ধানি জমির এক কোণে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলপ্রকল্প। ঠিক তার পাশে বর্জ্য থেকে সার তৈরির নবনির্মীত ঘর। সোমবার সকালে গ্রামবাসীদের একাংশকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে সরকারি প্রকল্প দু’টির কাজ বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দিলেন হবিবপুরের হরিপুর গ্রামের এক আদিবাসী পরিবার।
অভিযোগ, সরকারি প্রকল্পে জমি দিলেও প্রতিশ্রুতি মতো জমিদাতার পরিবারকে চাকরি দেওয়া হয়নি। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জমিদাতার চাকরি হাতানো চেষ্টা করছেন বলে প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ করেন তাঁরা। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, “জমি নেওয়া হয়ে থাকলে নিয়ম অনুযায়ী সুবিধা দেওয়া হবে। ব্যাপারটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।” প্রশাসনের দাবি, ২০২৬ সালের মধ্যে জেলার প্রতিটি বাড়িতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পরিস্রুত পানীয় জলের রিজার্ভার তৈরির কাজ চলছে। জমির সমস্যা মেটাতে জমিদাতার পরিবারকে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে পাম্প অপারেটরের চাকরি দেওয়া হচ্ছে। অথচ হবিবপুরের জাজইল পঞ্চায়েতের হরিপুরের শ্রীনাথ হেবব্রমকে কোনও সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। শ্রীনথের জমিতে জল এবং বর্জ্য থেকে সার তৈরির প্রকল্প তৈরি হলেও সংশ্লিষ্ট দফতরের তরফে যোগাযোগই করা হয়নি। এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে হবিবপুরের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি কিস্টু মুর্মুর। জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালে শ্রীনাথের জমিতে প্রকল্প দুটি তৈরির কাজ শুরু হয়। সে সময় জাজইল অঞ্চলের প্রধান ছিলেন কিস্টুর স্ত্রী মিনতি টুডু। কিস্টু প্রলোভন দিয়ে জমিটিতে সরকারি প্রকল্প তৈরির কাজে উদ্যোগী হন বলে অভিযোগ শ্রীনাথের ছেলে অবিনাশ মুর্মুর। তিনি বলেন, “সরকারি চাকরির প্রলোভন দিয়ে কিস্টু আমাদের চাষের জমিটি নেয়। এখন প্রকল্পের কাজ শেষ হতে চলেছে। অথচ, প্রতিশ্রুতি মতো চাকরির কোনও নথি পাইনি। উল্টে কিস্টু আমাদের চাকরি হাতানোর চেষ্টা করছেন। প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনে অভিযোগ জানানো হয়েছে।”
হবিবপুরের বিজেপি বিধায়ক জুয়েল মুর্মু কটাক্ষ করে বলেন, “জমি অধিগ্রহণ নীতির বিরোধিতা মুখ্যমন্ত্রী সব সময় করেন। অথচ তাঁর দলের নেতারা আদিবাসীদের জমি দখল করছেন। দলে নম্বর বাড়ানোর জন্য গরিব মানুষের জমিতে সরকারি প্রকল্প করাচ্ছেন।” কিস্টু বলেন, “শ্রীনাথের পরিবার যাতে সরকারি সুযোগ পায়, সে জন্য নানা দফতরে দরবার করছি। আমার নামে তাঁরা কেন এই অভিযোগ করছেন, তা বুঝতে পারছি না।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)