Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Justice Abhijit Gangopadhyay

‘শুনানির দিন এলে কলে জল আসে’! সমস্যা শুনতে আসন ছেড়ে উঠে গেলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়!

নকশালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েতের সেবদুল্লা গ্রামে পানীয় জলের অভাবের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, বহু আবেদন এবং নিবেদনের পরেও সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয় কিছু পরিবার।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ২২:৩১
Share: Save:

গরিব মামলাকারীদের সমস্যা শুনতে আসন ছেড়ে তাঁদের কাছে চলে এলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ঘণ্টাখানেক তাঁদের অভিযোগ, ভাল-মন্দের খবর নিলেন বিচারপতি। মঙ্গলবার এমনই দৃশ্য দেখা গেল কলকাতা হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের এজলাসে।

২০১৯ সাল থেকে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নকশালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েতের সেবদুল্লা গ্রামে পানীয় জলের অভাবের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, বহু আবেদন এবং নিবেদনের পরেও সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয় জলকষ্টে থাকা কিছু পরিবার। মামলাকরীদের অধিকাংশই আদিবাসী চা-শ্রমিক পরিবারের। সোমবার ওই মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। সমস্যা বুঝতে অভিযোগকারীদের এজলাসে ডেকে পাঠান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু শুনানির শুরুতেই গ্রামবাসীদের বক্তব্য ভাল করে শুনতে পারছিলেন না বিচারপতি। তাই বিচারপতির আসন ছেড়ে নীচে নেমে আসেন তিনি। গ্রামবাসীদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেন তিনি। সব শোনার পর বুধবার শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক দফতর, প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার-সহ আরও কয়েক জনকে দুপুর ২টোর মধ্যে এজলাসে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি।

মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবী সন্দীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘নকশালবাড়ির সেবদুল্লা গ্রাম দীর্ঘদিন ধরে জলের কষ্টে ভুগছে। সমস্যা সমাধানে বাসিন্দারা আদালতের দ্বারস্থ হন। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে লক্ষ্য করা যায়, ওই মামলার যখনই শুনানির দিন আসে, তখনই কল দিয়ে জল পড়তে শুরু করে। যেই শুনানি হয়ে যায় আবার জল বন্ধ হয়ে যায়। ওই সমস্যা বুঝতে বিচারপতি মামলাকারীদের তাঁর এজলাসে ডেকে পাঠান। কিন্তু শুনানি শুরু হবার পর বিচারপতি তাঁদের কথা ভাল করে শুনতে পাচ্ছিলেন না। তাই নিজেই আসন ছেড়ে নেমে এসে মামলা শোনেন। একজন বিচারপতির এমন ব্যবহারে মামলাকারীরা আপ্লুত।’’

দীপু হালদার নামে এক মামলাকারী বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে জলকষ্ট। আমরা পিএইচই দফতরে আবেদন করলে আমাদের গ্রামে কল লাগিয়ে দেওয়া হয়। জল সমস্যা মিটে যায়। বাড়ি বাড়ি জলের কানেকশন দিয়ে জল পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়। আমার বাড়িতেও সংযোগ দেওয়া হয়। তার পর আমার বাড়ির কল দিয়ে জল পড়ছে দেখিয়ে দিয়ে আমার থেকে আধার কার্ডের ফটোকপি নিয়ে নেওয়া হয়। তার পর থেকে আর জল পাচ্ছিলাম না। বিষয়টি বিভিন্ন মহলে দরবার করে সুরাহা না হওয়ায় আমরা আদালতের দ্বারস্থ হই।’’ সরকার পক্ষের আইনজীবী হীরক বর্মণ অবশ্য দাবি করেছেন যে অভিযোগ সঠিক নয়। কারণ, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কাজ এখনও চলছে। মাঝেমধ্যে হাতির হানা কিংবা ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য পাইপ ফেটে জল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘বিচারপতি আজ মামলাকারীদের ডেকেছিলেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে পাঁচ জন জানিয়েছেন যে তাঁরা জল পাচ্ছেন। সব কিছু শোনার পর বুধবার ওই প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের এইও, পিএইচই দফতরের ইঞ্জিনিয়ার-সহ আরও কয়েক জনকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Justice Abhijit Gangopadhyay Jalpiaguri Circuit Bench Calcutta High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy