—প্রতীকী চিত্র।
শিলিগুড়ির হাসপাতালে নার্সের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে চিরকুট উদ্ধার করল পুলিশ। মনে করা হচ্ছে, সেটি ‘সুইসাইড নোট’। চিরকুটের বয়ান থেকে আত্মহত্যা বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের। কিন্তু চিরকুটের শেষের একটি লাইন ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছে তারা। ওই বয়ান ভাবাচ্ছে মৃতার পরিবারকেও।
শুক্রবার রাতে শিলিগুড়ির মিলনপল্লির মুকুন্দদাস এলাকার একটি মহিলা হস্টেল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় এক যুবতীর দেহ উদ্ধার হয়। শিলিগুড়ির একটি হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, দেহ উদ্ধারের পর ওই নার্সকে যখন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন তাঁর হাতের মুঠো থেকে একটি চিরকুট মেলে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই কাগজে বেশ কয়েকটি লাইন লেখা রয়েছে। লেখা আছে, তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন। মৃতার বাবা-মায়ের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। শেষ লাইনে লেখা, ‘আমার প্রচণ্ড ভয় করছে।’ এর অর্থ খুঁজছি আমরা।’’ ধন্দে পরিবারও। মৃতার ভাই বলেন, ‘‘আমরা বুঝতে পারছি না, কিসের ভয়ের কথা বলতে চেয়েছে ও। বাবা-মায়ের প্রতি ভালবাসার কথা লিখেছে। ওর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়, সে কথা জানিয়েছে। কিন্তু শেষের কথাটা কেন লিখল, বুঝছি না। আমরা তদন্তকারীদের উপরই ভরসা রাখছি।’’
মৃত নার্সের বাড়ি দার্জিলিংয়ের পন্নামে। পরিবারের সদস্যদের দাবি, শুক্রবার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা নাগাদ তারা মেয়ের মৃত্যুর খবর পায়। কিন্তু মেয়ে মারা গিয়েছেন তারও অনেক আগে । কেন তাঁদের মৃত্যুর পরই খবর দেওয়া হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মৃতার মা। তিনি জানান, পুজোর ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলেন মেয়ে। দু’দিন বাড়িতে কাটিয়ে আবার কাজে ফেরেন। দিন তিনেক হল হাসপাতালের কাজে যোগ দিয়েছিলেন। নাইট ডিউটি সেরে শুক্রবার সকালে হস্টেলে ফিরে তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। মৃতার মায়ের কথায়, ‘‘তখনও ও স্বাভাবিক ছিল। হাসিখুশি ছিল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কী এমন হল যে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ও?’’ তাঁর দাবি, মেয়ে আত্মহত্যা করেননি। নেপথ্যে কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে। ওই মহিলার কথায়, ‘‘মেয়ের এক সহকর্মী আমাদের জানায় যে ও আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না। আত্মহত্যা করার মেয়ে নয় ও। সব সময় হাসিখুশি থাকা একটা মেয়ে। কিছু হলে আমাকে জানাত। শুক্রবার আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। তখনও কোনও সমস্যার কথা জানাতে পারিনি।’’
পরিবার সূত্রে খবর, বছর চারেক হল শিলিগুড়ির হাসপাতালে কাজ করছিলেন ওই নার্স। এর মধ্যে কোনও অসুবিধার কথা জানতে পারেনি তারা। হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার কুমার চৌধুরী বলেন, “যে হস্টেলে উনি (মৃতা নার্স) থাকতেন, সেখানে অনেক মহিলা কর্মী থাকেন। বেশ কয়েক জনের পরিবারের সদস্যরাও থাকতেন।’’ হস্টেলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সে প্রসঙ্গে জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘‘কেন সিসিটিভি লাগানো হয়নি, তা খতিয়ে দেখব আমরা। আমরাই পুলিশকে খবর দিয়েছিলাম। এলাকাবাসী বা কাউন্সিলরেরা কে কী অভিযোগ করছেন, তা নিয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না।’’ অন্য দিকে, স্থানীয় কাউন্সিলর জয়ন্ত সাহা জানিয়েছেন, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তখন পুলিশ পৌঁছে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘আমি যতটুকু জেনেছি, এলাকাবাসীরাই পুলিশকে দেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছিলেন। পুলিশের উপস্থিতিতে এলাকাবাসীদের চাপে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃতার পরিবারকে খবর দেয়। কিন্তু একটি বেসরকারি হাসপাতালের আবাসনে কেন সিসি ক্যামেরা বা রেজিস্ট্রার নেই, সে জবাব দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।’’ নার্সের রহস্যমৃত্যু নিয়ে ডিসিপি (পূর্ব) রাকেশ সিংহ বলেন , ‘‘একটা ইউডি কেস দায়ের করা হয়েছে। আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করছি। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy