তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে ভোট-প্রতিশ্রুতির প্রায় সবই রূপায়ণ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ফাইল চিত্র।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষায় পরের পর কল্যাণ প্রকল্প চালু করেছে তৃণমূল সরকার। তার প্রশংসার সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নও উঠছে যে, সরকারি ভাঁড়ারের দৈন্যদশায় দীর্ঘমেয়াদে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, ‘স্বাস্থ্যসাথী’র মতো প্রকল্প চালানোর টাকা আসবে কোথা থেকে? প্রশাসনিক সূত্রের ধারণা, ওই সব প্রকল্প চালাতে ঋণ করাই একমাত্র পথ। বাজেট প্রস্তুতির পাশাপাশি ধারের টাকায় প্রকল্পের খরচ চালানোর জল্পনা চলছে নবান্নের অন্দরে। অর্থ-বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ এই হিসেবও কষেছে যে, স্বাস্থ্যসাথী ও লক্ষ্মীর ভান্ডার চালাতে যে-খরচ ধরা হয়েছে, ঋণ থেকে তার সংস্থান করতে অসুবিধা হবে না।
তৃতীয় বার ক্ষমতায় ফিরে ভোট-প্রতিশ্রুতির প্রায় সবই রূপায়ণ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সব চেয়ে বড় প্রকল্প হিসেবে উঠে এসেছে লক্ষ্মীর ভান্ডার এবং সকলের জন্য স্বাস্থ্যসাথী। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই অনুমান, এই দুই প্রকল্প মিলিয়ে বছরে খরচ হতে পারে কমবেশি ১৭ হাজার কোটি টাকা। বাজেট-নথি অনুযায়ী, গত অর্থবর্ষের (২০২০-২১) তুলনায় চলতি (২০২১-২২) আর্থিক বছরে বাজার থেকে অতিরিক্ত ১৭,৬০৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। অনেক অর্থ-বিশেষজ্ঞের পর্যবেক্ষণ, ওই দু’টি প্রকল্পের খরচ এবং ধারের পরিমাণের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ মিল পাওয়া যাচ্ছে। সেটাই ঋণ-জল্পনাকে জলবাতাস দিচ্ছে।
শুরুতে সরকারের অনুমান ছিল, অন্তত দু’কোটি উপভোক্তা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করাবেন। প্রশাসনিক তথ্য অনুযায়ী, এ-পর্যন্ত অন্তত ১.৬৩ কোটি উপভোক্তার আবেদন এসেছে। অনুমোদন হয়েছে প্রায় ১.৫২ কোটি আবেদনপত্র। বাতিল হয়েছে প্রায় সাত লক্ষ আবেদন। বাকিগুলির যাচাই চলছে। এখনও পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন অন্তত ১.৪৩ কোটি উপভোক্তা। তাতে মাসে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে রাজ্যের। ফলে চলতি আর্থিক বছরে (প্রকল্প শুরুর সেপ্টেম্বর থেকে আগামী মার্চ পর্যন্ত) অন্তত ৫৬০০ কোটি টাকা খরচ ধরা হচ্ছে। এই ধারা অব্যহত থাকলে আগামী গোটা আর্থিক বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। কিন্তু আগামী জানুয়ারিতে ফের দুয়ারে সরকার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সরকার। তখন উপভোক্তার সংখ্যা দু’কোটি হলে খরচ বেড়ে হতে পারে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।
সকলের জন্য স্বাস্থ্যসাথী চালু হওয়ায় প্রায় ২.৩০ কোটি পরিবার (মাথাপিছু উপভোক্তার হিসেবে অন্তত আট কোটি) এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে। গত বাজেটে সরকার জানিয়েছিল, স্বাস্থ্যসাথীর জন্য ১৯৭০ কোটি টাকা ধরা থাকছে। কিন্তু এখনই মাসিক খরচ যা, সেই ধারা বজায় থাকলে গোটা একটি অর্থবর্ষে সেই বাজেট ছাপিয়ে যেতে পারে। কারণ, সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, চলতি মাসের প্রথম ১৯ দিনেই অন্তত ৯০ হাজার উপভোক্তা চিকিৎসা-ব্যয়ের জন্য যে-সব আবেদন করেছেন, তার অর্থাঙ্ক প্রায় ১২৯.৬ কোটি টাকা। তাঁদের অর্ধেকই (অন্তত ৪৫,০০০) দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসাথীর উপভোক্তা হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা-ব্যয় বাবদ দাবির অর্থাঙ্ক প্রায় ৬৮.৬২ কোটি টাকা (মোট ১২৯.৬ কোটির মধ্যে)। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ১২ মাসে মোট খরচ ২৪৫৫ কোটি টাকা ছাপিয়ে যেতে পারে (সবিস্তার অনুমিত হিসেব সারণিতে)।
আগামী আর্থিক বছরের বাজেট তৈরির প্রস্তুতিতে নেমে সরকার বিভিন্ন দফতরকে সতর্ক হয়ে প্রস্তুতি চালাতে বলেছে। অনেক পর্যবেক্ষকই মনে করছেন, তৃণমূল সরকারের চিরাচরিত ‘ভারসাম্য’ বাজেট এ বার ধরে রাখা বেশ কঠিন হবে। লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী ছাড়াও কৃষকবন্ধু (৩৬০০ কোটি), শিক্ষা ঋণ কার্ড (২৫০ কোটি), দুয়ারে রেশন (১২০০ কোটি), নিখরচায় রেশনের (১৪০০ কোটি) মতো প্রকল্পে বিপুল খরচ ধরে রাখতেই হবে। কারণ চালু সামাজিক প্রকল্প বন্ধ বা কাটছাঁট করা সরকারের লক্ষ্য নয়। বাধ্যতামূলক খরচ হিসেবে ঋণের সুদ-আসল মেটাতে ৬৩,৭০০ কোটি এবং বেতন-পেনশন খাতে প্রায় ৮০,৪৩১ কোটি টাকা ধরে রাখতেই হবে সরকারকে। সার্বিক চিকিৎসাকেও অবহেলা করা সম্ভব নয়।
এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, “এই কারণে আধার সংযোগের মাধ্যমে ভুয়ো, ভুতুড়ে বা বাতিলযোগ্য রেশন কার্ড চিহ্নিত করার কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে বিপুল অর্থের জলে যাওয়া ঠেকানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কত স্বাস্থ্যসাথী কার্ড প্রকৃত উপভোক্তার হাতে রয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় বা বাজে খরচের আভাস যেখানে আছে, সেখানেই নজরদারির ব্যবস্থা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির কথা আঁচ করেই সম্ভবত রাশ টানতে বলা হচ্ছে নতুন খরচের পরিকল্পনাতেও।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy