মদনমোহন বাড়িতে এসে পূজা দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সুকান্ত মজুমদার, শুক্রবার কোচবিহার মদনমোহন মন্দিরে। ছবিঃ মুক্তাঙ্কন বর্মণ
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সফর ঘিরে শুক্রবার তপ্ত হল কোচবিহারের রাজনৈতিক আবহ। হল পথ অবরোধ, মিছিল, পাল্টা মিছিল। সাংগঠনিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে কোচবিহারে আসেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। এ দিন সকালে তিনি দলের জেলা কার্যালয়ে লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি পর্যালোচনায় বৈঠক করেন। অভিযোগ, বিকেলে কোচবিহার থেকে দিনহাটার দিকে রওনা হলেও, শেষ পর্যন্ত ‘পুলিশের আপত্তিতে’ সেখানে যেতে পারেননি তিনি। কোচবিহার শহরের মরাপোড়া চৌপথি এলাকায় প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় বসে পড়েন সুকান্ত-সহ দলের নেতা, কর্মীরা। মাথাভাঙা, নিশিগঞ্জ, দিনহাটা-সহ একাধিক এলাকায় সুকান্তকে দিনহাটা যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির কর্মীরা। পক্ষান্তরে, দিনহাটায় সুকান্তের সফরের আগে, ঝাঁটা-মিছিল করেন তৃণমূলের মহিলা সংগঠনের সদস্যারা। পাল্টা মিছিল করে বিজেপিও। বিজেপির দাবি, দিনহাটায় ৫০-৬০ জন তৃণমূল কর্মী কালো পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু দিনহাটায় ‘আক্রান্ত’ কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে যেতে চেয়েছিলেন রাজ্য সভাপতি। মরাপোড়া চৌপথিতে দাঁড়িয়ে বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি সুকুমার রায় দাবি করেন, “বিজেপি কর্মীদের সামনে ওদের লোকেরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না বুঝে, ভয় পেয়েছে তৃণমূল। সে জন্য বিজেপির রাজ্য সভাপতি যাতে যেতে না পারেন, সে পরিকল্পনা পুলিশকে দিয়ে করানো হয়।” বিজেপির কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে জানান, পরে, সুকান্ত বলরামপুরের কর্মসূচির উদ্দেশে যান। জেলা পুলিশের কর্তারা বিজেপির অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেননি। তবে পুলিশের এক কর্তার দাবি, দিনহাটায় রাজনৈতিক গোলমালের আশঙ্কা ছিল। ‘ভিআইপি’-র নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়। যার জেরে দিনহাটা যাত্রায় আপত্তি জানান হয়। তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায় অবশ্য বলেন, “বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে জেলায় অশান্তি তৈরির চেষ্টা করছে। ওদের রাজ্য সভাপতির উপস্থিতিতে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে বলেই পুলিশ হয়তো আপত্তি করেছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।”
এ দিন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের গ্রেফতারের দাবি জোরালো করতে দিনহাটা থানার সামনে আন্দোলন করে তৃণমূল। শুক্রবার ওই কর্মসূচির আগে দিনহাটা শহরে মিছিলও করে। পরে থানার সামনে বসে পড়েন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। নিশীথের গ্রেফতারের দাবিতে সুর চড়ান তৃণমূলের নেতারা।
বৃহস্পতিবার খুনের মামলায় খুনের চেষ্টার ধারায় অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি পরবর্তী ‘সার্কিট’-এ (কলকাতা হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ পরবর্তী যবে বসবে) পাঠায় বিচারপতি সূর্যপ্রকাশ কেশওয়ানি এবং রাই চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। সে সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আরও কোনও ফৌজদারি অভিযোগ বা মামলা আছে কি না, তার হলফনামাও চায়। ২০১৮ সালের একটি মামলায় আগাম জামিনের আবেদন কলকাতা হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি বেঞ্চে করেছিলেন নিশীথ। এই মামলায় আগে থেকেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়ে রয়েছে। আগামী মে মাসের মধ্যে সে পরোয়ানা কার্যকর করার নির্দেশ রয়েছে বলে সরকার পক্ষের দাবি।
সে মামলাতেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর গ্রেফতারের দাবিতে দিনহাটা থানার সামনে অবস্থান-বিক্ষোভের কর্মসূচি নেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক, প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ, বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া-সহ জেলার নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে স্থানীয় আইসি এবং সামগ্রিক ভাবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন উদয়ন। তাঁর দাবি, ‘‘কোচবিহার জেলার কিছু পুলিশ অফিসারের টিকিট বাঁধা আছে বিজেপির সাথে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে রক্ষা করতে গেলে, বাঁচার আন্দোলনকে রক্ষা করতে গেলে, এঁদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে হবে।" সুকান্তের পাল্টা চ্যালেঞ্জ, “চেষ্টা করে দেখুন। উদয়ন গুহের কত দম দেখি! ওঁকেই গ্রেফতার করা উচিত।” দিনহাটার আইসি মন্তব্য করেননি। কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্যের সঙ্গে এ দিন বহু চেষ্টাতেও যোগাযোগ করা যায়নি। জবাব মেলেনি মেসেজের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy