‘স্টার’ নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছেন। স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার। সে স্বপ্ন পূরণও হয়েছিল। কিন্তু আদালতের রায়ে সেই স্বপ্নের চাকরি চলে গিয়েছে মৃত্যুঞ্জয় বর্মণের। কোচবিহারের দিনহাটার পুঁটিমারির বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় শীতলখুচির আবুয়ার-পাথার জুনিয়র হাইস্কুলের ‘টিচার ইনচার্জ’। অনলাইন পোর্টালে স্কুলের বাকি শিক্ষকদের বেতন সংক্রান্ত তথ্য বা রিক্যুইজ়িশন জমা দেওয়ার দায়িত্ব তাঁরই। চাকরি হারিয়ে এই পরিস্থিতিতে তিনি সেই তথ্য জমা দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রতি মাসে শিক্ষা দফতরের ‘স্যালারি পোর্টাল’-এ শিক্ষকদের বেতন সংক্রান্ত তথ্য জমা দিতে হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষককে। মৃত্যুঞ্জয়ের প্রশ্ন, ‘‘আমার চাকরি চলে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমি কি ওই কাজ চালু রাখতে পারবো? আমার জন্য যাতে অন্য শিক্ষকদের অসুবিধা না হয়, সে কথা জানিয়ে আমি শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের ব্যবস্থা নিতে আর্জি জানিয়েছি।’’ মাথাভাঙার সহকারি স্কুল পরিদর্শক মনোজকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুলে বাকি আরও দু'জন শিক্ষিকা রয়েছেন। তাঁদের এক জনকে দায়িত্ব দিলে সমস্যা মিটে যাবে।’’
বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা আবুয়ার-পাথার জুনিয়র হাইস্কুল। স্কুলে ছাত্রছাত্রীরা সংখ্যা মাত্র ৭০ জন। ওই স্কুলে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক ছাড়াও দু'জন সহকারি শিক্ষক ও এক জন শিক্ষাকর্মী ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীর চাকরি যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে স্কুলটি।
মৃত্যুঞ্জয় জানান, ২০০৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় তাঁর আশি শতাংশের উপরে নম্বর ছিল। এর পরে উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে— সর্বত্র ভাল ফল। অপার প্রাইমারি ও নবম-দশম, দু’টি চাকরির লিখিত পরীক্ষায় সফল হন। নবম-দশমে জলপাইগুড়ির একটি স্কুলে কাজে যোগ দেন। ২০২১ সালে বদলি হয়ে শীতলখুচির ওই স্কুলে যোগ দেন। পরে তাঁকে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বহু দিন একাই স্কুলের দায়িত্ব সামলাতে
হয়েছে তাঁকে।
মৃত্যুঞ্জয়ের কথায়, ‘‘যোগ্যদের চাকরি যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। চাকরি হারিয়ে এখন আমরা কী করব, বুঝে উঠতে পারছি না। খুব চিন্তার মধ্যে দিন কাটছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)