ফাইল চিত্র।
করোনার সংক্রমণ নিয়ে এ বছর এ পর্যন্ত ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন শুধু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অধিকাংশই মারা গিয়েছেন এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে। তার মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউ যখন আছড়ে পড়েছে মে-জুন মাসে তখন মারা গিয়েছেন সব চেয়ে বেশি। হাসপাতালের রিপোর্ট বলছে, করোনা সংক্রমণ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি রোগীদের অন্তত ৩০ শতাংশের মৃত্যু হচ্ছে। এই তথ্য নিয়ে হইচই পড়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার মান নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই আক্রান্তদের দেরিতে চিকিৎসা করাতে আসা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীদের একটা বড় অংশ অনেক দেরিতে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের অনেকের চিকিৎসা করার সময়টুকু মেলেনি। ভর্তির এক-দু’দিনের মধ্যে মারা গিয়েছেন অনেকে।
হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ‘‘অনেক রোগী চিকিৎসা করাতে অনেক দেরিতে হাসপাতালে এসেছেন। কোমর্বিডিটি রয়েছে যাঁদের, সেই রোগীদের অনেক আগেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত। বিশেষ করে কিডনি, শ্বাসকষ্ট, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের মতো রোগী যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ তা তাঁরা করেননি। আমাদের কাছে বিস্তারিত তথ্যও রয়েছে। তা দেখলেই বোঝা যাবে।’’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের ভর্তি দেরিতে হওয়াকে মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখাতে চাইলেও বাসিন্দাদের একাংশ এবং হাসপাতালের কর্মীদের অনেকেই পরিকাঠামোর ঘাটতিকেও সমানভাবে দায়ী করেছেন। অভিযোগ, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এপ্রিলে যখন শুরু হয় তখন মেডিক্যালে পরিকাঠামোর ঘাটতি ছিল। শয্যার অভাব ছিল, কোভিডের চিকিৎসায় পর্যাপ্ত আইসিইউ ছিল না। রোগীদের সময়ে খাবার দেওয়া থেকে দেখভাল— বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পরিষেবায় খামতি ছিল। খাবার জলও পর্যাপ্ত মিলত না বলে অভিযোগ। এমনকি, হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে শয্যা না পেয়ে রোগী ফিরে গিয়েছেন, এমন দৃষ্টান্তও আছে। পরে ধরাধরি করে কোনও রকমে ভর্তি হতে পেরেছেন বলে অভিযোগ। রোগী ঠিক মতো অক্সিজেন পাচ্ছেন কি না সে সব নজরদারির গাফিলতি নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। জনস্বাস্থ্য দফতরের উত্তরবঙ্গের ওএসডি সুশান্ত রায় অবশ্য আগেও জানিয়েছিলেন, রোগীদের অনেকেই বাড়িতে বসে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। এমনকি, কোমর্বিডিটি থাকা সত্ত্বেও। যখন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে তাঁদের ভর্তি করানো হয়েছে তখন পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকের কিছু করার ছিল না।
পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে শুরু করলে মৃত্যু লাফিয়ে বাড়তে থাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। ওই মাসে ৯৫ জন মারা যান। মে মাসে রেকর্ড সংখ্যক ৩৩২ জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়। জুনে মারা যান ১৩২ জন। দার্জিলিং জেলা তো বটেই, জলপাইগুড়ি জেলার প্রচুর রোগী উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে চিকিৎসা করাতে ভর্তি হন। তার মধ্যে অনেকে জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে থাকা শিলিগুড়ি পুরসভার ১৪ টি সংযোজিত ওয়ার্ডের বাসিন্দা। কালিম্পং, ইসলামপুর তথা উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার থেকেও রোগীরা আসেন করোনার সংক্রমণ নিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে রেফার হয়ে। জলপাইগুড়ি জেলার বাসিন্দা ৬৮০ জনের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন। মারা গিয়েছ্নে অন্তত ২০৭ জন। দার্জিলিং জেলার ১০৩০ জন রোগীর মধ্যে মারা গিয়েছেন অন্তত ৩৩৩ জন রোগী। বিহার থেকেও অনেক রোগী এসেছেন করোনার সংক্রমণ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি হতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy