Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

জ্বালানির দাম বাড়ায় হাত পুড়ছে আনাজে

জেলাতেও আনাজের দাম বেড়েছে। তার জন্য অতিবৃষ্টিকেই দায়ী করছেন কৃষক ও আনাজ ব্যবসায়ীরা।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ০৪:৪৬
Share: Save:

ঘরবাড়ি ধ্বংস করার সঙ্গে সঙ্গে আনাজপাতির বাজারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আমপান। সেই আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পরে ফের জ্বলে উঠেছে দপ করে। পটল, ঝিঙে, উচ্ছে, বেগুন, টোম্যাটো ছুঁলেই হাত পুড়ছে সাধারণ মানুষের। ছেঁকা দিচ্ছে জ্যোতি, চন্দ্রমুখী আলুও। আর পেঁপে তো ঝলসে দিচ্ছে হাত! করোনা আবহে অধিকাংশ মানুষের উপার্জন কমেছে। তার মধ্যে প্রায় সব ধরনের আনাজই ক্রমশ মহার্ঘ হয়ে উঠতে থাকায় মধ্যবিত্তের হাঁসফাঁস দশা।

কলকাতার অধিকাংশ বাজারে প্রায় কোনও আনাজের দামই প্রতি কিলোগ্রাম ৫০ টাকার কম নয়। বেগুন, টোম্যাটোর দাম খোলা বাজারে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। গরমের ফসল পটল, ঝিঙে, উচ্ছে, ঢেড়সও ৫০ টাকা বা তার উপরে। এমনকি খুচরো বাজারে চন্দ্রমুখী আলুর দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা। আর জ্যোতি আলুর দাম ২৬ টাকার আশেপাশে।

ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা সামলানোর পরে আবার এ ভাবে দাম বাড়ছে কেন? ব্যবসায়ীদের একাংশের মতে, আমপানে অনেক ফসল নষ্ট হলেও বাংলার ফসল এখন ভিন্‌ রাজ্যে কম যাওয়ায় এখানকার বাজারগুলিতে জোগান কিছুটা সামাল দেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আনাজের বাজারে ফের আগুনের মূলে আছে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি। রাজ্যের টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে বলেন, “ট্রেন বন্ধ। তাই কোলে মার্কেটের সব আনাজপাতিই এখন আসে ট্রাকে। ডিজেলের দাম যে-ভাবে বেড়েছে, তাতে ব্যবসায়ীদের পরিবহণের খরচ অনেক বেশি পড়ে যাচ্ছে। তারই প্রভাব পড়ছে খোলা বাজারে।” কমলবাবুর হিসেব: ট্রেনে কৃষ্ণনগরের যে-আনাজ কোলে মার্কেটে আনতে ৫০০ টাকা খরচ হত, এখন গাড়িতে আনতে কয়েক গুণ বেশি খরচ হচ্ছে। রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের অন্য সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে জানান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি থেকে আনাজের ট্রাক কলকাতায় কম ঢুকছে। একে ডিজেল-পেট্রোলের দাম বেশি, তা ছাড়া আমপানের পরে নতুন করে ফসলের ফলন এখনও সে-ভাবে বাড়েনি। ডিজেলের অগ্নিমূল্য আর লাগাতার ঝড়বৃষ্টির দরুন জোগান কমে যাওয়ায় আনাজের দাম বাড়ছে।

কিন্তু কলকাতারই পাইকারি বাজার এবং স্থানীয় খুচরো বাজারের মধ্যে দামের এত তফাত হবে কেন? পাইকারি বাজার ও খোলা বাজারের দামের ফারাক ২০-২৫ টাকা, এমনকি ৩০ টাকাও হয়ে যাচ্ছে। কোলে মার্কেট-সহ পাইকারি বাজারগুলির ব্যবসায়ীদের একাংশের মতে, শুধু আমপানের প্রভাব বা ডিজেল-পেট্রোলের দাম বাড়ার জন্যই এতটা মূল্যবৃদ্ধি নয়। আসলে করোনার দাপটে সরকার অন্য সব দিক সামাল দিতে ভীষণ ব্যস্ত। বাজারে কতটা দাম বাড়ল, প্রশাসন সে-দিকে বিশেষ নজর দিতে পারছে না। সেই সুযোগে অসাধু চক্র, বিশেষ করে এক শ্রেণির ফড়ে সক্রিয় হয়ে ওঠায় খোলা বাজারে এতটা দাম বেড়েছে। তাই পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরো বাজারের দামের তফাত এত বেশি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হুগলির ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, নতুন করে লকডাউন শুরু হবে, এই আশঙ্কায় অনেকের মধ্যে আলু মজুত করার প্রবণতা বেড়েছে। বাড়তি চাহিদাই আলুর দাম বৃদ্ধির কারণ। টোম্যাটো বেশি আসে ভিন্‌ রাজ্য থেকে। ভিন রাজ্যে গাড়ির খরচ বাড়ায় টোম্যাটোর দাম আকাশছোঁয়া।

জেলাতেও আনাজের দাম বেড়েছে। তার জন্য অতিবৃষ্টিকেই দায়ী করছেন কৃষক ও আনাজ ব্যবসায়ীরা। নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ীরা জানান, আমপানের পর থেকে বৃষ্টির বিরাম নেই। টানা বৃষ্টিতে আনাজের জোগান কমছে। বেশির ভাগ খেতেই পটল, ঝিঙে, ঢেড়স, বেগুনের মতো মরসুমি আনাজের হাল সুবিধার নয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের চাষিরা জানাচ্ছেন, ১৩,২৫৪ হেক্টর জমিতে আনাজ চাষ হয়েছিল। ঝড়বৃষ্টিতে ৯০ শতাংশ জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। তার উপরে রয়েছে ফড়ে-চক্র। তবে পূর্ব বর্ধমানের চাষি ও আনাজ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পরিবহণ-সমস্যার জন্য আনাজ অন্য জেলায় কম যাচ্ছে। ফলে জেলার স্থানীয় বাজারে আনাজের দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Vegetable Diesel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy