নিরুপায়: রায়দিঘি কুমড়োপাড়া গ্রামে সনাতন হালদারের ভাঙাচোরা বাড়ি। সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাননি ওঁরা। নিজস্ব চিত্র
ভাঙাচোরা কুঁড়ে ঘরেই দিন কাটে। বৃষ্টি হলেই জল ঢোকে ভিতরে। তা সত্ত্বেও সরকারি পাকা বাড়ি মেলেনি।
এমনই পরিস্থিতি মথুরাপুর ২ ব্লকের উত্তর কুমড়োপাড়ার ঘোলা গ্রামের একাধিক পরিবারের। অভিযোগ, প্রশাসনের কাছে বার বার আবেদন করেও নাম ওঠেনি আবাস যোজনার তালিকায়।
গ্রামের বাসিন্দা, দিনমজুর সনাতন হালদারের মাটির বাড়িটি ভগ্নপ্রায়। বৃষ্টি হলে খড়ের চালে ত্রিপল দিয়ে কোনও রকমে জল আটকাতে হয়। জোরে বৃষ্টি হলে কাজ হয় না ত্রিপলেও। ঘর পেতে একাধিকবার পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন সনাতন। তাঁর কথায়, “পঞ্চায়েত থেকে ভাঙা ঘরের ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছে। কাজ না হওয়ায় আমি বাড়ির ছবি তুলে ব্লক প্রশাসনের কাছেও জমা দিয়ে এসেছি। এমনকী, দুয়ারে সরকার শিবিরেও আবেদন করেছি। কোনও লাভ হয়নি।”
ওই গ্রামের বাসিন্দা প্রবোধ হালদারও থাকেন ভাঙাচোরা মাটির বাড়িতে। প্রবোধ জানান, শীত-গ্রীষ্ম কোনও রকমে কেটে গেলেও বর্ষাকালে দুর্ভোগের শেষ থাকে না। আবাস যোজনায় ঘরের জন্য একাধিকবার আবেদন করেছেন। কিন্তু পাননি।
গ্রামের বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ প্রধানেরও দাবি, আবাস যোজনার ঘরের আবেদন করেও ফল হয়নি। থাকতে হচ্ছে কাঁচা বাড়িতে।
গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেই আবাস যোজনার ঘর মেলে। ঘর দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ চলছে বলে অভিযোগ। ইন্দ্রজিৎ প্রধানের দাবি, “আমি বিরোধী দলের সমর্থক। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই আবাস যোজনার ঘর পাচ্ছি না বলে মনে হচ্ছে।”
স্বজনপোষণের অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি কুমড়োপাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান জয়দেব মান্না। তিনি বলেন, “২০১৮ সালে প্রায় ৩ হাজার নামের তালিকা পাঠানো হয়েছিল। সেখানে মাত্র ২ হাজার ১০০ জনের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। আমাদের কোনও হাত নেই এই বিষয়ে।” মথুরাপুর ২ বিডিও তাপসকুমার দাস বলেন, “যাঁরা ঘর পাননি বলছেন, তাঁদের বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি না, অবশ্যই দেখব।”
মন্দিরবাজারের চাঁদপুর-চৈতন্যপুর পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামেও একই চিত্র। কারও খড়ের চাল দেওয়া মাটির ঘর, কারও দরমার বেড়ার ঘরে ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া। শীতে-বর্ষায় দুর্ভোগের শেষ নেই। তবু সরকারি পাকা বাড়ি জোটেনি।
স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ে নিয়ে ভাঙাচোরা ঘরে থাকেন বাদেমহেশপুর গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস খান। বললেন, “ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছি। বর্ষায় দুর্ভোগের শেষ থাকে না। আবাস যোজনায় নাম তোলার জন্য একাধিকবার পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসনকে জানিয়েছি। সুরাহা হয়নি।” তাঁর দাবি, “আমি বিরোধী দল করি বলেই এই অবস্থা।”
গ্রামের বাসিন্দা রঙ্গিনা খান, মতিন জমাদার, সফিক হালদারেরাও জানান, বার বার আবেদন করেও ঘর মেলেনি। বাদেমহেশপুর গ্রামের সিপিএম কর্মী মনিরুল মোল্লার অভিযোগ, গ্রামের প্রায় ৫০-৬০টি পরিবার ভাঙাচোরা কুঁড়ে ঘরে বসবাস করে। আবেদন করেও নাম নথিভুক্ত হয়নি। সম্প্রতি তাঁদের সঙ্গে নিয়ে ব্লক অফিসে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
একই ছবি পাশের গ্রামে দিগবেড়িয়ায়। গ্রামের বাসিন্দা, প্রতিবন্ধী রহিম জমাদার ত্রিপল ও টালি ঢাকা এক চিলতে ঘরে স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের নিয়ে থাকেন। রহিম জানালেন, আমপানে পুরো ঘর ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। কোনও রকমে ধারদেনা করে কুঁড়েঘরটি সারিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আবাস যোজনায় আমাদের নাম নেই। প্রশাসনকে একাধিকবার জানিয়েও লাভ হয়নি। আমপানের সময়েও ক্ষতিপূরণ মেলেনি।”
এ বিষয়ে মন্দিরবাজার ব্লকের সিপিএম নেতা সজল চক্রবর্তী, অনিত হালদারের অভিযোগ, শাসকদল স্বজনপোষণ করেছে সর্বত্র। পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, শাসকদলের নেতাদের নাম আবাস যোজনায় নথিভুক্ত হয়েছে। প্রকৃত বহু প্রাপকের নাম নথিভুক্ত হয়নি। এলাকার বিজেপি নেতা অশোক পুরকাইতের অভিযোগ, “তৃণমূল ও প্রশাসন মিলে আবাস যোজনায় দুর্নীতি করেছে।”
মন্দিবাজারের বিধায়ক জয়দেব হালদার বলেন, “আবাস যোজনা সমীক্ষা হয়েছিল ২০১৮ সালে। সে সময়ে নথিভুক্ত নামগুলি এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খতিয়ে দেখার কাজ করেছেন ব্লক প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। যাঁরা মাটির বাড়িতে আছেন, পরবর্তীতে তাঁদের নাম নিশ্চয়ই নথিভুক্ত করা হবে।” তাঁর দাবি, “দলের কোনও নেতার পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও নাম উঠেছে কি না আমার জানা নেই।” স্বজনপোষণের অভিযোগও মানেনি স্থানীয় তৃণমূল নেতারা।
এ বিষয়ে মন্দিরবাজারের বিডিও কৌশিক সমাদ্দার বলেন, “প্রকৃত প্রাপকদের নামের তালিকা নথিভুক্ত করা হয়েছে। পাকা বাড়ি থাকলে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এমনকী, অভিযোগ আসার পরে ফের খতিয়ে দেখে যত সম্ভব স্বচ্ছ তালিকা তৈরি করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy