Advertisement
E-Paper

মাটি কেমন, জানিয়ে দেবে কার্ড

কখনও অতিরিক্ত সার প্রয়োগ আবার কখনও জমিতে যতটা সার দরকার তার চেয়ে কম পরিমাণে জমিতে সার প্রয়োগ করছেন চাষিরা। ফলে অতিরিক্ত সার প্রয়োগে জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা আবার পরিমাণের চেয়ে জমিতে সার প্রয়োগে কমছে ফসলের উৎপাদনের পরিমাণ।

অনির্বাণ সেন

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৫১
চলছে মাটির নমুনা সংগ্রহের কাজ। ময়ূরেশ্বরের মাধাইপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

চলছে মাটির নমুনা সংগ্রহের কাজ। ময়ূরেশ্বরের মাধাইপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

কখনও অতিরিক্ত সার প্রয়োগ আবার কখনও জমিতে যতটা সার দরকার তার চেয়ে কম পরিমাণে জমিতে সার প্রয়োগ করছেন চাষিরা। ফলে অতিরিক্ত সার প্রয়োগে জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা আবার পরিমাণের চেয়ে জমিতে সার প্রয়োগে কমছে ফসলের উৎপাদনের পরিমাণ। এতে সামগ্রিক ভাবে ক্ষতির মুখে পরছে চাষিই। এমন পরিস্থিতিতে চাষি যাতে ক্ষতির মুখে না পরে তার জন্যই গত ২৬ নভেম্বর থেকে সারা রাজ্যের সঙ্গে বীরভূম জেলার ১৯টি ব্লকেই শুরু হয়েছে মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা সয়েল হেল্থ টেস্ট। চাষির জমির মাটির গুনগত মান পরীক্ষা করে চাষিকে দেওয়া হবে ওই জমির তথ্য নির্ভর একটি কার্ড। পশ্চিমবঙ্গের কৃষি দফতরের ভাষায় ওই কার্ডের নাম ডাবলুবি-এসএইচসি বা ওয়েষ্ট বেঙ্গল সয়েল হেল্থ কার্ড।

কি কি তথ্য থাকবে ওই কার্ডে?

কার্ডে যে তথ্য গুলি থাকবে সেগুলি হল ফার্মাস বা চাষির নাম, চাষি যে জমিতে চাষ করছেন তার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশগত ভৌগলিক অবস্থান, চাষির জমি থেকে সংগৃহীত মাটির নমুনা নম্বর, জমটি কোন মৌজায়, জমিটি চাষ যোগ্য অথবা চাষ যোগ্য কিনা, জমিতে জল সেচ কেমন করে হয়। মাটির চরিত্রও জানা যাবে। সঙ্গে আরোও থাকবে রবি শশ্য, খারিফ শশ্য ও প্রি-খারিপ — যাবতীয় চাষের তথ্য। আর চাষিদের সুবিধার্থে এই তথ্যগুলিই সংগ্রহে নেমেছে ব্লক কৃষি দফতরের কর্মীরা। এ কাজের জন্য প্রতিটি ব্লক কৃষি দফতরের কর্মীদের নিয়ে ওই ব্লকে কাজ করার জন্য একটি করে টিম করা হয়েছে। টিমে থাকছেন ব্লক কৃষি দফতরের কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক, আত্মা প্রকল্পের ব্লক টেকনিক্যাল ম্যানেজার ও অ্যাসিস্টেন্ট ব্লক টেকনিক্যাল ম্যানেজাররা।

কাজের গতি-প্রকৃতি নিয়ে বলতে গিয়ে রামপুরহাট মহকুমার ময়ূরেশ্বর-২ ব্লকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অফ এগ্রিকালচার বা সহ কৃষি অধিকর্তা প্রদীপ কুমার গিড়ি জানালেন, জমি থেকে সংগৃহীত মাটির নমুনা থেকে আমরা মূলত মাটির ১২টি উপাদানের পরিমাণ পরীক্ষা করে দেখছি। সেগুলি হল নাইট্রোজেন, ফসফেট, পটাসিয়াম, (এনপিকে) সালফার, জিঙ্ক, আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, বোরন। এছাড়াও মাটির পিএইচ বা অম্লত্ব-ক্ষারত্বের পরিমাণও দেখা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে মাটির অনান্য খনিজ লবন ও অর্গানিক কার্বনের বর্তমান পরিস্থিতি কি সেটাও দেখা হবে।

নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমরা জমির সেচের সুবিধা অনুযায়ী জমিকে দুটি ভাগে ভাগ করছি। যে সব জমিতে সেচের সুবিধা আছে সেখানে আড়াই হেক্টর পিছু একটি করে এবং যে সব জমিতে সেচের সুবিধা নাই সেখানে দশ হেক্টর পিছু একটি করে নমুনা সংগ্রহ করছি। জমির চারকোনা এবং মধ্যে থেকে মাটি তুলে তা এক জায়গায় মিশিয়ে সেখান থেকে ৫০০ গ্রাম পরিমাণ মাটি নিয়ে একটি করে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরে সেই নমুনা মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের সয়েল টেস্টিং ল্যাবরেটরীতে পাঠানো হচ্ছে। সেখানেই মাটির পরীক্ষা হয়ে কার্ড তৈরি হবে। ওই কার্ড আমাদের কাছে এসে পৌঁছলে আমরা তা বিলি করব।’’

ময়ূরেশ্বর-২ ব্লকের ব্লক কৃষি দফতরের কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক কৃষ্ণগোপাল সাহা জানালেন, ‘‘আমাদের দৈনিক ৫০ টি করে নমুনা সংগ্রহর লক্ষ মাত্রা ধার্য করা আছে। ইতিমধ্যেই আমরা এই ব্লকের অন্তর্গত ষাটপলসা পঞ্চায়েতের আমচুয়া, দাঁড়কান্দি, দাদপুর, নাদুনিয়া, মাধাইপুর কুন্ডলা পঞ্চায়েতের কুন্ডলা, হাতিন, বেলুটি গ্রামগুলি থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছি। আশাকরি ডিসেম্বরের ৩১ এর মধ্যে আমাদের নমুনা সংগ্রহের কাজ শেষ হয়ে যাবে।’’

এ ব্যাপারে কৃষি দফতরের জেলার সর্বময় কর্তা ডেপুটি ডিরেক্টর অফ এগরিকালচার বা জেলা কৃষি অধিকর্তা প্রদীপ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘রাষ্ট সংঘের বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উদ্যোগে ও সহায়তায় সারা ভারতের সঙ্গে এ রাজ্যেও চাষিদের সুবিধার্থে সয়েল হেল্থ কার্ড তৈরির কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়েছে। এ বছরের অক্টোবর মাস থেকেই। তবে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে নভেম্বরের শেষের দিক থেকে। জেলার সব জায়গাতেই এই কাজ চলছে। এ বছরের ৫ ডিসেম্বর অর্থাৎ আগামীকাল সারা রাজ্যের সঙ্গে জেলাতেও আর্ন্তজাতিক মৃত্তিকা দিবস পালন করা হবে। এই উপলক্ষে শনিবার শ্রীনিকেতনের রবীন্দ্র কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে পাঁচশোর বেশি চাষির হাতে সয়েল হেল্থ কার্ড তুলে দেওয়া হবে। তিনি জানান, আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে জেলার সব চাষির হাতে এই সয়েল হেল্থ কার্ড তুলে দেওয়া সম্ভব হবে।

যাদের জন্য এই প্রকল্প সেই চাষিরা কি বলছেন? দাঁড়কান্দির অসীম মণ্ডল, দাদপুরের সাগর মণ্ডল, মাধাইপুরের প্রবীর পাল, সনৎ মণ্ডলরা জানালেন, ‘‘আগে আমরা বাপ-ঠাকুরদাদের দেখে যা শিখেছি বিভিন্ন চাষের সময় জমিতে আমরা সেই রকমই সার দিতাম। তাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জমিতে সারের পরিমাণ বেশি হয়ে যেত। আমাদের চাষের খরচও বেড়ে যেত। কার্ড পেলে আমরা নিয়ম মেনেই চাষ করতে পারব। তাতে আমাদের খরচ কমবে সঙ্গে লাভও হবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy