তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
তালা ভেঙে দোতলার ছাদে উঠে পড়েছিল এক বালক ও ছয় কিশোর। তারপরে বৃষ্টির পাইপ বেয়ে সটান নীচে নেমে অন্ধকারে মিলিয়ে যায় ওরা। শনিবার রাতে আদ্রার মনিপুরের কুষ্ঠ পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত ‘উত্তরণ’ হোমের ঘটনা। পালিয়ে যাওয়া কিশোরদের মধ্যে তিন জনকে রবিবার বেলার দিকে পুলিশ উদ্ধার করতে পারলেও বাকিরা অধরা। এই ঘটনায় হোমের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
হোম কর্তৃপক্ষের দাবি, ছাদে বসানো সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গিয়েছে, শনিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই সাত জনে পালায়। তারা কেউ পটনার, কেউ টাটা, আবার কেউ পুরুলিয়ার আড়শা ও আদ্রা থানার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে চার জন পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ড ও আদ্রা রেল স্টেশনে ভিক্ষা করত। বাকি এক জন পুরুলিয়ার চায়ের দোকানে কাজ করত। টাটার দুই স্কুল পড়ুয়া কিশোর বাড়ি থেকে পালিয়েছিল। দিন সাতেক আগে পুরুলিয়ার আরপিএফ তাদের উদ্ধার করে। অন্যদের মধ্যে কেউ কেউ বছর ছয়েক এই হোমে কাটিয়েছে।
এত দিন এমন ঘটনার নজির নেই। তাহলে কেন হোম থেকে ওরা পালাল, তা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। পুরুলিয়ার দায়িত্বে থাকা পশ্চিম বর্ধমানের শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন রীতা বসু বলেন, ‘‘হোমের পরিকাঠামোগত কোনও সমস্যা আমাদের নজরে আসেনি। তাও কেন ওরা পালাল, খোঁজ নেব।’’ রঘুনাথপুর মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুদেষ্ণা দে মৈত্র বলেন, ‘‘বাকি চার নিখোঁজ কিশোরের সন্ধানেই এখন আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। কেন তারা পালাল পরে তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ কুষ্ঠ পুনর্বাসন কেন্দ্রের সম্পাদক নবকুমার দাসের অবশ্য দাবি, ‘‘পালিয়ে যাওয়া ছেলেগুলির মধ্যে কয়েকজন মাঝেমধ্যেই এসে আমার কাছে হাত-খরচের টাকা চাইত। সে জন্য তারা পালিয়ে থাকতে পারে।’’
এই হোমে মূলত বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে উদ্ধার হওয়া এবং অনাথ ও ভবঘুরে বালক ও কিশোরেরা থাকে। হোম কর্তৃপক্ষের দাবি, শনিবার রাত ৯টা নাগাদ খাওয়াদাওয়ার পরেই আবাসিকেরা ঘুমাতে গিয়েছিল। রবিবার ভোরে অন্য আবাসিকেরা ওদের দেখতে না পেয়ে কর্তৃপক্ষকে জানায়। কুষ্ঠ পুনর্বাসন কেন্দ্রের সম্পাদক জানান, সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা রেলপুলিশ, আরপিএফ এবং আদ্রা থানায় খবর পাঠান। হোমের কর্মীরাও আশপাশে খোঁজ করতে নামেন। কিছু পরেই হোমে পৌঁছয় পুলিশ। পালিয়ে যাওয়া সাত জনের ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করেন পুলিশ কর্মীরা। হোমের তরফে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। বেলার দিকে পুরুলিয়া মফস্সল থানার টামনা ফাঁড়ির পুলিশ কর্মীরা খবর দেন, টামনা স্টেশনের কাছ থেকে তিন কিশোরকে উদ্ধার করা গিয়েছে। চাইল্ডলাইনের আদ্রার কর্মকর্তা মন্টু মাহাতো সেখানে গিয়ে সন্ধ্যায় তিন জনকে হোমে ফিরিয়ে আনেন।
উদ্ধার হওয়া তিন কিশোরের মধ্যে দু’জন টাটা ও এক জন পটনার বাসিন্দা। তারা দাবি করেছে, ‘‘হোমে পড়াশোনা ও খাবারদাবার সব পাওয়া গেলেও হাত-খরচ মিলত না। তাই পালানোর মতলব করি।’’ তাদের সঙ্গে কথা বলার পরে মন্টুবাবু দাবি করেছেন, ‘‘পটনার কিশোর জানিয়েছে সে কয়েকজনের সঙ্গে দিন পনেরো আগে পালানোর মতলব এঁটেছিল।’’
কী ভাবে পালালো? কিশোরেরা দাবি করেছে, হোম থেকে পালিয়ে হেঁটে জয়চণ্ডী স্টেশনে যায়। সেই সময়ে ট্রেন না থাকায় রঘুনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে যায়। ভোরের বাস ধরে তারা পৌঁছয় পুরুলিয়া শহরে। আড়শার কিশোরের কাছে কিছু টাকা ছিল। সেই ভাড়া দিয়েছে। সেখান থেকে ওই তিন কিশোর আলাদা হয়ে বাস ধরে চলে যায় টামনায়। বাকি চার জন অন্য বাস ধরে বেরিয়ে যায়।
হোমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন? হোম কর্তৃপক্ষের দাবি, হোমের এক রক্ষী ও দু’জন হোমগার্ড এক তলায় দরজার কাছে শুয়েছিলেন। পালানোর আগে তারা এক হোমগার্ডের মোবাইল ফোন নিয়ে যায় বলে সূত্রের খবর। সেই ফোন ট্র্যাক করেই কিশোরেরা পুরুলিয়া পৌঁছেছে বলে জানা যায়। কিন্তু তারপর থেকে ওই ফোন বন্ধ। হোমে সকালে তদন্তে যান এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায়, দুপুরে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিনাকী দত্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy