সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরিহারা গৌড়বঙ্গের শিক্ষক-শিক্ষিকা বা শিক্ষাকর্মীরা কেউই শুক্রবার আর স্কুলমুখী হলেন না। কেউ ঘরবন্দি দিন কাটালেন, কেউ পরিস্থিতি আঁচ করতে আইনজীবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত থাকলেন। এ দিকে, যোগ্য শিক্ষকদের পুনর্বহালের দাবিতে এ দিন তিন জেলাতেই পথ অবরোধ থেকে শুরু করে প্রতিবাদ সভা, মিছিল হল বিভিন্ন দল ও সংগঠনের তরফে।
মালদহের বামনগোলা ব্লকের পাকুয়াহাট এএনএম হাই স্কুলের ৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ২ জন শিক্ষাকর্মী চাকরি খুইয়েছেন। ৩৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে ৮ জনেরই চাকরি যাওয়ায় বিপাকে কর্তৃপক্ষ। এ দিন প্রধান শিক্ষককেও গিয়ে ক্লাস নিতে হয়েছে। প্রধান শিক্ষক তপনচন্দ্র সরকার বলেন, “৮ জন শিক্ষকের চাকরি যাওয়ায় পরীক্ষা কী করে চালাব বা ক্লাস কাদের দিয়ে নেওয়ানো হবে সেটাই বুঝতে পারছি না। দু’জন শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যাওয়ায় স্কুলের সমস্ত ক্লাসের তালা কে খুলবে বা ক্লাস শেষের ঘণ্টা কে বাজাবে সেই লোকই নেই।” গাজলের হাতিমারি হাই স্কুলের ১১ জন শিক্ষক ও ৩ জন শিক্ষাকর্মী চাকরিহারা। চাঁচলের শীতলপুর মোবারকপুর হাই স্কুলেরও ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে। এ দিকে, যোগ্য শিক্ষকদের পুনর্বহালের দাবিতে এ দিন সন্ধ্যায় রাজমহল রোড মোড়ে প্রতিবাদ সভা করে এবিটিএ, এবিপিটিএ, সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠন-সহ অন্য শাখা সংগঠনগুলিও।
স্কুলে শিক্ষক ও শিক্ষিকা ছিলেন ৪৮ জন। ১০ জন শিক্ষক ও এক শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছে রায়গঞ্জের মহারাজাহাট হাই স্কুলে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক জিতেন্দ্রনাথ মাহাত বলেন, “স্কুলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও শিক্ষাবিজ্ঞান বিষয়ের দু’জনেরই চাকরি গিয়েছে। এখন কী ভাবে ওই দুই বিষয়ে ক্লাস চলবে বুঝতে পারছি না।” জেলার অন্যতম নামী স্কুল রায়গঞ্জের করোনেশন হাই স্কুলের এক শিক্ষক ও দু’জন শিক্ষাকর্মীর চাকরি গিয়েছে। এ দিকে চাকরি যাওয়ার জেরে রায়গঞ্জ ব্লকের বিন্দোল হাই স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের কোনও শিক্ষক রইল না। এক জন শিক্ষক দিয়ে চলছিল গোয়ালপোখরের দেওনা জুনিয়র হাই স্কুল। সেই শিক্ষকের চাকরি না থাকায় স্কুল বন্ধের যোগাড়। গোয়ালপোখরের গোয়াগাঁও হাই স্কুলে ৯ জন শিক্ষক বাতিলের তালিকায়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্কুলের দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর চাকরি গিয়েছে। শুক্রবার প্রধান শিক্ষিকা নবনীতা সরকার স্কুলের গেট খুললেন। রায়গঞ্জের উদয়পুর গার্লস হাই স্কুলের ঘটনা। করণিক রুবি সিংহ বিভিন্ন ক্লাস শেষ হওয়ার পর ঘণ্টা বাজান। নবনীতা বলেন, “চতুর্থ শ্রেণির দুই কর্মীর চাকরি চলে যাওয়ায় স্কুলের বিভিন্ন কাজে সমস্যা তৈরি হয়েছে।”
এদিন যোগ্যদের পুনর্বহালের দাবিতে এবিভিপি পথ অবরোধ করে রায়গঞ্জ শহরের বিবেকানন্দ মোড়ে। হেমতাবাদে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিজেপি। সন্ধ্যায় ঘড়িমোড়ে পথসভা ও বিক্ষোভ দেখায় এবিটিএ।
এক সঙ্গে ছয় জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশকারি হাই স্কুলে। এদের মধ্যে সঙ্গীতা বসাক নামে এক শিক্ষিকা আবার প্রাথমিকের চাকরি ছেড়ে এসে এসএসসির চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য পুরনো জায়গায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু তিনি বলেন, “সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু আদৌ তা হবে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন। সবটাই ধোঁয়াশায় রয়েছে।” যোগ্য প্রার্থীদের পুনর্বহালের দাবিতে শুক্রবার বালুরঘাট শহরে মিছিল করে এবিটিএ।
তথ্য: গৌর আচার্য, মেহেদি হেদায়েতুল্লা, অভিজিৎ পাল, নীহার বিশ্বাস
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)