যাদবপুর-কাণ্ডের জেরে এসএফআই-এর প্রতিবাদ এবং ডিএসও-র ছাত্র ধর্মঘটের আবহে আজ, সোমবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। রাজ্য জুড়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪২৮ জন। রাজ্য জুড়ে মোট পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ২০৮৯টি।
পরীক্ষা শুরু বেলা ১০টা থেকে। চলবে ১টা পনেরো পর্যন্ত। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের একাংশ প্রতিবাদ, ধর্মঘটে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় চিন্তিত। তবে রাজ্য জুড়েই পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারেন, বাড়তি নজরের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন।
রবিবার লালবাজারে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা জানান, শহরে প্রায় ৩০ হাজার পরীক্ষার্থী বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবেন। তার মধ্যে কলেজ স্ট্রিট, যাদবপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাস্তায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ছাড়াও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ তৎপর থাকবে। কোথাও কোনও অসুবিধেয় পড়লে রাস্তায় থাকা পুলিশকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেবলেছেন তিনি।
এ ছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হচ্ছে। পথে যে কোনও সমস্যায় পরীক্ষার্থীরা ৯৪৩২৬১০০৩৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন নগরপাল। রাস্তায় যে কোনও রকম অবরোধ এবং বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশ তৎপর থাকবে বলে জানান তিনি।
একই ভাবে রাজ্যের অন্যত্রও যে কোনও ধরনের অবরোধ, বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশ তৈরি থাকবে বলে জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি এবং আইজি (আইন শৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁরা পরীক্ষার্থীদের যাতায়াত নিয়ে আমায় আশ্বস্ত করেছেন। এ ছাড়াও আমি ধর্মঘটীদের কাছে আবেদন করব ওঁদের জন্য যেন পরীক্ষার্থীদেরমধ্যে নতুন করে উৎকন্ঠা না-তৈরি হয়। উচ্চ মাধ্যমিক খুব গুরুত্বপূর্ণপরীক্ষা। পরীক্ষার্থীরা এমনিতেই উৎকন্ঠায় থাকে।’’
বিভিন্ন জেলার পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের ব্যবস্থা তারা রাখছেন। যেমন নদিয়ার কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সুপার অমরনাথ কে বলেন, ‘‘ধর্মঘটের কারণে কোথাও আইন লঙ্ঘিত হলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তল বলেন, ‘‘কোথাও পিকেটিং হলে, পুলিশ তা আটকাবে।’’ একই ধরনের আশ্বাস মিলেছে জলপাইগুড়ি, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, মুর্শিদাবাদ পুলিশ-জেলা, হাওড়া গ্রামীণ, পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কর্তাদের থেকে। তাঁরা জানান, জাতীয় ও রাজ্য সড়কগুলিতে অতিরিক্ত পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশকর্মী মোতায়ন করা হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। মূলত, যানজট সমস্যা মোকাবিলা ও পরীক্ষার্থীদের সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিতে ওই উদ্যোগ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং মহকুমা পুলিশ-প্রশাসনের তরফে থানাগুলির সঙ্গে এ ব্যাপারে বিশেষ বৈঠক করা হয়েছে।
উচ্চ মাধ্যমিকের পাশাপাশি, বিভিন্ন কলেজে ফিফ্থ সিমেস্টারের পরীক্ষা রয়েছে। ওই কলেজগুলি ধর্মঘটের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক শুভজিৎ অধিকারী। ডিএসও-র হুগলি জেলা সভাপতি শুকদেব বিশ্বাস জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকায় স্কুলের গেটে ধর্মঘটের পোস্টার সাঁটা হয়নি। কোনও কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র পড়লে, তা ধর্মঘটের আওতার বাইরে থাকবে। জমায়েতে মাইক ব্যবহার করা হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘পরীক্ষার্থীদের সমস্যার আশঙ্কা অমূলক। বরং প্রয়োজনে, আমরা সাহায্য করব।’’ এসএফআইয়ের বীরভূম জেলা সম্পাদক শৌভিক দাসবক্সীর দাবি, ‘‘প্রতিবাদ হলেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় আমরা কোনও বিঘ্ন ঘটতে দেব না।’’
পাশাপাশি লালবাজার জানিয়েছে, বিভিন্ন জেলার ক্ষেত্রে পথে সমস্যায় পড়লে পরীক্ষার্থীরা ১০০ ডায়ালে ফোন করে সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। কলকাতা এবং জেলার সর্বত্র ভোর পাঁচটা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত বাস এবং অন্য যানবাহন পুরো মাত্রায় রাস্তায় নামাতে প্রশাসনিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি পরিবহণ নিগমের বাস ছাড়াও অটো, টোটো, ক্যাবপরিষেবা স্বাভাবিক থাকবে। একই ভাবে দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাস্তায় যাতে বাস এবং অন্য যান পর্যাপ্ত সংখ্যায় থাকে, তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা এবং উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পরীক্ষা উপলক্ষে বাড়তি বাস চালাবে সরকারি পরিবহণ নিগমগুলি।
চিরঞ্জীব জানিয়েছেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল, স্মার্ট ওয়াচ নিয়ে কোনও পরীক্ষার্থী ধরা পড়লে কিন্তু তাঁর সব পরীক্ষা বাতিল হবে। পরীক্ষার্থীরা সকাল ৯টা থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের হেল্পলাইন নম্বর ০৩৩- ২৩৩৭০৭৯২/২৩৩৭৯৬৬১।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)