Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Malda

চোর-চোর, মার-মার বলে চিৎকার, মারতে মারতে জামাকাপড়ও খুলে নিল: মালদহের দুই নির্যাতিতা

দুই নির্যাতিতার অভিযোগ, মিথ্যা অভিযোগে তাঁদের নগ্ন করে মারধর করেন লোকজন। পুলিশও মিথ্যা মামলা দিয়েছে। মারের চোটে জখম ছিলেন তাঁরা। বাড়ি ফিরে চিকিৎসা করিয়েছেন। প্রাথমিক চিকিৎসাও পাননি।

Two Victims of Malda incident

সে দিনের ভয়াবহ ঘটনার কথা বললেন দুই নির্যাতিতা। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বামনগোলা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৩ ১৬:৪৩
Share: Save:

লেবু নয়, হাটে শুঁটকি মাছ বিক্রি করতে গিয়ে চোর সন্দেহে তাঁদের নগ্ন করে মারধর করা হয়েছে। গ্রামে ফিরে এমনই দাবি করলেন মালদহের বামনগোলার দুই নির্যাতিতা। দুই মহিলারই দাবি, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল তাঁদের।

গত শুক্রবার রাতে মালদহ জেলার পাকুয়াহাটে চোর সন্দেহে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে গণপ্রহারের অভিযোগের ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যদিও তা মঙ্গলবার বিকেলের বলে দাবি পুলিশের। অন্য দিকে, অন্য এক ঘটনায় পুলিশের ফাঁড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে যে পাঁচ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে, তাঁদের মধ্যে পাকুয়াহাটের দুই নির্যাতিতা ছিলেন। গত বুধবার তাঁদের মালদহ জেলা আদালতে পেশ করে পাঁচ দিনের হেফাজতে নেয় পুলিশ। সোমবার শুনানির জন্য আবার তাঁদের আদালতে হাজির করানো হলে দু’জন নির্যাতিতাকে নিঃশর্তে জামিন দেয় আদালত। পুলিশকে ভর্ৎসনা করেন বিচারক।

মঙ্গলবার গ্রামে পৌঁছতে ওই দুই নির্যাতিতাকে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা জানান, সোমবারই বাড়িতে ফিরেছেন। পাশাপাশি যে ঘটনার ভিডিয়ো নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল, সে সম্পর্কে কথা বলেন দুই নির্যাতিতা। বাড়ির উঠোনে বসে সে দিনের ঘটনা বলতে গিয়ে শিউরে ওঠেন এক নির্যাতিতা। কেঁদে ফেলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সে দিন শুঁটকি মাছ বিক্রি করতে হাটে গিয়েছিলাম। হঠাৎ ‘চোর-চোর’ বলে ওঠেন পাশের এক মিষ্টি দোকানদার। এর পর কয়েক জন আমাদের দু’জনকে ঘিরে ধরেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারধর করা হয় আমাদের।’’ তিনি জানান, এক বিক্রেতার টাকা চুরির জন্য সন্দেহ করা হয় তাঁদের। শুরু হয় অত্যাচার। প্রথমে চড়থাপ্পড়, পরে জুতো দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। এমনকি, পরনের পোশাক খুলে দেওয়া হয় তাঁদের। কাকুতিমিনতি করেও ছাড়া পাননি তাঁরা। ওই নির্যাতিতা বলেন, ‘‘আমাদের নগ্ন করে চুলের মুঠি ধরে মারধর করা হয়। হাতজোড় করে কাকুতিমিনতি করতে থাকি। কিন্তু কোনও অনুরোধে কাজ হয়নি। শেষে পুলিশ ওই অবস্থাতেই আমাদের নিয়ে যায়। এর পর আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে কোর্টে পাঠিয়ে দেয়। পুলিশ আমাদের কোনও কথা শোনেনি।’’

অন্য এক নির্যাতিতা বলেন, ‘‘কী চুরি হয়েছে জানিই না। আমরা বলছিলাম, আমরা কিছু নিইনি। তা-ও আমাদের ছাড়ল না। নগ্ন করে মারধর করল সকলে। যত জন মেয়ে ছিল ওখানে, সবাই মিলে আমাদের শাড়ি খুলে দিল। চিৎকার-চেঁচামেচি করলাম। কেউ কিছু শুনল না। মিষ্টি দোকানদার তখন ‘মার-মার’ বলছে।’’ ওই মহিলার অভিযোগ, পরে পুলিশ উদ্ধার করলেও তাঁদের চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। বরং তাঁদের অন্য মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়। দুই নির্যাতিতা দাবি করেন, নালাগোলা ফাঁড়িতে বিজেপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তাঁরা ছিলেন না। পুলিশকে সে কথা বলেছেন। তবু পুলিশ তাঁদের নামে মিথ্যা মামলা করে।

সোমবার বাড়ি ফিরে মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে নিজেদের চিকিৎসা করিয়েছেন দুই নির্যাতিতা। তাঁদের বাড়ি ফেরার খবর পেয়ে বিজেপির মালদহ দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক গৌরচন্দ্র মণ্ডল দেখা করতে যান। তিনি পুলিশের তীব্র নিন্দা করেন। এই ঘটনা নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কেউ কিছু বলতে চাননি। অন্য দিকে, পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, ‘‘বামনগোলাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। এখন কিছু বলা যাবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Malda Viral Video victims
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE