পুজোর অনুদান নিয়ে একাধিক জনস্বার্থ মামলা করা হয় হাই কোর্টে। ফাইল চিত্র।
দুর্গাপুজোর অনুদান নিয়ে করা জনস্বার্থ মামলাগুলির রায় ঘোষণা স্থগিত রাখল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শেষ হয়েছে।
এই মামলায় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সওয়াল-পর্বে বলেন, ‘‘পর্যটন, সাংস্কৃতিক হেরিটেজের উন্নয়ন এবং উৎসবে পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সুসম্পর্ক (কমিউনিটি পলিসি) স্থাপনের কাজে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে।’’ রাজ্যের বক্তব্য শুনে বিচারপতি জানতে চান, ‘‘এই টাকা যে আপনাদের নির্দিষ্ট খাতেই ব্যয় করা হবে, সেটা নিশ্চিত করবেন কী ভাবে?’’ জবাবে রাজ্যের তরফে বলা হয়, ‘‘ব্যয়ের শংসাপত্র ও বিল ভাউচার দেখে নিশ্চিত হওয়া যাবে। যেহেতু বাজেটে বরাদ্দ আছে, তাই অডিট করতেই হবে। ৯০ শতাংশের বেশি ক্লাব ব্যয়ের শংসাপত্র দিয়েছে। এটা না দিলে টাকা দেওয়া হবে না।’’
মামলাকারীকে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘এই অর্থ কী ভাবে কাজে লাগানো উচিত, তা নিয়ে আপনাদের কোনও পরামর্শ আছে?’’ মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জবাবে বলেন, ‘‘প্রথমে সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ, তার পর কোভিডের খাতে টাকা দেওয়ার কথা বলা হল। এখন হেরিটেজ কারণ দেখিয়ে ক্লাবগুলোকে টাকা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। জনগণের টাকা এ ভাবে ক্লাবগুলোকে দেওয়া ঠিক নয়। এক একটি পুজো কমিটির বাজেট কোটি টাকার উপরে। প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দেওয়া হবে।’’
অনুদান নিয়ে রাজ্যের তরফে আরও বলা হয়, ‘‘পুজোর সময় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকিরা আসেন। নির্দিষ্ট জায়গায় একত্রিত হন। ১০ মিনিট, ২০ মিনিট, ৩০ মিনিট তাঁরা ঢাক বাজাতে থাকেন। এটা দেখার মতো। তার পর উদ্যোক্তারা তাঁদের পছন্দ করে নিয়ে যায়। কুমারটুলি থেকে প্রতিমা লন্ডন-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। কুমারটুলিতে শিল্পের প্রদর্শনশালা বলা যায়। তাই দুর্গাপুজো ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে। মণ্ডপের শিল্পকলা, হস্তশিল্প উৎসবের মাধুর্যে অন্য মাত্রা যোগ করে। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়।’’
মামলাকারীদের তরফে বলা হয়েছে, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি পুজোর অনুদানের নামে টাকা দিয়েছেন। একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে অনুদান দেওয়া সংবিধান বিরোধী। রাজ্যের মানুষের করের টাকা এই ভাবে মুখ্যমন্ত্রী খরচ করতে পারেন না। এ ভাবে করের টাকা খরচ করতে গেলে রাজ্যপালের অনুমতি লাগে। রাজ্য যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, সেটা আন্তঃদফতর পত্র আদানপ্রদান বলা যায়।’’ তাঁদের আরও বক্তব্য, ‘‘ইউনেসকো দুর্গাপুজোকে হেরিটেজের তকমা দিয়েছে মানেই রাজ্য কোষাগার থেকে টাকা খরচ করতে পারে না। হাই কোর্টই ইমাম ভাতা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল, যাতে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ না করা হয়।’’
প্রসঙ্গত, রাজ্যের ৪৩ হাজার দুর্গাপুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy