয়েক ধরেই দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। তারই পরিণতি এই খুন বলে মনে করছেন অনেকে।

অন্য বিষয়গুলি:

kankartala sainthia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE