দোকানেই পঞ্চায়েতের কাজ সারছেন সনাতন। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
শাসক দলের অনেক ছোট-বড়-মেজো নেতা ‘অট্টালিকা-প্রবাহে’ গা ভাসিয়েছেন। কারও ঘরে মিলেছে টাকার পাহাড়। তখন তাঁর সম্বল কবিগুরুর কবিতার উপেনের মতোই ‘শুধু বিঘে দুই'। আর একটি চায়ের দোকান। বাড়ি বলতে মাটির ঘর। এমনই ‘ব্যতিক্রমী’ জীবনযাত্রা পাড়ুইয়ের অমরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সনাতন সরেনের।
স্ত্রী ধানী ও তিন মেয়েকে নিয়ে বীরভূমের পাড়ুইয়ের সহিসপুর গ্রামে বাস সনাতনের। বড় মেয়ে পূর্ণিমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মেজো মেয়ে বর্ষা কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ছোট মেয়ে বৃষ্টি এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। কলেজে ভর্তি হবে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দু'বিঘা জমিতে চাষকরে আর চায়ের দোকান চালিয়েই মেয়েদের বড় করছেন। জেলা তথা রাজ্যের বহু পঞ্চায়েতেই প্রধানের বিরুদ্ধে পাকা বাড়ি না পাওয়ার অভিযোগ আনেন অনেকে। অমরপুরের পঞ্চায়েত প্রধান সনাতন অবশ্য নিজেই সরকারি আবাস যোজনা প্রকল্পের বাড়ি পাননি এখনও। মাটির ঘরেই থাকেন পরিবার নিয়ে।
এমনই অবশ্য থাকতেন তিনি বরাবর, বলছেন সহিসপুরের বাসিন্দারা। ২০০৮ সালে বাম আমলে প্রধান ছিলেন পাঁচ বছর। ২০১৬-তে তৃণমূলে যোগদান করেন। ২০১৮-তে তৃণমূলের হয়ে ফের প্রধান হন। কিন্তু দল বদলালেও বদলায়নি তাঁর পোশাক-আশাক, ঘরদোর। টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়ি। মোটরবাইক নেই। একটি মাত্র সাইকেল রয়েছে তার। তা নিয়েই পঞ্চায়েত দফতরে যাওয়া আসা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ সারেন প্রধান।
পঞ্চায়েত দফতরের অদূরেই তাঁর চায়ের দোকানটি। মাঝে অসুস্থতার জন্য কিছু দিন দোকান বন্ধ ছিল। ফের দোকান খুলেছেন তিনি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল দফতর খোলার আগে চায়ের দোকানেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন তিনি। দোকান সামলানোর পাশাপাশি করছেন আধার সংশোধন থেকে শুরু করে জাতিগত শংসাপত্রের আবেদনের মতো নানা কাজ। কথায় কথায় বললেন, ‘‘বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু প্রয়োজন তা হলেই হল।’’ সনাতনের স্ত্রী ধানী স্বনির্ভর দলের হয়ে একটি প্রাথমিক স্কুলে মিড ডে মিল রান্নার কাজ করেন। সামান্য পারিশ্রমিক মেলে। ধানী বললেন, ‘‘দুই মেয়ের পড়ার খরচ আছে। সংসার চালাতে কষ্ট হয়, কিন্তু কী আর করা যাবে। এ ভাবে দিন চলে গেলেই হল।’’
এ ভাবে তাঁরা দিন চালাচ্ছেন বলেই গ্রামবাসী তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। স্থানীয় বাসিন্দা সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, প্রশান্ত ডোম, তরুণ দাসেরা বলেছেন, “সাধারণত পদে যে থাকে, সে নিজের কথাই আগে ভাবে। কিন্তু উনি নিঃস্বার্থ ভাবে মানুষকে পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন।’’ তা মানছে বিরোধীরাও। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “এই অবস্থাতেও এমন প্রধান সত্যিই ব্যতিক্রমী বলা যেতে পারে।” অমরপুর অঞ্চলের তৃণমূল নেতা সদাশিব চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “এ রকম প্রধান পাওয়ায় আমরা গর্বিত।”
কোনও দিন ইচ্ছে করেনি অন্য অনেক প্রধান-উপপ্রধানদের মতো হওয়ার? চা দিতে দিতে সনাতনের জবাব, ‘‘অনেকে প্রলোভন দেখিয়েছিল। আমি রাজি হইনি। আজ যদি সেই প্রলোভনে পা দিতাম, তা হলে আমাকেও অন্যদের মতো কথা শুনতে হত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy