বাবাকে দিয়ে মার খাওয়ানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ‘প্রাক্তন প্রেমিকা’। পাল্টা তাঁর পরিবারকে খুন করে ‘প্রতিশোধ’ নিলেন শীতলখুচির যুবক!
পঞ্চায়েত সদস্যার মেয়ে ইতি বর্মণের সঙ্গে চার বছরের সম্পর্ক ছিল স্থানীয় বাসিন্দা বিভূতিভূষণ রায়ের। সেই সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন ইতি। কিন্তু বিভূতিভূষণ চাইছিলেন আবার ইতির কাছে ফিরতে। মাঝেমাঝেই তিনি ইতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতেন। কিন্তু ইতি কোনও ভাবেই আর তাঁর কাছ থেকে ফিরতে চাননি। এই আক্রোশেই প্রেমিকার পঞ্চায়েত সদস্যা মা, বাবা এবং দিদিকে কুপিয়ে খুন করেন বিভূতিভূষণ। ‘প্রাক্তন প্রেমিকা’ ইতি মারাত্মক ভাবে জখম হয়েছেন। এবং এই ঘটনার পরেও বিভূতিভূষণের কোনও আক্ষেপ নেই।
শুক্রবার ভোরে তীব্র চিৎকার শুনে পঞ্চায়েত সদস্যা নীলিমা বর্মণের বাড়িতে ছুটে যান পড়শিরা। গিয়ে দেখেন, নীলিমা, তাঁর স্বামী বিমলকুমার বর্মণ (৬৮) এবং তাঁদের বড় মেয়ে রুনা বর্মণ (২৪) রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ির মেঝেতে পড়ে আছেন। তাঁদের মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে নীলিমা ও তাঁর স্বামীকে বিমলকুমারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। পরে বড় মেয়েকে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁরও মৃত্যু হয়। ছোট মেয়ে ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এই খুন। তদন্তে তারা জানতে পেরেছে ইতিকে সম্পর্কে ফেরার জন্য চাপ দিলে তিনি তাঁর তৃণমূল নেতা বাবার (তৃণমূলের শীতলখুচি এসসিএসটি ব্লক সভাপতি) নাম করে বিভূতিভূষণকে হুঁশিয়ারি দেন। এর পর পাল্টা ‘ছক কষেন’ বিভূতিভূষণ। ইতির এই হুঁশিয়ারিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে তাঁকে প্রাণে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার ভোরের আলো ফোটার আগেই ইতির বাড়ির সামনে অপেক্ষায় ছিলেন বিভূতিভূষণ। পরিকল্পনা ছিল পরিবারের কেউ বাড়ির দরজা খুললেই ভিতরে গিয়ে প্রেমিকাকে খুন করবেন। সঙ্গে ছিল দু’টি ধারালো অস্ত্র।
সকালে ইতির মা নীলিমা প্রথমে দরজা খুলে বাড়ির বাইরে পা রাখেন। দরজা খোলা পেয়ে তাঁর চোখের আড়ালে ঘরে ঢুকে পড়েন বিভূতিভূষণ। কিন্তু তিনি ইতির বাবা বিমলের মুখোমুখি হন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বুকে চাকু বসিয়ে দেন বিভূতিভূষণ। ধস্তাধস্তির শব্দ শুনে পাশের ঘর থেকে ছুটে আসেন ইতি এবং তাঁর দিদি। দুই বোনের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় বিভূতিভূষণের। তার মধ্যেই ঘরে ঢোকেন নীলিমা। দুই মেয়ে এবং বিভূতিভূষণকে ওই ভাবে দেখে তিনি আর্তনাদ শুরু করেন। তখন বিভূতিভূষণ নীলিমার উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। ধারালো অস্ত্রের ঘায়ে মাটিতে লুকিয়ে পড়ে ওই পঞ্চায়েত সদস্যা। এর পর ইতির দিদিকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন বিভূতিভূষণ। এবং সব শেষে চড়াও হন ইতির উপরে। কিন্তু তত ক্ষণে চিৎকার চেঁচামেচিতে প্রতিবেশীরা ছুটে আসায় ইতিকে ফেলে দিয়ে পালাতে যান বিভূতিভূষণ। স্থানীয়রা তাঁকে পাকড়াও করে মারধর শুরু করেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, এমন অপরাধের পরও বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই বিভূতিভূষণের। এলাকাবাসীর মারধরে জখম ওই যুবককে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানেই পুরো ঘটনার বিবরণ দেন তিনি। বিভূতিভূষণ জানান ইতির সঙ্গে তার চার বছরের প্রেম ছিল। কিন্তু ইতি ‘ব্রেকআপ’ করে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘ও বলেছিল ওর বাবাকে দিয়ে আমায় পেটাবে। আমিও বলি, তা হলে দেখা যাক কে কী করতে পারে।’’
অন্য দিকে, একে নিছক সম্পর্কের কারণে খুন বলতে নারাজ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘‘সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই তিন তিনটে খুনের পিছনে বড় কোনও ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। থাকতে পারে বিজেপির মদতও।’’ তাঁর দাবি, বিভূতিভূষণের দাদু বিজেপি করেন।
যদিও তৃণমূল জেলা সভাপতির এই তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। তাদের জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ। তাই এ সব বলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছেন। এই ঘটনাকে সামনে রেখে পঞ্চায়েত নির্বাচন পঞ্চায়েত ভোটের বৈতরণী পার করার চেষ্টা চালাচ্ছে শাসকদল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy