দরমার ঘরে দিনযাপন করছে বহু মানুষ। — ফাইল চিত্র।
কেউ প্ৰতিবন্ধী, থাকার ঘর নেই বললেই চলে। কেউ দিনমজুর, ভাঙা ঘরে রাত কাটান। অভিযোগ, তাঁদের নাম নেই আবাস যোজনার তালিকায়। নাম রয়েছে তুলনায় অনেক স্বচ্ছল বাসিন্দার। তাঁদের কেউ কেউ আবার শাসক দলের নেতা-কর্মী। প্রশ্ন উঠেছে, চার বছর আগে যখন আবাস যোজনার সমীক্ষা হয়েছে, তখন ওই দরিদ্র মানুষদের নাম কেন যুক্ত করা হয়নি তালিকায়! ওই বাসিন্দাদের ঘর পাওয়ার আর কি সুযোগ রয়েছে?
বিরোধীরা এই পরিস্থিতির জন্য শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুলেছে। তাদের দাবি, চার বছর আগে আবাস যোজনার সমীক্ষার সময়ে শাসক শিবির নিজেদের নেতা-কর্মী, তাদের আত্মীয়-পরিজনদের নাম তালিকায় যুক্ত করেছে। প্রকৃত দাবিদারদের নাম বাদ পড়েছে। শাসক শিবির অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে ইতিমধ্যেই নিজেদের নেতা-কর্মীদের নাম আবাস তালিকা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি উমাকান্ত বর্মণ বলেন, ‘‘আবাস তালিকায় সমীক্ষার কাজ শেষের পথে। ধাপে ধাপে প্রত্যেকে ঘর পাবেন।’’
কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের হাড়িভাঙার রাশিডাঙা গ্রামের বাসিন্দা শুক্র বর্মণের তিন সন্তান নিয়ে সংসার। ১২ বছরের বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী। দরমার বেড়া দেওয়া ঘরে প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে কোনও ভাবে দিন গুজরান করেন। তাঁকে কোনও ঘর দেওয়া হয়নি। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান শঙ্কর দেবনাথ বলেন, ‘‘কেন এমন গরিব মানুষের নাম তালিকা থেকে বাদ গেল বুঝতে পারছি না! আমরা আবেদন করেছি যাতে এমন নাম যুক্ত করা হয়।’’ শুক্র বর্মণ বলেছেন, ‘‘বৃষ্টির সময়ে জল পড়ে। ঠান্ডার সময়ে শিশির। গরমেও ঘরে থাকতে পারি না। ঘর তৈরির টাকা নেই আমাদের। অথচ, আমার নামই নেই আবাস তালিকায়।’’
তুফানগঞ্জ ২ ব্লকের মহিষকুচি ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের, কাঠালবাড়ির বাসিন্দা বিনা মহন্ত ভিক্ষী করে সংসার চালান। জরাজীর্ণ বাড়ি তাঁর। তিনি জানান, আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা পাশের বেশ কিছু বাড়িতে সমীক্ষায় গেলেও, তাঁর বাড়িতে যাননি। পরে তাঁদের কাছে জানতে পারেন, সরকারি আবাস যোজনার তালিকা তাঁর নাম নেই। তুফানগঞ্জ ২ ব্লকের মহিষকুচি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের আর এক বাসিন্দা বিমল বর্মণের নাম আবাস যোজনায় নেই। স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর দু’জনের সংসার। বিমল দিনমজুরি করে সংসার চালান। তিনি বলেন, ‘‘যেটুকু আয় হয়, তা দিয়ে কোনওমতে চলে সংসার। আমার কাঁচা বাড়ি। অথচ, ঘর পাইনি।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলায় প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষের নাম আবাস তালিকায় রয়েছে। গোটা রাজ্যে ওই সংখ্যা ৫০ লক্ষ। প্রথম দফায় ১১ লক্ষের কিছু বেশি মানুষকে ঘর দেওয়া হবে। পরে, ধাপে ধাপে ঘর দেওয়া হবে। এই মুহূর্তে তালিকায় নতুন নাম যোগ করার কোনও সুযোগ নেই। শাসকের দাবি, চার বছর আগে আবাস তালিকার সমীক্ষায় কোনও হস্তক্ষেপ করেনি তারা। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, ‘‘আমাদের অনেক পঞ্চায়েত সদস্য গরিব মানুষ। তার পরেও দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য আবাস তালিকা থেকে প্রত্যেকের নাম বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।’’ বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসুর দাবি, ‘‘শাসকদলের জন্যই গরিব মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবে জবাব তাদেরই দিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy