উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় সব আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছে শাসক তৃণমূল। ফাইল চিত্র।
রক্ত ঝরেছে শেষ দিনের মনোনয়নেও। গুলি চলেছে সিপিএমের মিছিলে। বিরোধীদের দাবি, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন এক সিপিএম কর্মী। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, কারও মৃত্যু হয়নি। উত্তর দিনাজপুরের সেই চোপড়ায় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় সব আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছে শাসক তৃণমূল। যে ক’টি আসনে বিরোধী প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বৃহস্পতিবারের রক্তপাতের পর। শাসকদলের অবশ্য বক্তব্য, বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে না পারার দায় তাদের নয়। সাংগঠনিক শক্তি নেই বলেই বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি।
জেলায় কোথায় কোন দল কত মনোনয়ন জমা দিয়েছে, বৃহস্পতিবার মনোনয়ন পর্ব শেষ হওয়ার পরেই সেই তালিকা প্রকাশ্যে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, চোপড়ার ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২১৭টি আসনের মধ্যে ২১৪টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলেছে তৃণমূল। বাকি ৩টি আসনে ৩ নির্দল প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। বিরোধীদের দাবি, ওই ৩টি আসনেও ভোট হোক, তা চাইছে না শাসকদল। মনোনয়নের শুরু থেকেই বিরোধী প্রার্থীদের উপর লাগাতার চাপ সৃষ্টি করে আসছিল তৃণমূল। তা অগ্রাহ্য করে বৃহস্পতিবার শেষ দিনে বাম-কংগ্রেস প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে যখন মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছিলেন, সেই সময় তাঁদের উপর হামলা হয়। স্থানীয় সূত্রে দাবি, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের গুলিতে এক সিপিএম কর্মীর মৃত্যু হয়। সিপিএমের অবশ্য দাবি, তাদের দু’জন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। পাল্টা পুলিশের দাবি, চোপড়ায় কেউই মারা যাননি। কিন্তু এই ঘটনার পর থেকেই থমথমে পরিস্থিতি চোপ়ড়ায়। বিরোধীদের আশঙ্কা, যে ৩ জন নির্দল প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তাঁরাও শাসকদলের শাসানিতে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক আনারুল হক বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ছিল গণতন্ত্রকে রক্ষা করার, মানুষের অধিকার রক্ষা করার। কিন্তু সেই অধিকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে কমিশন। প্রত্যেক মানুষের অধিকার রয়েছে ভোট দেওয়ার এবং ভোটে লড়াই করার। কিন্তু প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে বিরোধীরা যেতেই পারল না।’’
সিপিএমের দাবি, পুলিশ-প্রশাসনের মদতে এলাকায় সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে শাসকদল। আনারুল বলেন, ‘‘গতকাল আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম দলবদ্ধ ভাবে গিয়ে নমিনেশন করার। আক্রমণের আশঙ্কা ছিল। সেই মতো আমরা আগে থেকেই পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বস্তরে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের মিছিলের উপরেই সশস্ত্র আক্রমণ হল এবং সেটা পরিকল্পিত ভাবে। প্রকাশ্যে গুলি চালানো হল। এ রাজ্যে গণতন্ত্র এখন ভুলুণ্ঠিত। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এখন আর নেই। প্রশাসনও এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়।’’
বিজেপির জেলা সম্পাদক বাসুদেব সরকারও বলেন, ‘‘চোপড়া এখন বাহুবলিদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে। মানুষের গণতন্ত্র এখানে রক্ষা করা অসম্ভব। বিরোধী কোনও শক্তিকেই তৃণমূল চোপড়া অঞ্চলে নমিনেশন করতে দেয়নি। এটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ হতে পারে না। মানুষ তার ইচ্ছা অনুযায়ী ভোট দেবে, প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। বিরোধী কোনও প্রার্থীকে নমিনেশন করতে না দিয়ে তৃণমূল প্রমাণ করেছে, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে তারা কী করতে চাইছে।’’
পাল্টা জেলা তৃণমূলের সভাপতি কানাইলাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘৪ হাজার লোকের মিছিল নিয়ে কেউ নমিনেশন করতে আসে? সিপিআইএমের লক্ষ্য নমিনেশন ছিল না। ওদের লক্ষ্য ছিল, দল বেঁধে এসে একটা গন্ডগোল তৈরি করা এবং তাতে তারা সফল হয়েছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। কারা গুলি চালিয়েছে, তা-ও জানা নেই। প্রশাসন তদন্ত করে দেখবে, কে গুলি চালিয়েছে। চোপড়া এলাকায় বিরোধীদের কোনও সংগঠন নেই। বিরোধীদের কোনও সংগঠন না থাকার জন্যই তারা মনোনয়ন করতে পারেনি। আমি নিজে সারা দিন এসডিও অফিসে ছিলাম। বিরোধী কাউকেই তো বাধা দেওয়া হয়নি। এ সব মিথ্যা অভিযোগ তুলে বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy