হুমকি প্রথা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ করে, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এর বিষময় ফল এখন আর অজানা নয় কারও। আর জি কর কাণ্ডের পরে হুমকি প্রথার দিকে যে আঙুল উঠেছে, তার সঙ্গে উত্তরবঙ্গ লবি-র নাম জড়িয়েছে। ভিতরে ভিতরে অবস্থা এমনই, এখন পড়ুয়াদের সঙ্গে খারাপ কোনও কিছু ঘটলে সন্দেহের তির প্রথমেই হুমকি প্রথার দিকেই ওঠে। দিন কয়েক আগে কোচবিহার মে়ডিক্যাল কলেজের হস্টেল (নার্সিং স্টাফদের জন্য তৈরি ভবন, যেখানে পড়ুয়াদের রাখা হচ্ছে) বিহারের বাসিন্দা এক ছাত্রের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরেও সেই সন্দেহ দানা বেঁধেছে অনেকের মনে। তাঁর পরিবারের লোকদের সন্দেহ, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন ওই পড়ুয়া। তবে সেই চাপ কোথা থেকে দেওয়া হয়েছে, তা তাঁরা স্পষ্ট ভাবে বলতে পারেননি। পুলিশ যদিও ওই ঘটনাকে প্রেমঘটিত বিষয় বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে।
ওই ছাত্র হুমকি প্রথার বলি কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনও যে তার আশঙ্কা রয়েছে, তা মালদহ মেডিক্যাল থেকে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল বা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়।
চাপের মুখে উত্তরবঙ্গ লবি কিছুটা পিছু হঠলেও, ফের যে সেই গোষ্ঠী সক্রিয় হবে না, এমন মনে করেন না আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের একাংশ। বরং সামনে কলেজে কলেজে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হলে, ফের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে বলে অনেকেরই সন্দেহ।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ‘লবি’ যে ভাবে বাসা বেঁধেছিল, তার বিভিন্ন দিক ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। এমন কয়েক জন নেতা কলেজের প্রাক্তনী হয়েও হস্টেলে ঘর নিয়ে নিজের মতো করে সাজিয়ে সেখানে কী করে থাকতেন, তা ভেবে অনেকেই হতবাক হয়েছেন। উত্তরবঙ্গের চিকিৎসকদের অনেকে এখনও এই ধরনের ঘটনা মেনে নিতে পারেন না। বিশেষ করে, হুমকি প্রথা হাতিয়ার করে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলির একাংশে পরীক্ষা ব্যবস্থাকে যে ভাবে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছিল, তাতে অনেকেই বিপদের আশঙ্কা করেছেন। যে ভাবে মুড়ি-মুড়কির মতো এমডি, এমএস পরীক্ষায় পড়ুয়াদের পাশ করানো হয়েছে, সে সব দেখে মালদহ থেকে শিলিগুড়ি— বিভিন্ন শহরের চিকিৎসকদের অনেকেই উদ্বিগ্ন। ভবিষ্যতে যে সমস্ত
চিকিৎসক তৈরি হবেন, তাঁদের দক্ষতা কী হবে, তা নিয়ে তাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সমাজের কাছে তা বিপজ্জনক হতে পারে বলেও তাঁদের অভিমত। চিকিৎসক-শিক্ষকদের একাংশকেও আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে।
এ সবের রেশ না মিটলেও সম্প্রতি চিকিৎসা ক্ষেত্রে শাসক-দল ‘মনোভাবাপন্ন’ চিকিৎসক, কর্মী, আধিকারিকদের রেখে একটি সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ লবির সঙ্গে যুক্ত, এমন একাংশ নেতাদের নামও রয়েছে সেই তালিকায়। সে কারণে সন্দেহ ফের বাসা বাঁধছে বলেও অনেকে আলোচনা করছেন। হুমকি প্রথার মতো বিষয় প্রতিরোধের পরিবর্তে যদি ফের প্রতিশোধের নেশা কোনও ভাবে উসকে ওঠে, তার ফল ভাল হবে না বলেই চিকিৎসক মহলের একাংশ এখন থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)